ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

বাবার কবরের পাশে সমাহিত হবেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৩২, ১৫ মে ২০২০

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। 

তিনি বলেন, আজ শুক্রবার (১৫ মে) সকাল সাড়ে দশটায় রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে প্রয়াত শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামানকে। তার দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে আল মারকাজুল ইসলাম। করোনায় মৃতদের যে প্রক্রিয়ায় দাফন করা হয় তা সবগুলো মেনেই সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ শিক্ষককে শেষ বিদায় জানানো হবে।

বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, আজিমপুরে দাদার কবরে সমাধিস্থ করা হবে ড. আনিসুজ্জামানের মরদেহ। তাকে শ্রদ্ধা জানানোর সব কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। তবে আজিমপুরে কবরস্থ করার আগে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে।

এছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ছোট ভাই আখতারুজ্জামান বলেন, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হবে। অন্য সব আনুষ্ঠানিকতা বাতিল করা হয়েছে।

আখতারুজ্জামান বলেন, সিএমএইচ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে উনার রিপোর্ট করোনা পজিটিভ এসেছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

এরআগে, বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ড. আনিসুজ্জামান। রাতে খবর আসে, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। 

তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার এক শোকবার্তায় নিজের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের অনন্য অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শোকবার্তায় ড. আনিসুজ্জামানকে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে অনেক স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম স্যারের টিউটোরিয়াল গ্রুপের শিক্ষার্থী।’

ড. আনিসুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরেই ফুসফুসে সংক্রমণসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। মহাখালীর ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালে (সাবেক আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) ২৭ এপ্রিল থেকে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৯ মে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়া হয়।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের এমিরেটাস অধ্যাপক ছিলেন। এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক, ভাষা সংগ্রামী, মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী, সংবিধানের অনুবাদক ও দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলনের অগ্রবর্তী মানুষ।

জাতির বিবেকসম এ মানুষটি ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা এ টি এম মোয়াজ্জেম ছিলেন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসক।

১৯৫৬ ও ১৯৫৭ সালে স্নাতক সম্মান এবং এমএ-তে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন আনিসুজ্জামান। অনার্সে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার কৃতিত্বস্বরূপ ‘নীলকান্ত সরকার স্বর্ণপদক’ বৃত্তি লাভ করেন।

১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ভাষা আন্দোলন, রবীন্দ্র উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলন, রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী আন্দোলন এবং ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন।

১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। এছাড়া শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত গণআদালতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।

আনিসুজ্জামানের উল্লেখযোগ্য রচনাবলির মধ্যে ‘স্মৃতিপটে সিরাজুদ্দীন হোসেন’, ‘শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ স্মারকগ্রন্থ’, ‘নারীর কথা’, ‘মধুদা, ফতোয়া’, ‘ওগুস্তে ওসাঁর বাংলা-ফারসি শব্দসংগ্রহ’ ও আইন-শব্দকোষ অন্যতম।

বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, অলক্ত পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত হয়েছেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ পেয়েছেন।

সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

এমবি//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি