করোনার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষার দাবি

কোভিড-১৯ একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরী পরিস্থিতি হলেও এর আর্থ-সামাজিক নেতিবাচক প্রভাবটাও স্পষ্ট। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৫ ভাগ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। কোভিড-১৯ দূর্যোগে সবচেয়ে ঝুকিতে আছে এই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগিতা বিবেচনা না করায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কোভিড-১‌৯ থেকে সুরক্ষা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য যথাসময়ে পাচ্ছেন না। অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি দৈনন্দিন জীবন যাপনে অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকেন। কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সামাজিক দূরত্ব রক্ষা এ সকল ব্যক্তির ক্ষেত্রে খুবই কঠিন। আবার প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত কারনে অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির আগে থেকেই স্বাস্থ্যগত দূর্বলতা থাকায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে তারা জটিল স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন। বর্তমান পরিস্থিতি প্রতিবন্ধী নারী, প্রতিবন্ধী শিশু এবং স্নায়ুবিক ও বহুমুখী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনকে নানাভাবেই অনিশ্চিত করে তুলেছে।
 
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে একটি বড় অংশই দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে দেশের অনেক নাগরিকের মতো আয়মূলক কর্মে নিযুক্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কতদিনে ও কিভাবে এসকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কর্মে ফিরতে পারবেন, সেটাও অনিশ্চিত।

সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কর্মরত একুশটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষায় জরুরী ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহনের আহবান জানানো হয়েছে। 

এ বিষয়ে একটি যৌথ প্রস্তাবনা প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়, এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদফতর, জাতীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদ, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, তথ্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে ইমেইলে প্রেরন করা হয়েছে।

প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সকল পর্যায়ের কমিটি ও কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, সকল প্রচারণা কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগিতার বিষয়টি বিবেচনা করা, স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য পেশাজীবিদের প্রশিক্ষণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুনির্দিষ্ট চাহিদার বিষয়সমূহ অন্তর্ভূক্ত করা, বিশেষ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবাসমূহ চালু রাখা, গুরুতর প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তাদের পরিচর্যাকারী, প্রতিবন্ধী নারী এবং বিদ্যালয় থেকে প্রতিবন্ধী শিশুদের সম্ভব্য ঝরে পড়া রোধে তাদের পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার বাইরে বিশেষ সুরক্ষা ভাতার ব্যবস্থা করা।

এছাড়া সরকারী বেসরকারী ত্রান ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার প্রদান করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুনির্দিষ্ট ও ন্যায্য অর্থ বরাদ্দ করা, কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে লিঙ্গ, বয়স এবং প্রতিবন্ধিতা বিভাজিত উপাত্ত সংগ্রহ ও তা প্রকাশ করা। 

আরকে//