৭ মার্চ বাঙালি জাতির চিরন্তন অনুপ্রেরণা
প্রকাশিত : ১৩:৫৭, ৭ মার্চ ২০২০
- ৭ মার্চের ভাষণ: আমাদের প্রেরণার চিরন্তন উৎস
- ৭ মার্চ নিয়ে গান ‘আমাদের স্কুল’
- ৭ মার্চের ভাষণ: পটভূমি ও তাৎপর্য
- ৭ মার্চ : মিলিয়ে নিন আপনার রাশিফল
- ৭ মার্চকে জাতীয় দিবসের দাবি যথার্থ: ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন
- ৭ মার্চের ভাষণ: মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্য
- ৭ মার্চ : ইতিহাসের আজকের এই দিনে
- ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ববাসীর জন্যও প্রেরণা: রাষ্ট্রপতি
- ৭ মার্চ যারা অস্বীকার করে তারা স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে : কাদের
- আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ
- আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা এই বাংলাদেশের মানুষের সকল আশা আকাংক্ষার মূলে ছিল একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে মাথা তুলে দাঁড়ানোর বাসনা। কন্ঠস্বরে প্রকাশ হওয়ার আগে এই আকাঙ্ক্ষা বুকে নিয়েই কাটিয়েছে প্রায় আড়াইশো বছর।
অবশেষে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এর তপ্ত দুপুরে আসে সেই পরম আরাধ্য স্বাধীনতার ঘোষণা। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পাকিস্তান সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আসে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক। দশ লাখেরও বেশি মানুষ জড়ো হয় তাদের প্রিয় নেতার ভাষণ শুনতে, পরিণত হয় একটি জনসমুদ্রে।
সময় তখন ৩.১৫ মিনিট, শ্বেতশুভ্র পাঞ্জাবি-পাজামা ও সাথে একটি কালো গলাবন্ধ কোট পরে নেতা উপস্থিত হলেন স্বাধীনতাকামী মানুষের সামনে। যখন তিনি মঞ্চে উঠলেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে সামনে উপস্থিত জনসমুদ্র তাকে বরণ করে নেয়।
২০ মিনিটের এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু অপরিসীম তেজের সাথে বাঙ্গালী জাতিতে সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতির আহবান জানান। কিন্তু এখানে তিনি সরাসরি স্বাধীনতার ডাক দেননি, কারন এর ফলে শাসক শ্রেণির রোষানল নেমে আসতে পারত অসহায় বাঙ্গালীদের ওপর যারা তখন সারাদেশে সতর্কাবস্থায় ছিল। সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, দেশের মানুষের আন্দোলনের লক্ষ্য হোক সার্বভৌমত্ব যার একটি দৃঢ় সাংবিধানিক ভিত্তি আছে। যদি তা যথেষ্ট না হয়, শুধুমাত্র তাহলেই সশস্ত্র সংগ্রামের রাস্তা বেছে নিতে আহবান জানিয়েছিলেন তিনি।
কোন প্রকার নোট ছাড়াই বঙ্গবন্ধু এই বিস্ময়কর ভাষণ প্রদান করেন। এটা ছিলো বঙ্গবন্ধুর জীবনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সময়। আর আমাদের জন্য ছিল আত্মোপলদ্ধির সময়। ভাষণের শুরুতেই বোঝা যায় কত পাহাড়সম দায়িত্ব বঙ্গবন্ধুর কাঁধে। তিনি বলেন, ‘আজ দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি।’
এই ভাষণের উৎস পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ-নিপীড়ন-অত্যাচার। অথচ পুরো ভাষণের কোথাও বিদ্বেষপূর্ণ শব্দচয়ন করেননি তিনি। শান্তিপুর্ণ সমাধানের পথই খুঁজেছিলেন তিনি। পহেলা মার্চের সংসদ অধিবেশনের হঠাৎ মুলতবি ঘোষণা ও ১০ মার্চ রাওয়ালপিন্ডিতে গোল টেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য ইয়াহিয়া খানের আহবানের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
‘ইয়াহিয়া খান বলেছেন, আমি নাকি ১০ মার্চ তারিখে গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করতে চেয়েছি, তাঁর সাথে টেলিফোন আমার আলাপ হয়েছে। আমি তাঁকে বলেছি আপনি দেশের প্রেসিডেণ্ট, ঢাকায় আসুন, দেখুন আমার গরীব জনসাধারণকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে। আমি আগেই বলে দিয়েছি কোন গোলটেবিল বৈঠক হবে না। কিসের গোলটেবিল বৈঠক? কার গোলটেবিল বৈঠক? যারা আমার মা বোনের কোল শূন্য করেছে তাদের সাথে বসবো আমি গোলটেবিল বৈঠকে ?’
এরপর তিনি জনতার উদ্দেশ্যে স্পষ্টভাবে বলেন, ‘সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে, হত্যার তদন্ত করতে হবে। তারপর বিবেচনা করে দেখবো পরিষদে বসবো কি বসবো না।’ মুক্তিকামী জনতার সামনে অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তৈরী করে দেন বঙ্গবন্ধু, ‘তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলো, ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং রাস্তা-ঘাট যা যা আছে, আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।’
উপস্থিত মানুষের সমুদ্র স্লোগানে স্লোগানে কাঁপিয়ে তোলে রেসকোর্স ময়দান। এরপরই আসে সেই বহু আরাধ্য ঘোষণা যা এই মাথা না-নোয়ানো জাতির ভবিষ্যতের চিত্রপটে তুলির প্রথম আঁচড়, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’
বঙ্গবন্ধুর সেদিনের সেই ভাষণ বাঙ্গালী জাতির বুকে আশার সঞ্চার করে, তাঁর কারণেই আমরা আমাদের নিজের পরিচয় খুঁজে পেয়েছি, আবার বাঙ্গালী হয়ে উঠেছি। তাঁর হাত ধরেই আমরা পেরিয়েছি এক একটি সিঁড়ি, ভারত মহাসাগর ছাড়িয়ে আমরা বিশ্বের দরবারে পৌছেছি, তিনিই আমাদের প্রতিনিয়ত পথ দেখিয়ে যাচ্ছেন। তার দেখানো পথেই আমরা গড়ে তুলবো ‘সোনার বাংলা’।
(বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত)
এমএস/
আরও পড়ুন