নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু
প্রকাশিত : ১২:১৯, ৮ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৬:৩১, ৯ মার্চ ২০২০
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
যুগ যুগ ধরে রাষ্ট্র, সমাজ এবং জনজীবনে নারীরা বৈষম্যের শিকার। কিন্তু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিলেন। নারীদের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নারী সংগঠন মহিলা সংস্থার ভিত্তি রচনা করেন। সংবিধানে নারীর ক্ষমতায়নের বিভিন্ন ক্ষেত্র সংযুক্ত করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করেন তিনি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমঅধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার হিসেবে রয়েছে নারী-পুরুষের সমঅধিকার। ২৭ অনুচ্ছেদে সব নাগরিককে আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকার দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ২৮(২) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে নারীর রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিকাশের জন্য সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে নারীর জন্য জাতীয় সংসদের আসন সংরক্ষিত রাখা হয়। সংরক্ষিত আসনে ১৫ জন নারী সদস্য নিয়ে প্রথম সংসদের যে যাত্রা শুরু, পরবর্তীকালে তা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ জনে উন্নীত হয়। এ ক্ষেত্রে ৬৫(২) অনুচ্ছেদের অধীনে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত ৩০০ আসনেও নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভায় দু'জন নারী মন্ত্রী ছিলেন।
১৯৭৪ সালে মুসলিম বিবাহ এবং বিবাহ রেজিস্ট্রিকরণ আইন প্রণীত হয়েছিল তাঁরই নির্দেশে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু নির্যাতিত নারীদের ‘বীরাঙ্গনা’ খেতাবে ভূষিত করেছিলেন। ‘বীরাঙ্গনা’ অর্থ ‘বীর নারী’। তিনি এভাবে নারীদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেন।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ‘নারী পূনর্বাসন বোর্ড’। নির্যাতিত নারীদের পূনর্বাসন এবং আবাসনের জন্য এ বোর্ড গঠিত হয়। যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতিতে এই কঠিন সমস্যা তিনি অনাবিল চিত্তে মোকাবেলা করেছিলেন।
বাংলার নারীদের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নারী সংগঠন মহিলা সংস্থার ভিত্তি রচনা করেন। শিশু ও কিশোরীদেরকে আত্মমর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও নৈতিকতার শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান গার্লস গাইড এসোসিয়েশনকে ঢেলে সাজান। স্বাধীন দেশে বাংলাদেশ গার্লস গাইড এসোসিয়েশনকে পুনর্গঠিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু বর্তমান সংসদ উপনেতা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে দায়িত্ব দেন।
প্রথম পঞ্চবার্ষিক (১৯৭৩-৭৮) পরিকল্পনায় স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহিত হয়। নারী উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি এই খাতে অর্থ বরাদ্দ দেন বঙ্গবন্ধু। শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষত: শহীদের স্ত্রী ও কন্যাদের জন্য চাকরি ও ভাতার ব্যবস্থা করেন।
এছাড়াও নারী পুনর্বাসন বোর্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতিত নারী ও শিশুর সঠিক তথ্য আহরণের জন্য জরিপ কাজ পরিচালনা করা, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, যুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা, বীরাঙ্গনা নারীসহ যেসব পরিবারের উপার্জনক্ষম পুরুষ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন সেসব পরিবারের নারীদের চাকরি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন বঙ্গবন্ধু।
নারী পুনর্বাসন বোর্ডের দায়িত্ব ও কার্যপরিধি ক্রমশ: বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৭৪ সালে বোর্ডকে পুনর্গঠিত করে সংসদে নারী পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশন-এ রূপান্তরের আইন পাস করেন বঙ্গবন্ধু। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথ প্রতিষ্ঠিত হয়।
এসময় নারী উন্নয়নের জন্য জেলা ও মহকুমায় ভৌত অবকাঠামো গড়ে তোলা, নারীর ব্যাপক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান, নারীকে উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করে প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা, উৎপাদন ও প্রশিক্ষণ খাতে নিয়োজিত নারীদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের চিকিৎসা এবং তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য বৃত্তিপ্রথা চালু করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর সেই ধারাকে অব্যাহত রেখে তাঁর সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণকে আরও সুগঠিত করেছেন।
এএইচ/
আরও পড়ুন