ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

নৌ ট্র্যাজেডির এক বছর

এখনও ঝুঁকি চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌরুটে, মেলেনি ক্ষতিপূরণ

প্রকাশিত : ০০:০১, ৬ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ২০:২০, ৮ এপ্রিল ২০১৮

১৮ প্রাণের বিনিময়েও নিরাপদ হয়নি চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌরুট। ঘাট পরিচালনা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দুর্ঘটনার এক বছর পরও ক্ষতিপূরণ পায়নি নিহতদের পরিবার। তবে দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ঘাট পরিচালনায় যুক্ত সরকারি তিন সংস্থা- বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা পরিষদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এই রুটে যাত্রীরা প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সাগর পাড়ি দেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির এমন প্রতিবেদনের পরও এ রুটে সেবার মান উন্নয়নে মনোযোগ নেই সরকারি তিন সংস্থার। উল্টো তা আরও খারাপ হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় এ রুটে দুটি জাহাজ চলাচল করলেও এখন একটিও নেই। স্পিডবোট ও পণ্যবাহী ট্রলারেই এখন উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে হচ্ছে দ্বীপের সাড়ে চার লাখ মানুষকে।

এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। তাদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম ও সন্দ্বীপে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আর নিহতদের স্মরণে সন্দ্বীপে কর্মসূচি পালন করে স্কুল শিক্ষকদের সংগঠন।

২০১৭ সালের ২ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ যাওয়ার পথে এক নৌ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান নারী-শিশুসহ ১৮ জন। জাহাজ থেকে নেমে লাল বোটে করে তীরে ওঠার সময় বোটডুবিতে তাদের মৃত্যু হয়। সেই লাল বোট এখনও চলছে কুমিরা-গুপ্তছড়া রুটে।

এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রধান ও তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মমিনুর রশিদ বলেন, ঘাট পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌরুটে যাত্রী পারাপার বাবদ টোল আদায় করলেও সেবা বাড়াতে মনোনিবেশ করছে না। তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের `আমরা সন্দ্বীপবাসী` সংগঠনের আহ্বায়ক ডা. রফিকুল মাওলা বলেন, মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই সাগর পাড়ি দিচ্ছে সন্দ্বীপের সাড়ে চার লাখ মানুষ। চারদিকে পানি বেষ্টিত এ দ্বীপের বাসিন্দাদের চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌ পথ।

গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে `আমরা সন্দ্বীপবাসী`। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রফিকুল মাওলা। সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি একেএম বেলায়েত হোসেন বলেন, নৌ দুর্ঘটনায় নিহত ১৮ জনের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন `আমরা সন্দ্বীপবাসী`র সংগঠক ফোরকান উদ্দিন রিজভী, আবুল কাসেম ও মোহাম্মদ ওমর ফয়সাল।

টোল আদায় নিয়ে চলছে কাড়াকাড়ি

চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপে যাতায়াতের রুটটিতে কোনো সংস্থারই একক নিয়ন্ত্রণ নেই। কুমিরা-গুপ্তছড়া নামে পরিচিত এ রুটে জাহাজ কিংবা সি-ট্রাক চালানোর অনুমতি দেয় বিআইডব্লিউটিসি। এখানে কমিশন এজেন্ট নিয়োগ করে যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতি বছর ১২ লাখ টাকা আয় করছে তারা । যে জেটি দিয়ে স্টিমার কিংবা সি-ট্রাকে উঠতে হয় সেটির মালিক বিআইডব্লিউটিএ । নির্মাণ ত্রুটির কারণে দুই জেটির একটি ব্যবহার করা না গেলেও প্রতিবছর ৪০ লাখ টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। আবার ঘাটে থাকা তীরের মালিক জেলা পরিষদ। তাই প্রতি বছর খাজনা বাবদ তারা যাত্রীদের কাছ থেকে ইজারাদারের মাধ্যমে নিচ্ছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। সরকারের এ সেবা সংস্থাগুলো টোলের বিনিময়ে যাত্রী নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও তিন সংস্থাই এ ব্যাপারে উদাসীন বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

স্বজনহারাদের দুর্বিষহ জীবন

গত বছরের নৌ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান রহমতপুরের মাস্টার ইউসুফ, মাস্টার ওসমান গণি, টেকনাফের সামছুল আলম, কাছিয়াপাড়ের মাইনুদ্দীন, মুছাপুরের হাফিজ উল্ল্যা, বাউরিয়ার নিজাম উদ্দীন, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ মাগুরার কামরুজ্জামান, শিশু তাহসিন, নিহাসহ ১৮ জন। তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। এক বছর পার হলেও নিহতদের পরিবার কারও কাছ থেকে পায়নি ক্ষতিপূরণ। সরকারি তিন সংস্থা একে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে এড়িয়ে গেছে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি। দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।

কেআই/টিকে


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি