মাঘের শীতে ছেঁড়া কাঁথাও আশীর্বাদ
প্রকাশিত : ১৭:৫৪, ৩০ মে ২০২০ | আপডেট: ১৮:৩২, ৩০ মে ২০২০
মানিক মুনতাসির
একটা নিউজের কাজে ফোন করলাম পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে। সালাম দিয়ে কেমন আছেন জানতে চাইলে হেসে হেসে জবাব দিলেন- ভাল আছি। আমি পাল্টা বললাম যাক, ভাল আছেন জেনে ভাল লাগল। কারণ এখন তো ভাল থাকাটা বেশ কঠিন। তিনি আমার এ কথা সহজভাবে নিলেন না। একটু রাগই করলেন। বললেন এভাবে দেখবেন না। মানুষের মধ্যে প্যানিক তৈরি হয়। আপনি দেখেন, করোনায় আমাদের কতজন মারা যাচ্ছে, হিসাব করেন। সড়ক দূর্ঘটনায় প্রতিদিন কতজন মারা যায়। আর ন্যাচারাল ডেথ হয় কতো জনের।
আমি উনার এসব কথার সাথে হা, হু করলাম। কারণ আমার তো কমেন্টস পেতে হবে। যাক, মূল বিষয়ে কথা শেষ করে হাসি মুখেই রেখে দিলাম ফোন। আমি অবশ্য উনার সাথে কিছুটা একমত।
আমার উপলদ্ধি: পরশু (১২ মে) থেকে জ্বর তাই ডাক্তারের পরামর্শে আজ (১৪ মে) দুপুরে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গেলাম-আসলাম। রাস্তায় যা দেখলাম তাতে পাবলিক বাস ব্যতীত সবই ছিল। শান্তি নগর কাকরাইলে জ্যামও পেলাম। এটা সত্য যে, জীবিকার তাগিদে মানুষ ঘর থেকে বেরুতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু মানুষ তো অকাজেও ঘুরছে। শপিংও করছে। হ্যাঁ সবই তো ঠিকাছে। জীবন তো আর থেমে থাকতে পারে না। কোথাও কোথাও বিয়েও হচ্ছে। এমনকি করোনা চিকিৎসা কেন্দ্রে তরুণ-তরুণী প্রেমেও পড়ছে। পরে আবার বিয়েও করছে। ক্লাস এইটে পড়ুয়া মেয়ে ৬৫ বছরের বৃদ্ধকে বিয়ে করছে। তাহলে কি দাড়াল? কোনটা থেমে আছে?
ফিরে আসি মন্ত্রীর কথায়: সড়কে মানুষ মরছে। সেটা নিশ্চয়ই একটা বড় সমস্যা। ন্যাচারাল ডেথের ওপর তো কারো হাত-ই নেই। থাকার কথাও নয়। তবে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আমরা কতটা সতর্ক সেটাই দেখার বিষয়। আমরা পারি নি প্রবাসীদের ম্যানেজমেন্ট করতে। পেরেছি কি, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে। টেস্ট করা হচ্ছে বেশ ভাল। রেজাল্ট পেতে ভোগান্তি তো আছেই। একবার নেগেটিভ তো পরেরবার পজিটিভ। আর খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন না। হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে মারা যাচ্ছেন। উপসর্গ নিয়েও প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছেন।
কথা হচ্ছে- আমেরিকা ইউরোপে তো হাজারে হাজারে মরছে। আমাদের অবস্থা তাদের থেকে অবশ্যই ভাল। হয়তো আরো ভাল থাকতে পারতাম যদি চুরি বন্ধ করতে পারতাম। বাণিজ্যিক নয়, স্বাস্থ্যসেবা খাতে যদি সেবার মনোভাব তৈরি করতে পারতাম। তারপরও ভাল আছি। আসলেই কি ভাল আছি?
আমি কালকে (১৩ মে) ৩৩৩-এ ফোন করে আমার অবস্থার কথা বললাম, ওপার থেকে বলল- বাসায় আইসোলেশনে থাকেন। বললাম টেস্ট করাবো কিনা- নিরুৎসাহিত করলো। বাহ! টেস্টই করাবো না তাহলে আইসোলেসন কেন? বরং ওষুধ বাতলে দিল। তাও তো ভাল যে, ওষুধ বাতলে দিয়েছে। আমি অবশ্যই সন্তুষ্ট এ সেবায়। কেননা, মাঘের শীতে ছেঁড়া কাঁথাও আশীর্বাদ।
এতো কিছুর পরও স্বস্তি হলো: আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। গবেষণা হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর জিনোম সিকোয়েন্স আবিস্কার করছি। ভ্যাকসিন ট্রায়ালে যাচ্ছি। ওষুধ তৈরি করছি। করোনা হয়তো নিয়ন্ত্রণ করাটা দুরুহ। কিন্তু চেষ্টা তো করতে পারি। হ্যাঁ তা তো করছি। নিম্ন মানের মাস্ক আর পিপিই দিয়ে ডাক্তারদের সংক্রমিত করছি। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে সাংবাদিকরা দলে দলে আক্রান্ত হচ্ছি। হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। ডাক্তার থাকলেও ডিউটিতে নেই। নার্স থাকলেও ট্রলী নেই। আবার কেথাও কোথাও উল্টো চিত্রও চোখে পড়ছে। জীবন বাজী রেখে কাজ করছে ডাক্তার, নার্স।
ভাই, আসুন না সচেতন হই। মনে করছেন আপনি আক্রান্ত হবেন না। হলেও মরবেন না। ঠিক আছে, মানলাম। সেটাই হবে। কিন্তু ক্ষতি তো হবে। আপনার জন্য অন্য একজন আক্রান্ত হতে পারে। হচ্ছেও তাই। এরই মধ্যে দেশের প্রায় ১৫-২০টা জেলা ঘুর্ণিঝড়ের কবলে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। অসংখ্য মানুষ খোলা আকাশের নিচে আর কোমর পানিতে পরিবার পরিজন নিয়ে যুদ্ধ করছে। জীবন যুদ্ধ।
আমার ছেলে ক’দিন আগে বললো- আচ্ছা বাবা একটা বোম্ব কিংবা ঐ টাইপের কিছু আবিস্কার করা যায় না? যেটা করোনা ভাইরাসকে ধ্বংস করে দেবে। আমি বললাম- বাবা সময় লাগবে। কিন্তু সে কাগজে কিছু এঁকে এনে আমাকে দিল, তাতে দেখা যাচ্ছে- পৃথিবীটা যুদ্ধ করছে করোনা ভাইরাস-এর সাথে। বিশাল দেহী এক দৈত্য তলোয়ার দিয়ে কোরোনা ভাইরাসকে কেটে ফেলছে। আসুন আল্লাহকে স্মরণ করি। সাবধানে থাকি।
লেখক- সাংবাদিক।
এনএস/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।