ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

করোনা নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে ৮ দেশের নেতারা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:০৩, ১৫ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ২১:৪০, ১৫ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এর মোকাবেলায় কর্মপন্থা ঠিক করতে সার্কভুক্ত আটটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা ভিডিও কনফারেন্সে মিলিত হয়েছেন।

রোববার বিকেল ৫টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আহ্বানে এই ভিডিও কনফারেন্স শুরু হয়।  

ভিডিও কনফারেন্সে মোদীর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গোটাবে রাজাপাকসে, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জাফর মির্জা।

নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার সকালে এক টুইট বার্তায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের প্রতি এক সঙ্গে করোনা মোকাবেলার আহ্বান জানান।

তিনি বলেছিলেন, ‘করোনা মোকাবেলা এবং আমাদের নাগরিকদের কীভাবে সুস্থ রাখা যায়, সে বিষয়ে আমরা ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা করতে পারি। একসঙ্গে আমরা বিশ্বের সামনে একটি উদাহরণ তৈরি করতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর গ্রহ গড়ে তুলতে অবদান রাখতে পারি।’

এরপর বাংলাদেশসহ অন্য সাত সার্ক সদস্য দেশ তার সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার কথা জানায়।

এসময়, চীনের উহান থেকে বাংলাদেশের ২৩ শিক্ষার্থী ভারত হয়ে ফিরেছেন উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে নিজের বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে পাঁচজন করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে যত করোনা ভাইরাসের রোগী রয়েছেন তাদের সবাই দেশের বাইরে থেকে এসেছেন। তবে অন্য অনেক দেশের মতো স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকিয়া রাখতে পেরেছে সরকার। স্থানীয়ভাবে কোনও সংক্রণের ঘটনা পাওয়া যায়নি। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মোকাবেলায় কৌশলগত বিষয় নিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিবরাও এ ধরনের সম্মেলনে আলোচনা করতে পারেন। তিনি বলেন, আমি আশা করছি, এই সম্মেলন করোনা মোকাবেলায় আমাদের সবাইকে নতুন পথের দিশা দেবে।

তিনি বলেন, সব দেশের সক্ষমতা ব্যবহারে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ ও প্রয়োজনীয় রসদ দিয়ে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। এমনকি, পরবর্তীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সার্কের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নিয়েও নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্স আয়োজন করা যেতে পারে বলে প্রস্তাব দেন শেখ হাসিনা।

এছাড়া, এই ধরনের সংকট মোকাবিলায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি সার্ক ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এরপর আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বলেন, ভারত সাংহাই কো-অপারেশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, চীনও এর সদস্য। আমি চীনের অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য তাদের সঙ্গে আমাদের সমন্বয় বাড়ানোর প্রস্তাব করছি। এসময় করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মাঝে একটি সাধারণ টেলি-মেডিসিন কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করেন এই নেতা।

শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গুতাবায়ে রাজাপাকসে বলেন, করোনার কারণে আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যা গুরুতর হয়েছে। গত বছর সন্ত্রাসী হামলার পর বিশেষ করে পর্যটন খাতে আমাদের ধস নামে। আমরা সেটা থেকে উত্তোরণের পথে যাচ্ছিলাম। আমি সার্ক নেতাদের অনুরোধ করব যে, আমাদের পারস্পারিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য একটা তত্ত্ব দাঁড় করানো হোক।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জাফর মির্জাও সমন্বিত কাজের উপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা ভালোটা আশা করলেও সবচেয়ে খারাপ অবস্থার জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে।’

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং বলেন, সবসময়ের জন্যই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। গোটা বিশ্বই এখন মহামারি এই রোগ নিয়ে লড়াই করছে। এখন স্ব স্ব অবস্থান থেকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে এ সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে।

এসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির এ উদ্যোগ খুবই সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি।

এর আগে, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সার্কের সদস্য দেশগুলোর জন্য কোভিড-১৯ জরুরি তহবিল গঠনের প্রস্তাব করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, আমাদের সবার স্বেচ্ছা-সহায়তার ভিত্তিতে এই তহবিল গঠন করা যেতে পারে। জরুরি এই তহবিলে প্রাথমিকভাবে ভারত এক কোটি ডলার দিয়ে শুরু করতে পারে।

তিনি বলেন, এই তহবিলের ব্যবহারের জন্য আমাদের দূতাবাসগুলো সমন্বয় করে কাজ করতে পারে। ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি র‌্যাপিড রেসপন্স টিম গঠন, পরীক্ষা সামগ্রী এবং অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করছি। তারা সব সময় প্রস্তুত থাকবেন; আপনাদের প্রয়োজন হলে ভারত থেকে তাদের পাঠানো হবে।

মোদি বলেন, আমাদের একটি সাধারণ গবেষণা প্ল্যাটফর্মও গঠন করার বিষয়ে ভাবা উচিত। এ ধরনের কাজের সমন্বয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চ সহায়তা করতে পারে। এছাড়া অর্থনীতির ওপর কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবের বিষয়েও বিশেষজ্ঞরা আমাদের সহায়তা করতে পারেন। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সদস্য দেশগুলোকে সমন্বয় করে কাজের তাগিদ দিয়ে মোদি বলেন, এই মহামারি প্রথম নয়; এমনকি শেষও নয়।

এর আগে, গত ১৩ মার্চ (শুক্রবার) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দৃঢ় কৌশল অবলম্বনের জন্য সার্ক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। 

এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি