জীবন-জীবিকা অব্যাহত রাখতেই বন্ধ পরিস্থিতি শিথিল করা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত : ০০:৩৭, ১১ মে ২০২০ | আপডেট: ০০:৫৩, ১১ মে ২০২০
ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষ যেন তাঁর জীবন-জীবিকা চালাতে পারে সেজন্যই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের দেশব্যাপী ঘোষিত বন্ধ পরিস্থিতি ক্রমশ শিথিল করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিছু কিছু আস্তে আস্তে উন্মুক্ত করার চেষ্টা করছি। কিছু জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা যাতে মানুষ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করছি। কারণ, এটা রোজার মাস।’
রোববার (১০ মে) শেখ হাসিনা তাঁর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় দেশের ৫৭টি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং ব্যক্তি বিশেষের পক্ষ থেকে প্রদান করা অনুদানের অর্থ গ্রহণকালে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সঙ্গে সংযুক্ত হন। পিএমওতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস তাঁর পক্ষে অনুদানের চেক গ্রহণ করেন।
এ সময় তিনি আত্মবিশ্বাস এবং সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘অসুখ-বিসুখ হলে মনে সাহস রাখতে হবে। কেবল ডাক্তার এবং ওষুধেই রোগ ভাল হবে না। মনের জোর থেকে, আত্মবিশ্বাস থেকেও কিন্তু অনেকটা সুস্থ হওয়া যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে সব নির্দেশনা দিয়েছে- পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা,এক জায়গায় জটলা না করা- যাতে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে, সকলকেই সেটা মেনে চলতে হবে।’
সকলকে মাহে রমজানের মোবারকবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের কষ্টের বিষয়টি উপলদ্ধি করেই সরকার ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর যেহেতু বোরো ধান উঠেছে তাই খাবারের সেই কষ্টটা মানুষের হওয়ার কথা নয়।
তিনি এ সময় পারস্পরিক সহমর্মিতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে যারা বেশি ধান পেয়েছেন তাঁরা কম ধান পাওয়া লোকজনকে যেন সাহায্য করেন, সেই তাগিদ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য। এই কথাটা চিন্তা করেই সবাইকে কাজ করতে হবে।’
মানুষ মাঝে মাঝে এমন ভীত হয়ে যায় যে, অনেক অমানবিক আচরণও করে ফেলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন পরিবারের সদস্য যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন তাঁর কি অসুখ হলো না জেনেই তাকে দূরে ঠেলে দেওয়াটা ঠিক নয়।’
তিনি বলেন, ‘নিজেকে সুরক্ষিত রেখে হাতে হ্যান্ড গ্লাভস এবং মুখে মাস্ক ব্যবহার করে পরিবারকে সহযোগিতা করলে, এতে খুব একটা ক্ষতির কারণ হবে বলে আমি মনে করিনা।’
‘কিন্তু সন্তান হয়ে পিতাকে দূর করে দেওয়া বা স্ত্রী হয়ে স্বামীকে দূর করে দেওয়া, বা মাকে দূর করে দেওয়া-এটা কখনোই কল্যাণকর নয়,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আইনশৃংখলা রক্ষাকারি সংস্থা তথা পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,‘তাঁরা লাশ, দাফন, রোগী টানা থেকে শুরু করে সবধরনের কাজই করে যাচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে আমরা ছাত্রলীগের কর্মীদেরও দেখেছি। অনেক ক্ষেত্রেই যেখানে লাশ দাফন করার কেউ নেই, তাঁরা নিজেরা গিয়ে সেখানে লাশ দাফন করে দিচ্ছে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই যে মানবিক গুণগুলো, এটাই হচ্ছে মানুষত্ব। আর এটাই আমাদের বাঙালির সবথেকে বড় পরিচয়। এই চরিত্রটাই সকলের থাকা দরকার বলে আমি মনে করি।’
এ সময় তিনি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের রুহের মাগফিরাতও কামনা করেন।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দেশে যেন কোন খাদ্য সংকট না হয়, সেজন্য তাঁর সরকার বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘ব্যাপক ধান উৎপাদন হয়েছে, খাদ্যের কোন অভাব নেই এবং সরকার ব্যাপকভাবে ত্রাণ বিতরণ ও করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, সরকারীভাবে যেমন ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে তেমনি দলীয় এবং ব্যক্তিগত পর্যায়েও করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ যে যেমনভাবে পারছে অপরকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের বিরাট একটা আন্তরিকতা, সকলেই সকলের তরে সকলকে সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
তিনি পুনরায় ফসল উৎপাদন বাড়ানোর উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন, কারো এতটুকু জমিও যেন খালি পড়ে না থাকে, যে যা পারেন তাই উৎপাদন করবেন। যাতে আগামীতে কখনও খাবারের কোন অভাব না হয়। কোন ধরনের দুর্ভিক্ষ যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারে বরং প্রয়োজনে যেন আমরা অন্যকে সহযোগিতা করতে পারি।
এক জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সময়ের বোরো ধান ঘরে তোলার পর সেই জমিতে আর কি কি ফসল উৎপাদন করা যায় তা খতিয়ে দেখার জন্য তিনি কৃষিমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি এ সময় টেলভিশনের মাধ্যমে পাঠ্যক্রম পরিচালনা করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের সংসদ টিভির মাধ্যমে শিক্ষার যে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ক্লাসগুলো যে প্রচার করা হচ্ছে তাতে কিছুটা হলেও ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ার দিকে মনযোগী থাকতে পারছে।
কারণ, ঘরে বসে থেকে থেকে এই ছোট্ট শিশুরা কি করবে, তাঁদের কষ্টটাই সবথেকে বেশি। কারণ, শহরে যারা বাস করে তাঁদের জন্য এই অবস্থাটা সত্যিই বেশ কষ্টকর, বলেন তিনি।
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি ছাত্র-ছাত্রীদের বলবো যে, এই ক্লাসগুলো মনযোগ দিয়ে শোনা দরকার। যারা মনযোগ দিয়ে শুনবে তাঁরা তাঁদের সিলেবাস সম্পর্কে জানতে পারবে, শিখতে পারবে।
দেশকে তাঁর সরকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, যে যাত্রাকে করোনা ভাইরাস অনেকাংশে ব্যাহত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই, আমাদের থেমে থাকলে চলবে না, এগিয়ে যেতে হবে। কারণ, তিনি চেয়েছিলেন এই দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত করে গড় তুলবেন। আমরা দারিদ্র মুক্তির অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। সফলতাও এনেছিলাম এবং আশা ছিল খুব শিগরিই বাংলাদেশ দারিদ্রমুক্ত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল মুজিব বর্ষ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ২০২০ থেকে ২০২১ এর মধ্যেই বাংলাদেশ দারিদ্র মুক্ত হবে। তবে, করোনা ভাইরাসের কারণে সেখানে একটা বিরাট ধাক্কা লেগেছে। অবশ্য আমি আশা করি এই বাধা দূর করেই আগামীতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আর বিশ্বব্যাপী যে সমস্যা সেটিও দূর হবে।
প্রধানমন্ত্রী নিজেকে সুরক্ষিত রেখেই আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আন্তরিকতার সঙ্গে এখানে কাজ করতে হবে এবং সকলকে সহযোগিতা করতে হবে । আবার নিজেকেও সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক চলতে হবে। তাহলেই এই রোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন।
তিনি তাঁর ত্রাণ তহবিলে সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন এবং বক্তি বিশেষের প্রতি কৃতজ্ঞতাপ্রকাশ করে বলেন, আপনারা যে সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন । তাঁকে আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দেব।
প্রধানমন্ত্রী এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সকলকে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে করুণা ভিক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেহেতু, রমজান মাস, তাই, সবাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কোছে বেশি করে দোয়া করেন। যাতে এই পরিস্থিতির থেকে পরত্রান পাই, এই কোভিড-১৯ ভাইরাস থেকে মানব জাতি মুক্তি পেতে পারে। তিনি সকল ধর্মাবলম্বীদের নিজ নিজ নিয়মে সৃষ্টি কর্তার নিকট প্রার্থনা করার ও অনুরোধ জানান।
অনুদান প্রদানকারীরা হচ্ছে- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল ও কলেজ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ কারিগরি ও মাদ্রসা শিক্ষা বিভাগ, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কেএইউ), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা মেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (ডুয়েট), গাজীপুর, নর্থ সাউথ ইউনিভার্র্সিটি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরেনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগাগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, নগদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কেম্পানী লিমিটেড (ডিএমটিসিএল), মিনিস্ট্র অব ডিফেন্স কনস্টাবুলারি (এমওডিসি), দ্যা কমিউনিষ্ট পার্টি অব চায়না, বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), জীবন বীমা কপোরেশন, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন, ইনভেষ্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন, বিসিএস কাষ্টমস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক্স, বিসিএস কৃষি এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স এসোসিয়েশন, পোলট্রি এসোসিয়েশন, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ, সড়ক ও জনপথ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি, বঙ্গবন্ধু পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি, বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাব লিমিটেড, বুয়েট টিচার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ রেজিষ্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশন, থার্মাক্স গ্রুপ, ম্যাক্স গ্রুপ, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, পূর্বাচল ক্লাব লিমিটেড, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং জনাব মোস্তাকিম বিল্লাহ সিয়াম।
এসি
আরও পড়ুন