অনলাইন ক্লাসে পিছিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত : ১৫:০৪, ৬ এপ্রিল ২০২০
মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত বিশ্ব। সব কিছু বন্ধ। করোনার আঘাতে নাজেহাল বিশ্বের উন্নত দেশ থেকে শুরু করে অনুন্নত দেশ। সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশ। সারা বাংলাদেশ লকডাউন করা হয়েছে। আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সবকিছু বন্ধ করা হয়েছে। বন্ধ থাকবে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে সেশন জটের কবলে দেশের শিক্ষার্থীরা। হুমকির মুখে আগামী দিনের ভবিষ্যত।
ধারণা করা হচ্ছে, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বন্ধ দীর্ঘ হবে। দীর্ঘ বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সে লক্ষ্যে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং পিছিয়ে রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
ইতিমধ্যে পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর জন্য সংসদ টেলিভিশনে শুরু হয়েছে ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম। তবে দেশের উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী অনেকটাই হাত গুটিয়ে বাড়িতে বসে আছেন।
এ অবস্থার উত্তরণে বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এগিয়ে এসেছেন। তাদের শিক্ষার্থীদের চলতি সেমিস্টারের সিলেবাস শেষ করতে সংশ্নিষ্ট শিক্ষকদের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উৎসাহিত করছে।
আগামী মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ভিত্তিক পাঠদান কর্মসূচি ‘ঘরে বসে শিখি’র উদ্যোগে ক্লাস।
গতকাল রোববার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ক্লাসের রুটিন প্রকাশ করেছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী আগামী ৭ এপ্রিল থেকে এ কার্যক্রমের সম্প্রচার শুরু হবে। পাঠদান কার্যক্রম দুপুর ২টায় শুরু হয়ে শেষ হবে বিকেল ৪টায়। প্রতিটি বিষয়ে পাঠদান ২০ মিনিট পর্যন্ত চলবে।
টেলিভিশনে পাঠদানকারী শিক্ষক শ্রেণি পাঠ শেষে পাঠদান করা বিষয়ের ওপর বাড়ির কাজ দেবেন। শিক্ষার্থীরা প্রত্যেক বিষয়ের জন্য আলাদা খাতায় তারিখ অনুযায়ী বাড়ির কাজ সম্পন্ন করবে এবং বিদ্যালয় খোলার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে জমা দেবে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফসিউল্লাহ বলেন, আগামী মঙ্গলবার আমরা ক্লাস শুরু করতে পারবো। আমাদের প্রস্তুতি শুধু এ সময়ের জন্য নয়। ভবিষ্যতেও আমাদের কার্যক্রম চলবে। সে হিসেবে আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। টেলিভিশনে পাশাপাশি এসব ক্লাস ইউটিউবেও আপলোড করা হবে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় ক্লাস লেকচারগুলো পুনরায় দেখার সুযোগ পাবে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাশাপাশি অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ইউজিসির তথ্য অনুসারে, দেশে মোট ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে।
জানা গেছে, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে অনলাইনে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে, তার মধ্যে রয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দান ইউনিভার্সিটি, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি, ইস্ট-ডেল্টা ইউনিভার্সিটি এবং প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিডিরেন) ডাটা সেন্টারে স্থাপিত জুম অ্যাপিল্গকেশনের মাধ্যমে অনলাইনে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হবে। আগ্রহী শিক্ষকরা সংশ্নিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মাধ্যমে যোগাযোগ করে এটি ব্যবহার করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। তা মোকাবিলার লক্ষ্যে শিক্ষকদের অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা উৎসাহিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি জানিয়েছে, করোনার বন্ধে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট কিছু কোর্সের জন্য অনলাইন ক্লাসও নিচ্ছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাহমিকা শাহরীন অনামিকা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের তাদের বাড়ি থেকে অনলাইনে রুটিন অনুসারে প্রতিটি ক্লাসে অংশ নিতে বলা হয়েছে।’
ইস্ট-ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সেকান্দার খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে অনলাইন ক্লাস চালু করেছি আমরা।’
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা ১৮ মার্চ থেকেই অনলাইন ক্লাস শুরু করে দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাড়াও ভালো।’
আইইউবিএটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুর রব বলেন, ‘আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত হাজার শিক্ষার্থীকে অনলাইনে পাঠদান করা হচ্ছে।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ‘বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই তাদের বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় করে পড়াশোনা করতে হয়। এ কারণে তারা চান না কোনো সেমিস্টার তাদের মিস হয়ে যাক। এতে তারা আর্থিক ও সময়ের ক্ষতির শিকার হবেন।’
অন্যদিকে, সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেশের ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের। এগুলোর মধ্যে ৪৬টিতে একাডেমিক কার্যক্রম চালু ছিল। বাকিগুলো নতুন। এই ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ই এখন পুরোপুরি বন্ধ। ক্লাস ও পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ায় সেশনজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোমেনুর রসুল বলেন, ‘গত ১০ বছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সেশনজট ছিল না। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন সুগম ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন নতুন করে সেশনজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
তবে অনাকাঙ্ক্ষিত এ বন্ধের ক্ষতিপূরণ এবং সেশন জট ঠেকাতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এরই ধারাবাহিকতায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু ডিপার্টমেন্ট অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছে।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)।
এছাড়াও অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বিভাগ। গত ২৪ মার্চ অনলাইনে ক্লাস শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগ। পাশাপাশি অনলাইনেই মিডটার্ম পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভাগটি।
এদিকে ৪ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করেন প্রভাষক মাসুদুর রহমান।
এমবি//
আরও পড়ুন