ঢাকা, সোমবার   ০৭ অক্টোবর ২০২৪

মৃত মুজিব আরও বেশি জীবন্ত ও শক্তিশালী

আব্দুর রহিম

প্রকাশিত : ২২:১৪, ১৫ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ২২:১৬, ১৫ আগস্ট ২০২০

ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টের ‘আপনার সবচেয়ে বড় শক্তিটা কী’-এ প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি আমার দেশের মানুষকে ভালোবাসি।’ ‘আপনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতাটা কী’- এ প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি আমার দেশের মানুষকে বেশি ভালোবাসি।’ ১৯২০ সালে ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলার স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করেছিলেন বাংলার আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি-সংগ্রামের মহানায়ক, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশ্বনন্দিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান লেখক অন্নদাশঙ্কর রায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যথার্থই বলেছিলেন। ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান/ততোকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান। দিকে দিকে আজ অশ্রুমালা রক্তগঙ্গা বহমান/তবু নাই ভয় হবে হবে জয়, জয় মুজিবুর রহমান।’

বঙ্গবন্ধু আমাদের অনুভূতি ও অন্তরাত্মায় মিশে আছেন। শেখ মুজিব মানেই বাংলাদেশ। জাতির পিতার প্রতি আমাদের ঋণ, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা অশেষ। শেখ মুজিব মানেই বাংলার মুক্ত আকাশ। শেখ মুজিব মানেই বাঙালির অবিরাম মুক্তির সংগ্রাম। শেখ মুজিব মানেই বাঙালি জাতির অস্তিত্ব। শেখ মুজিব মানেই বাঙালির ঠিকানা। শেখ মুজিব মানেই বাঙালি জাতির আশ্রয়-ভরসা। শেখ মুজিব মানেই বাঙালির আদর্শ। শেখ মুজিব মানেই ঝড়-ঝঞ্ঝার মাঝে মাথা উঁচু করে বাঙালির সঠিক পথে চলা।

শেখ মুজিব মানেই বাঙালির মৃত্যুঞ্জয়ী চেতনা। শেখ মুজিব মানেই সাম্য-অধিকার-গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। শেখ মুজিব মানেই দেশের জনগণের প্রতি মানুষের প্রতি ভালোবাসা। শেখ মুজিব মানেই নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা। শেখ মুজিব মানেই বাঙালির দিশা, আলোর দিশারী। শেখ মুজিব মানেই তো বাংলাদেশ, স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু স্কুলজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে তিনি কারাবরণ করেন।

পরবর্তী সময়ে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা স্বীকৃতির দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট চলাকালীন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি উত্থাপন, ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং সর্বশেষ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি ও নেতৃত্বদানের মাধ্যমে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হন। এটাই সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি হতো না। সে কারণেই বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও জন্মদিনকে আমি বাংলার আকাশে স্বাধীন রক্তিম সূর্যের উদয় বলে মনে করি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হন৷ ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে তিনি বলেন, ‘কর্মচারীদের বলে দেবার চাই, একজনও ঘুস খাবেন না, ঘুসখোরদের আমি ক্ষমা করব না৷’ 

১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা সেনানিবাসে দেয়া এক বক্তৃতায় শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এখনো ঘুসখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি, মুনাফাখোরী বাংলার দুঃখী মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে দিয়েছে৷ দীর্ঘ তিন বছর পর্যন্ত আমি এদের অনুরোধ করেছি, আবেদন করেছি, হুমকি দিয়েছি, চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনি৷ কিন্তু আর না৷’

অকুতোভয় বীর বঙ্গবন্ধু আমাদের অসীম সাহসিকতার প্রতীক। তিনি সমগ্র বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর। ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, তিতুমীর, সুভাষ বোস, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জগদীশ চন্দ্র বসু, শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানীর মতো সাহসী নেতৃত্বের নির্যাস তিনি নিজের মধ্যে ধারণ করতেন। তিনি হয়ে উঠেছিলেন গরিব-দুঃখীসহ সমগ্র বাঙালির সত্যিকারের মহান বীরপুরুষ। বঙ্গবন্ধুর সমগ্র জীবনটাই ছিল সংগ্রামে পরিপূর্ণ। অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে বহুবার তিনি জেল খেটেছেন। তার জীবনের ১৪টি বছর জেলের মধ্যেই কেটে গেছে।

জাতির পিতা তার রাজনৈতিক জীবনে প্রায় ৫ হাজার দিন কারাভোগ করেছেন। কিন্তু মানুষের অধিকার ও দেশের স্বাধিকার আন্দোলনে এবং দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে কখনই পিছু হটা তো দূরের কথা বিন্দুমাত্র ভয়ও পাননি। এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়ে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় নির্জন সেলের সামনে কবর খুঁড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভয় পাইয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু অসীম সাহসী বাঙালির নেতা শেখ মুজিব ভয় পাননি; বরং পাকিস্তান কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, ‘আমি বাঙালি, আমি মুসলমান, আমি মানুষ।

মানুষ একবার মরে, বারবার মরে না। আমি কখনই আত্মসমর্পণ করব না। যদি তোমরা আমাকে মেরে ফেল, মৃত্যুর পর, আমার লাশটা আমার দেশে আমার মানুষদের কাছে পৌঁছাইয়া দিও।

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার মধ্য দিয়ে বাঙালির সত্তাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী, কুচক্রী-যড়যন্ত্রকারীদের সেই অভিলাষ পূরণ হয়নি। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড বাঙালি জাতির হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে। কারণ জাতির পিতা ছিলেন ধর্মীয় চেতনায় একজন সত্যিকারের মুসলমান, তিনি ছিলেন সমাজসেবী, ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী, ছিলেন জনদরদি, সাদা মনের সহজ-সরল মানুষ, ছিলেন আদর্শবান সংগ্রামী জননেতা।

মুজিব চেতনায় জাগ্রত, হৃদয়ে স্পন্দিত, শোকাহত-প্রতিবাদী-মুজিব বিপ্লবী জনতা কোটি কোটি। মুজিব মরেনি; মরতে পারে না; শতবর্ষে শেখ মুজিব শতকোটি গুণ শক্তিশালী। প্রকৃতপক্ষে, ঘাতকরা বুঝতে পারেনি, বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশের কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই। বঙ্গবন্ধুকে সব সময়ই স্মরণ করতে হবে। বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে সব সময়ই স্মরণ করবে। সর্বোপরি, জীবিত মুজিবের চেয়ে মৃত মুজিব আমাদের কাছে আরো বেশি জীবন্ত ও শক্তিশালী।

লেখক- শিক্ষার্থী, নোবিপ্রবি।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি