ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৮ অক্টোবর ২০২৪

ঐতিহ্যের মুরাদপুর-২

সরদার রেজাউল করিম

প্রকাশিত : ১২:২৬, ২৫ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ১৫:৫১, ২৬ আগস্ট ২০২০

মুরাদপুর ইউনিয়ন এর সন্তান মরহুম এম.আর.সিদ্দিকী। তৎকালীন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ এর সভাপতি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এর অর্থ সম্পাদক এই কিংবদন্তী ব্যক্তিত্ব মুরাদপুর ইউনিয়নের রহমত নগর গ্রামের সন্তান। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যমন্ত্রী। 

বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে সম্ভবত ১৯৭৪ সালে বৈদেশিক অর্থানুকূল্যে সরকারিভাবে কলেজ ছাত্রদের জন্য একটি প্যান্ট ও একটি শার্টপিছ দেয়ার সিদ্ধান্ত হলে তিনি গুনগতমান উৎকর্ষতার জন্য প্রতিবেশি ভারত থেকে উক্ত কাপড় না কিনে জাপান থেকে কিনেছিলেন এবং তৎকালীন প্রায় সকল ছাত্র উক্ত উন্নতমানের হালকা পেষ্ট কালারের টেট্রন শার্টপিছ পেয়েছিলেন। জাপানের তৈরি ৬৫/৩৫ টেট্রন কাপড়ের প্রচলন দেশে এই প্রথম। কিন্তু ভারত থেকে উক্ত কাপড় না কেনার কারণে এবং আরও কিছু কারণে তার মন্ত্রিত্ব চলে যায় বলে গুঞ্জন রয়েছে।

বেশ কিছুদিন তিনি মন্ত্রিত্ব ছাড়া ছিলেন। ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে তাঁকে আমেরিকায় রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেয়া হয়। রাষ্ট্রদূত করা উপলক্ষে সীতাকুণ্ড ডিগ্রী কলেজ তাঁকে সংবর্ধিত করে। ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও তিনি রাষ্ট্রদূত হিসাবে বহাল থাকায় পরবর্তিতে এই মহান ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়। পরে ১৯৭৯ ইং সনের নির্বাচনের আগে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে নমিনেশন দেয়া হয়।

অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এই রাজনীতিবিদ মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে, বিশেষ করে যেসব শরণার্থী বাংলাদেশ থেকে ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় আশ্রয় নিয়েছেন এবং তখন পর্যন্ত শরণার্থীর ব্যপারে ভারতীয় সরকারী সিদ্ধান্ত না পাওয়াতে ত্রিপুরা সরকার কোন ধরনের সাহায্যের হাত বাড়াতে পারেনি, তখন সেইসব হাজার হাজার শরণার্থীর জন্য নিজস্ব অর্থায়নে শরণার্থী ক্যাম্প পরিচালনা করেছেন তিনি।

চট্টগ্রামের অন্য অনেক নেতা যখন ভারতে বসে ভারত সরকারের অর্থানুকুল্যে অত্যন্ত আরাম আয়েশে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়িয়েছেন তখন মরহুম এম.আর.সিদ্দিকী বাঙালি শরণার্থীদের দু’বেলা দু’মুঠো খাবার যোগাড়ের জন্য প্রনান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ভারতে আশ্রিত শরণার্থীদের সাহায্যার্থে নিজস্ব অর্থায়নে ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যে অবদান রেখে গেছেন তার নজির আর কোন আওয়ামী লীগ নেতা দেখাতে পারবেন না। 

অথচ আজ তার মৃতু্বার্ষিকীতে তাদের কোন কর্মসূচি নেই। এমনকি চট্টগ্রামের অনেক নেতার নামেই অনেক বড় বড় স্থাপনা থাকলেও মরহুম এম.আর.সিদ্দিকীর নামে কোন স্থাপনা নেই। 

তার অনন্য বৈশিষ্টের মধ্যে অন্যতম হলো: তিনি চাটুকার ছিলেন না, তার কোন অহংকার ছিল না, তার কোন সন্ত্রাসী গ্রুপ ছিল না, সর্বোপরি তার ডিকশনাবীতে ‘না’ বলে কোন শব্দ ছিল না। এ জন্য মুরাদপুর এম.আর.সিদ্দিকীকে নিয়ে গর্ববোধ করে।

এমবি//


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি