ঢাকা, সোমবার   ১০ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

রোজার আগেই চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১৪, ১৯ এপ্রিল ২০২০

Ekushey Television Ltd.

একদিকে করোনার প্রাদুর্ভাব অন্যদিকে আসন্ন রমজান। এই দুইকে পুঁজি করেই পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও হু হু করে বেড়েই চলেছে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। 

বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিনই বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন সংস্থার একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে। জরিমানাও করা হচ্ছে। তারপরও অস্থিরতা থামছে না রাজধানীর বাজারগুলোতে। বিশেষ করে চাল, ডাল, তেল, আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম।  

সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে দাম নিয়ন্ত্রণে এবার আগেই কিছুটা প্রস্তুতি গ্রহণ করে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। অন্যান্য বছরের তুলনায় যার পরিমাণ ছিল কয়েকগুণ। কিন্তু সরবরাহ কম হওয়ায় তাতে তেমন সুফল আসছে না। এতে করে বাজারেই ভরসা করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। 

বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের দাবি- অন্যান্য বছরের তুলনায় সরকারি-বেসরকারি গোডাউনগুলোতে এবার ৩০ শতাংশের বেশি খাদ্যপণ্য মজুদ রয়েছে। তারপরও রোজা শুরুর আগেই লাগাম ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজার। এর মূলে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। 

মন্ত্রণালয় জানায়, এখন পর্যন্ত কয়েকটা পণ্য ছাড়া অধিকাংশ পণ্যের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। তাছাড়া সব ধরনের পণ্যের মজুত প্রয়োজনের তুলনা বেশি, তাই আগামীতে আর কোনো পণ্যের দাম বড়বে না। কিন্তু, বাজারের চিত্র বলছে উল্টো কথা। 

দেশের চালের রাজ্য বলে পরিচিত কুষ্টিয়া, শেরপুর, নওগাঁ ও দিনাজপুর। করোনায় দেশব্যাপী প্রভাব পড়লেও এখন পর্যন্ত এসব স্থানে চালের বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। গত সপ্তাহে যা দাম ছিল তা এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। 

অথচ, আড়তদাররা বলে আসছেন, মিলে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই চালের বাজার কিছুটা উচ্চমুখী। যার প্রভাব পড়েছে রাজধানীর অধিকাংশ বাজারেই। আর এতে করে কপালে হাত উঠেছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণিসহ নিম্ন আয়ের মানুষের। 

করোনার প্রভাবে গাড়ি-ঘোড়া চলতে মানা, কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে দিন কাটছে অসংখ্য মানুষের। এমন অবস্থায় বাজারের অস্থিরতায় পরিবারকে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন নিয়ে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে এসব মানুষদের। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাল রপ্তানি জেলাগুলো থেকে রাজধানীতে চালের দামের পার্থক্য প্রকারভেদে ১০ থেকে ১৮ টাকা পর্যন্ত। অথচ মিল মালিকরা বলছেন, মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে। এখনো সবকিছু স্বাভাবিক আছে। এমন অবস্থায় ঢাকায় চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছেন। আর ব্যবসায়ীদের দাবি গাড়ি ভাড়া বেশি বলে চালের দামও বেড়েছে। 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে  মিনিকেট ও নাজিরশাল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৮ টাকা। মাঝারি মানের পইজাম ও কাজল লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৬০ টাকা। আর মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৫০ টাকা।

টিসিবির (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) তথ্য অনুযায়ী, ১৫ এপ্রিল রাজধানীর খুচরা বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাল চালের কেজি বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৬৮ টাকা। মাঝারি মানের চালের কেজি বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৮ টাকা। আর মোটা চাল বিক্রি হয় ৪২ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।

অথচ, কয়েকটি জেলার চালকল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবচেয়ে ভাল মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫১ থেকে ৫২ টাকা। মাঝারি মানের চাল কাজল লতা, পাইজাম ও আটাশ ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা। আর মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা দরে। এ থেকে পার্থক্যটা স্পষ্ট। 

অন্যদিকে, অনেকটা লকডাউনের মধ্যে থাকা রাজধানীতে গত এক সপ্তাহে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। এসবের মধ্যে উত্তাপ ছড়িয়েছে বিশেষ করে কয়েকটি পণ্য। এসবের মধ্যে রয়েছে, ডাল, তেল, আদা, রসুন, পেঁয়াজ ও শুকনো মরিচ। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝাঁজ বেড়েছে আদার। 

এক সপ্তাহের মধ্যে দেড়শ টাকার আদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকার বেশি দরে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বংলাদেশের (টিসিবি)প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এসব পণ্যের দাম বাড়ার প্রতিবেদন তৈরি করেছে টিসিবি।

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে আদার। এ পণ্যটির দাম এক সপ্তাহে ১০৪ শতাংশ বেড়েছে। আর শতকরা হিসেবে সবচেয়ে কম দাম বেড়েছে সয়াবিন তেলের। এ পণ্যটির দাম বেড়েছে এক শতাংশ।

পেঁয়াজ-রসুনের দামও বেড়েছে। টিসিবির তথ্য, গত এক সপ্তাহে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। এক সপ্তাহ আগে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি রসুনের দাম বেড়ে হয়েছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।

গত এক সপ্তাহে দেশি ও আমদানি উভয় ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তবে দেশি পেঁয়াজের তুলনায় আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির হার বেশি। ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৫ থেকে ৭০ টাকা। আর আমদানি পেঁয়াজের দাম ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে ৩৫-৪৫ থেকে হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা।

গত এক সপ্তাহে ছোট দানার মসুর ডালের দাম ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে টিসিবি। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহ আগে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ছোট দানার মসুর ডালের দাম বেড়ে হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।

টিসিবি বলছে, দেশি শুকনো মরিচের দাম এক সপ্তাহে বেড়েছে ১৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শুকনো মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

আর পাঁচ লিটার বোতলের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৪৯০ থেকে ৫৫০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৮০ থেকে ৫২০ টাকা।

এআই/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি