মুজিববর্ষে সরকার ৫১ লাখ নারীর ক্ষমতায়ন করবে
প্রকাশিত : ২৩:১৯, ১০ মার্চ ২০২০
মুজিববর্ষে ৫১ লাখ প্রান্তিক ও সুবিধা বঞ্চিত নারীকে তথ্য প্রযুক্তি, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, আয়বর্ধক ও সামাজিক সচেতনতামূলকসহ বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় ক্ষমতায়ন করবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, ‘মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগের অংশ হিসেবে আমরা ১০ লক্ষ নতুন মহিলা উদ্যোক্তা তৈরি করব এবং ৫০ লাখ প্রন্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মহিলাকে আইসিটি প্রশিক্ষণ দেব।’
তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য দেশজুড়ে নেয়া কর্মসূচিগুলোর ব্র্যান্ডিং ও বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নারী ও শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীর ক্ষমতায়নে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা ও বিভিন্ন ভাতা প্রদান করে আসছে।
ইন্দিরা বলেন, স্বাধীনতা লাভের পরপরই জাতির পিতা সংবিধানে নারীর অধিকার ও সমতা নিশ্চিত করেন। আওয়ামী লীগ সরকারই এদেশে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে কল্যাণকর বিভিন্ন আইন ও নীতি প্রনয়ণ করেছে।
গত ১০ বছরে সরকার জেন্ডার সমতাভিত্তিক সমাজ, নারী ও শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীর ক্ষমতায়নসহ উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত দশ বছরে নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে নারী উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে রয়েছে।
মন্ত্রনালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, গত দশ বছরে প্রায় ১ কোটি ৫৩ লাখ ৯৯ হাজার সুবিধাবঞ্চিত নারী আইসিটি, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ভিজিডি উপকারভোগী ৬৩ দশমিক ৫০ লক্ষ মহিলাকে পুষ্টি, স্বাস্থ্য, আয়বর্ধক ও সামাজিক সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগী ২২ লাখ মহিলাকে বছরে ১০দিন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
ল্যাকটেটিং ভাতা প্রাপ্ত ৭ দশমিক ২৯ লাখ মাকে দারিদ্র নিরসন, মা ও শিশুর মৃত্যুহার হ্রাস, মাতৃদুগ্ধ পানের হার বৃদ্ধি, গর্ভাবস্থায় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ, ইপিআই, প্রসব ও প্রসবোত্তর সেবার গুরুত্ব ও পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
নারী উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, উদ্যোক্তা তৈরি ও বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান, নারী উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও নির্যাতন প্রতিরোধে ৩৩ দশমিক ৪৩ লাখ মহিলাকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
দুঃস্থ ও প্রশিক্ষিত নারীদের আয়বর্ধক কর্মকান্ডে সহায়তার উদ্দেশ্যে ১৭ হাজার সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে।
নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন ও নারী ক্ষমতায়ন কার্যক্রমকে ব্র্যান্ডিংকরণে জয়িতা ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। জয়িতার ১৮০টি স্টলের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের ১৮ হাজার নারী উদ্যোক্তা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করেছে, ১৪ হাজার ৯৬০ জন নারী উদ্যোক্তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়েছে, ২৩ হাজার ৫০০ জন নারী উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং ১৪ হাজার নারী উদ্যোক্তাদেরকে তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণে সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
দেশে-বিদেশে ৭৯৯ জন নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩১ হাজার ২৫০ জন তৃণমূল নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। নারীর ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় ১৫৪ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মহিলাদের তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা সম্পর্কে সচেতনকরণে ১৩টি তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের ২৫ লাখ মহিলাকে তথ্য প্রযুক্তি সেবা প্রদান করা হয়েছে। এপ্রিল ২০১৭ থেকে মার্চ ২০২২ মেয়াদে দেশের ৮টি বিভাগের ৬৪টি জেলার ৪৯০টি উপজেলায় ২য় পর্যায় প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।
তথ্য আপা প্রকল্পের ১৩টি উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে আয়োজিত উঠান বৈঠকগুলোতে নারী নির্যাতনের শিকার মহিলাদের বিভিন্ন আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য তথ্য সেবা দেয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া, তথ্য কেন্দ্রে এসে মহিলারা তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য তথ্য সেবা পেয়ে থাকেন। ১ কোটি মহিলাকে তথ্য সেবা প্রদানে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৫ লাখ নারীকে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সহায়তা দান করা হয়েছে।
কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন: সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রান্তিক ও অসহায় কিশোর-কিশোরীদের জেন্ডার ভিত্তিক সন্ত্রাস প্রতিরোধ করার জন্য ৬৪টি জেলার ৪৮৯টি উপজেলায় ৮ হাজার টি ক্লাবের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
উপজেলা পর্যায়ের মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক কার্যক্রমের আওতায় প্রশিক্ষণ : ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা এবং ৪২৬টি উপজেলায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৪৪০ জন সুবিধাবঞ্চিত দুঃস্থ মহিলাকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ২৫০ কোটি ৫৬ লক্ষ ২২ হাজার প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
‘শেখ হাসিনার বারতা, নারী-পুরুষ সমতা’ শ্লোগানটি ব্র্যান্ডিংকরণে মন্ত্রণালয়ের চিঠি, খাম, প্যাড ও ফোল্ডার ব্যবহার করে প্রচার করা হচ্ছে।
গত ১০ বছরে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন/বিধি, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, যেগুলো হচ্ছে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১, নারী উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০৩০, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা, ২০১৮ -২০৩০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০; জাতীয় শিশু নীতি ২০১১, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা, ২০১৩; ডিএনএ আইন, ২০১৪; ডিএনএ বিধীমালা, ২০১৮, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭; বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধীমালা, ২০১৮, যৌতুক নিরোধ আইন ২০১, শিশু একাডেমি আইন, ২০১৮। বাসস
এসি
আরও পড়ুন