ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

সীতাকুণ্ডের মানববন্ধন আগামীদিনের মাইলফলক

প্রকাশিত : ০০:০৯, ৮ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১৭:২৩, ১০ এপ্রিল ২০১৮

কবি হেলাল হাফিজের ভাষায়,

‘Now who is in youth,it is the best time for him to go to the procession.

Now who is in youth,it is the best time for him to go to the war.’

‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময় তার

এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময় তার’।

যুবক কিংবা তরুণেরাই সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের সকল অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কালে কালে রুখে দাঁড়িয়েছে। তরুণেরাই পারে সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে। বিশ্বসভ্যতায় যা কিছু অর্জন তার পেছনে অবদান এ তরুণ সমাজের। সীতাকুণ্ডের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আজ তারুণ্যের জোয়ার ও উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল মানববন্ধন কর্মসূচিকে ঘিরে। লাগাতার সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবাদে ও নিরাপদ মহাসড়কের দাবীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ পূর্বঘোষিত ১ঘণ্টার (সকাল ১০-১১টা) এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে স্বতঃষ্ফূর্তভাবেই অংশ নেয়। বিভিন্ন সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বজনহারা মানুষেরাও ব্যানার, ফেস্টুন প্লেকার্ড হাতে আজকের মানববন্ধনে সামিল হয়েছিল। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সীতাকুণ্ডের কোনো মা সন্তানহারা, স্ত্রী স্বামীহারা কিংবা সন্তান পিতৃহারা  আর না হোক-এ আকুল আকুতিই ছিল ভুক্তভোগী স্বজনহারা মানুষগুলোর কণ্ঠে। তাদের এ দীর্ঘশ্বাস ও বোবা কান্নার আওয়াজ দুর্ঘটনা কমানোর দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তা ব্যক্তিদের কানে ঢুকবে কি না- এমন প্রশ্নও করেছেন অনেকেই। আসলে সীতাকুণ্ডের মানুষগুলো বেশিরভাগই সহজ-সরল, আইনের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল। তবে দেশের অন্য এলাকার তুলনায় নাগরিক-অধিকার সচেতন নয় বলেই যুগে যুগে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে শোষণ-বঞ্চনার শিকার। প্রভাবশালী সরকারি-বেসরকারি মহলের দ্বারা এখানের নিরীহ মানুষগুলো নানাভাবেই অত্যাচার ও প্রতারণার জালে আবদ্ধ স্মরণাতীতকাল থেকেই। শিল্পাঞ্চল হয়েও এখানকার হাজার হাজার যুবক বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত। শুধু সড়ক-দুর্ঘটনা নয়, সকল অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ডের সচেতন যুবসমাজকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে; পালন করতে হবে সাহসী ও অগ্রণী ভূমিকা।

আজকের মানববন্ধনকে ঘিরে সীতাকুণ্ডবাসী জেগে ওঠেছে। এ জাগরণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাধীনদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের বিশেষকরে তরুণ প্রজন্মকে তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে আরও সচেতন ও সজাগ হতে হবে। সীতাকুণ্ডের জনগণ সচেতন হলে এখানে সড়ক দুর্ঘটনাও কমে আসবে। শুধু সীতাকুণ্ড নয়, সারাদেশের জন্যে এটি প্রযোজ্য। দুর্ঘটনার জন্যে এককভাবে শুধু চালকেরাই দায়ী নয় এর পেছনের আরও নানাবিধ কারণ রয়েছে। ওই কারণগুলো সম্পর্কে সচেতন প্রতিটি মানুষের কম বেশি ধারণা আছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণ সচেতন হলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা দায়িত্বপালন করতে বাধ্য হবেন।

শুধু মানববন্ধনই শেষ নয় এর ফলোআপ কর্মসূচি হিসেবে অচিরেই সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ক মানববন্ধন বাস্তবায়ন পরিষদ স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকে বসবে। সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিশিষ্ট জনদের সমন্বয়ে যান ও মালবাহন তদারকির জন্যে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। গাড়িগুলো যাতে ওভারটেকিং ও ওল্টোপথে চলাসহ ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করতে না পারে- তা দেখভাল করতে সীতাকুণ্ডের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে স্থানীয় বেকার যুবকদের (ট্রাফিক আইনে দীক্ষা দিয়ে) মোতায়েন করা হবে। এখানের শিল্প কারখানার মালিক ও বিত্তশালীদের সহায়তায় গাড়ি তদারককারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হবে। মহাসড়কের পাশে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারের জন্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু ওভারব্রিজ নির্মাণ নয়,সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী যাতে উড়াল সেতু ব্যবহার করে- তার জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর নজরদারি আরোপ করতে হবে। জনগণ সচেতন হলে সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দুর্নীতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সহনীয় পর্যায়ে এসে যাবে।

জাতীয় কোষাগারে উল্লেখযোগ্য অর্থ যোগানদাতা শিল্পাঞ্চল সীতাকুণ্ড-ই হচ্ছে আমাদের ‘মিনি বাংলাদেশ’। আমরা-ই এ ‘মিনি বঙ্গদেশ’ এর জনগণ। আমরা যদি সার্বিকভাবে সচেতন ও সতর্ক হই, চোখ-কান খোলা রাখি তাহলে আমাদের কারো দ্বারা কখনো শোষণ, বঞ্চনা ও প্রতারণার শিকার হতে হবে না।

পরিশেষে বলতে চাই, সীতাকুণ্ডের সড়ক-দুর্ঘটনা বিষয়ক এ নজিড় বিহীন মানববন্ধন সরকারের যোগাযোগমন্ত্রকের জন্যে বিশেষ এক বার্তা। সড়ক-দুর্ঘটনা অবশ্য শুধু সীতাকুণ্ডের সমস্যা নয়, এটি জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক সমস্যাও বটে। যেভাবে দেশে সড়ক-দুর্ঘটনা ক্রমাগত আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, সরকার যদি এ ব্যাপারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয় তাহলে এর জন্যে চরম মাশুল দিতে হবে।

লেখক: প্রধানসম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি