ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

ঈর্ষা-হিংসা ও ঘৃণা অশান্তির মূল কারণ

প্রকাশিত : ১৬:০৯, ১৯ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১১:৪৬, ২০ মার্চ ২০১৮

ঈর্ষা, হিংসা ও ঘৃণা মূলত মানসিক রোগ। যার উৎপত্তি প্রথমে পরিবার থেকে শুরু হয়। পরবর্তীতে ব্যক্তি জীবনের সর্বত্রই সেটা ছড়িয়ে পরে। কর্মজীবনে যা প্রতিযোগিতামূলক ভাবেই ব্যাপকতা লাভ করে। 

আমাদের পরিবারে অধিকাংশ মা-বাবা সন্তানকে দৃশ্যমানভাবে একজনকে আদর বেশি করেন এবং তা প্রকাশও করেন। উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে, শপিংয়ের ক্ষেত্রে এই ভুলটি বেশি করেন। কখনো সচেতনভাবে, কখনো অবচেতনভাবে। কেনাকাটা করতে গিয়ে সবচেয়ে স্নেহাস্পদ ছেলে বা মেয়ের কথা মনে পড়লো । আচ্ছা, ওর জন্যে এটা নিয়ে যাই। আরেক জনের কথা হয়তো ভুলেই গেলেন। এখান থেকেই সন্তানদের মধ্যে ঈর্ষার সৃষ্টি হয় এবং একসময় তা অনেক বড় হয়ে দেখা দেয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা উঠে এসেছে ঈর্ষা, হিংসা ও ঘৃণা মানুষকে নানা ভাবে অশান্ত করে তোলে, কুড়ে কুড়ে খায়, স্ট্রেস তৈরি করে। এক কথায় এগুলো মানুষকে ভয়াবহ অসুস্থ করে তোলে। আমরা এখন অন্যের সুখ দেখে হিংসায় অসুস্থ হয়ে পড়ি। তাই অন্যকে অশান্তিতে ফেলতে না পারলে নিজেরা শান্তি পাই না। অন্যকে কষ্ট দিয়েই এক ধরণের শান্তি আমরা লাভ করি। অন্যের ঘরে হট্টগোল লাগিয়ে নিজের ঘরে শান্তি চাই। এটি এক ধরণের শান্তি। আবার মিথ্যা কথা বলে, প্রতারণা করে, অবহেলা করে মানুষের বে-ইজ্জুত করে, মানুষের সম্পদ লুটপাট করে এক ধরণের শান্তি পেতে চাই।

বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল তার এক বইয়ে একটি ঘটনার বর্ণনা করছিলেন। লুসি নামের একটি মেয়েকে,   তাকে তার নিজের কথা লেখার জন্যে কাগজ দেওয়া হয়েছে। লুসি অনুসন্ধান করেছে তার কী কী পাপ, তার মধ্যে কীভাবে এগুলো জন্ম নিলো। অনুসন্ধান করতে করতে তার মনে পড়লো প্রথম ঘটনা-কীভাবে তার মধ্যে ঈর্ষা জন্ম নিলো। সে বলেছিলো, একদিন সকালবেলা নাস্তার সময় নাস্তার টেবিলে বসে আছি। বাবা দুটো জিনিস আনলেন। আমার বোনকে একটি ক্যাসেট দিলেন আর আমার ভাইকে একটি বল দিলেন। দুটো জিনিসই দুই জনকে দিলেন, আমাকে কিছু দিলেন না এবং আমাকে কিছু বললেনও না। সেই মুহূর্তে আমার ভেতর ঈর্ষার জন্ম নিলো।

অর্থাৎ এভাবেই ঈর্ষার জন্ম হয় ভাই-বোন বা বোন-বোন বা ভাই-ভাইয়ে। এবং যা পরিবার শুধু নয়, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রের বিপর্যয়েরও কারণ হতে পারে। মুঘল বাদশাহ শাহজাহানের উত্তরসূরি কে হবে তা নিয়ে তার সন্তানদের মধ্যে যে রক্তক্ষয়ী বিরোধ হয়েছিলো এবং তার করুণ পরিণতির পেছনেও রয়েছে এই ঈর্ষা। বড় ছেলে দারাশিকোর প্রতি অতিরিক্ত স্নেহ ও  পক্ষপাতদুষ্ট আচরণই তৃতীয় পুত্র আওরঙ্গজেবকে হয়তো ঠেলে দিয়েছিলো ভাইদের প্রতি তার নিষ্ঠুরতা দিকে। যার পরিণতিতে সে পর পর হত্যা করেছিলো আপন ভাই সুজা, মুরাদ এবং দারাশিকো-কে। আসলে ঈর্ষা এত মারত্মক একটি দোষ যার সূক্ষ্ম উপস্থিতিও অনেক বড় ক্ষতি সাধন করতে পারে। ঈর্ষা, হিংসা এবং ঘৃণা মানুষের অত্মবিশ্বাস নষ্ট করে, আত্মসম্মান বোধকে ধ্বংস করে, জীবনের আনন্দকে মাটি করে দিতে পারে। সম্পর্ক নষ্ট করা থেকে শুরু করে জটিল রোগ-এমনকি ক্যান্সার সৃষ্টিরও কারণ হতে পারে। অথচ একটু চেষ্টা করলেই আপনি ইতিবাচক শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারেন।

টিকে / এআর


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি