অন্যান্য দেশও রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াবে: আশা ইউরোপীয় ইউনিয়নের
প্রকাশিত : ১৮:২১, ২ মে ২০২০
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রত্যাশা করে যে, গত দু’সপ্তাহ আগে ৪০০ রোহিঙ্গাকে নিরাপদে অবতরণ করতে দিয়ে
বাংলাদেশ উদারতার যে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে, সমুদ্রে আটকে পড়া কয়েক শ’ রোহিঙ্গাকে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ
অবতরণ করার অনুমতি দিয়ে বাংলাদেশের উদাহরণকে অনুসরণ করবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেল ও কমিশনার জেনেজ লেনারসিক
এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা আশা করি, এ অঞ্চলের (দক্ষিণ-পূর্ব এশীয়) দেশগুলো ওই (বাংলাদেশের)
উদাহরণ অনুসরণ করবে।’
শুক্রবার বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের ভাসমান রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে দেয়া যৌথ বিবৃতিটি বাংলাদেশের
ইইউ-এর প্রতিনিধিদলের কাছ থেকে প্রাপ্ত বার্তায় আজ একথা জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় অবতরণ করার ব্যর্থ চেষ্টার পরে আনুমানিক ৫০০ রোহিঙ্গা
মহিলা, পুরুষ ও শিশু-সহ দু’টি নৌকা সমুদ্রে ভাসছে, মালয়েশিয়া তাদের প্রবেশ করতে দেয়নি।
বিবৃতিতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ পদস্থরা এই অঞ্চলের সরকারগুলোকে অনুসন্ধান এবং উদ্ধার অভিযান পরিচালনা
করতে এবং তাদের নিরাপদে অবতরণের সুযোগ করে দিয়ে সমস্যার সমাধান করার অনুরোধ করেছেন।
বাংলাদেশ ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল একটি নৌকায় থাকা প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গাকে নিরাপদ অবতরণ করতে দিয়ে এবং
তাদের সহায়তা দেয়ার কারণে তারা বাংলাদেশের প্রশংসা করেছিল। মিয়ানমার জাতিগত সংখ্যালঘুদের জোর করে
বাস্তুচ্যুত করা অব্যাহত রেখেছে এবং বাংলাদেশ উদারতা এবং মানবতা প্রদর্শন করেছে।
ইইউ মিয়ানমারের সব সশস্ত্র বাহিনীকে জরুরি ভিত্তিতে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের জন্য এবং সর্বব্যাপী শান্তি
প্রক্রিয়া পুনরায় ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। যা রোহিঙ্গাদের দুর্দশার মূল কারণগুলো মোকাবেলায় সহায়তা করবে।
তারা বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের জন্মস্থানে নিরাপদ, টেকসই, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের
পক্ষে এবং তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য পূর্ণ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রেখেছি।’
বাংলাদেশ প্রায় ১১ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় দিয়েছে এবং এদের বেশিরভাগই
২০১৭ সালে ২৫ আগস্টের পরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ক্র্যাকডাউনের কারণে সেখানে এসেছে। জাতিসংঘ একে
জাতিগত নিধন এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা একে ‘গণহত্যা’ বলে অখ্যায়িত করেছে।
ইইউ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং কমিশন বলেছে, ইইউ বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য একটি মৌলিক মানবিক
ও উন্নয়ন দাতা হিসেবে এই অঞ্চলে আরও সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
গত ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ এবং
উন্নত দেশগুলোকে অংশীদারিত্বেও ভিত্তিতে দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ
দফতরের প্রতিমন্ত্রী তাকে সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার অনুরোধের প্রেক্ষিতে তিনি এই আহ্বান
জানিয়েছিলেন।
ব্রিটিশ জুনিয়র মন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপকালে মোমেন তাকে বলেছিলেন, নৌকাগুলো বাংলাদেশের উপকূলরেখায় নেই এবং
তারা কেন এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশকে বাদ দিয়ে একা শুধু বাংলাদেশকে তাদের (রোহিঙ্গাদের) আশ্রয় দেয়ার জন্য
বলা হচ্ছে, তা ভেবে তিনি অবাক হয়েছেন।
তিনি বলেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশ এবং উন্নত দেশগুলোও একইসঙ্গে বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয়
দেয়ার দায়িত্ব পালন করা উচিত। মোমেন আফসোস করেছেন, ইইউসহ বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারে বিনিয়োগ চালিয়ে
যাচ্ছে এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই বিষয়গুলোতে সোচ্চার নয়।
এদিকে বুধবার ডেনমার্কের বিদেশ বিষয়ক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা মন্ত্রী সিগ্রিড কাগের সঙ্গে টেলিফোনে
কথোপকথনের সময় মোমেন ব্যাখ্যা করেছেন, সমুদ্রে ভাসমান দু’টি নৌকায় থাকা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের সমুদ্র সীমান্তে
বা তার কাছাকাছিও নেই।
তিনি বলেন, সমুদ্র আইন অনুসারে, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশেরও রোহিঙ্গাদের বাঁচানোর দায়িত্ব রয়েছে।
কাগ একমত হয়েছেন যে, বাংলাদেশ যদি বার বার রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা উদ্ধার করা অব্যাহত রাখে, তাহলে
মিয়ানমারের একে একটি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে মনে করে আরও রোহিঙ্গাকে গভীর সমুদ্রের দিকে ঠেলে দিতে উৎসাহিত
হতে পারে।
এর আগে ইউএনএইচসিআরসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক অধিকার দল এবং সহায়তা সংস্থা, পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি
ছাড়াই কয়েক সপ্তাহ সমুদ্রে ভাসমান মানুষকে উদ্ধার না করায় এই অঞ্চলের দেশগুলোর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা
করেছিল।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সরকারগুলেকে সমুদ্রে ভাসমান রোহিঙ্গাদের তাৎক্ষণিক
অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু করার আহ্বান জানিয়ে আরও বলেছে, শরণার্থীদের প্রতি তাদের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার
জন্য কোভিড-১৯ মহামারী একটি অজুহাত মাত্র।
গ্লোবাল রাইট ওয়াচডগের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক বিরাজ পট্টনায়েক এক বিবৃতিতে বলেছেন- এই পরিস্থিতি
মোকাবেলার দায়িত্ব শুধুমাত্র একা বাংলাদেশের ওপর ছেড়ে দেয়া যাবে না।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিও) আরও বলেছে, ‘এতে মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডসহ সব
দেশেরই দায়িত্ব রয়েছে’।
এসি
আরও পড়ুন