জাতি হিসেবে আমরা সত্যিই ব্যতিক্রম!
প্রকাশিত : ১৪:৩৩, ৩১ মে ২০২০
মানিক মুনতাসির
করোনা ভাইরাসের এই মহামারিতে হাত ধোয়ার লিকুইড সাবান, স্যাভলন, ডেটল, হ্যান্ড সেনিটাইজারসহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম বেড়েছে। এখনো বাড়ছে। কেউ কিছু বলছেও না। বাঁচার তাগিদে নীরবে কিনে যাচ্ছে মানুষ। খাবার দাবারের দাম তো বেড়েছেই। যদিও বিশ্বব্যাপী জ্বলানি তেলের দাম এখন সর্বনিম্ন। সৌদী আরবসহ তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোর এখন তেল রাখার জায়গা নেই।
বিশ্বের প্রায় সব দেশে মানুষ যখন জীবন বাঁচাতে একে অপরের জন্য মরিয়া। আর আমরা তখন মরিয়া মুনাফা করতে। এই অদৃশ্য ভাইরাসের কবলে মানুষের জীবন যেখানে হুমকির মুখে, সেখানেও ৮০ শতাংশ বাস ভাড়া বাড়ানো হলো। বাহ! কি চমৎকার। সাধারণ জনগন শালা সব সময়ই বলির পাঠা।
প্লেন ভাড়া কিন্তু বাড়েনি। বাড়লো বাস ভাড়া। অথচ হবার কথা ছিল ঠিক উল্টো। কেননা প্লেনে যারা চড়েন তারা তো ধনী। আর বাসযাত্রী সাধারণ মানুষ। এখানে সাধারণ মানুষ একটা সাবান কিংবা একটা প্যারাসিমল কিনলেও ভ্যাট দিচ্ছে উচ্চ হারে। আর কর্পোরেট সব ব্যবসায়ীরা কর প্রদানে ছাড় পায় আজীবন।
এখন আসি অন্য কথায়। সারাবিশ্বে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন দেশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে তা নিয়ন্ত্রণে। আর আমরা ব্যাপক পক পক করে কথা বলেছি মিডিয়াতে। কাজের কাজ যা করেছি তা তো অজানা নেই কারো। প্রায় সব দেশই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে লকডাউন পালন করেছে আর আমরা খেলেছি লুকোচুরি। সবাই যখন জীবন বাঁচাতে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে তৎপর, আমরা তখন হার্ড ইমিউনিটির জন্য সব দরজা খুলে দিচ্ছি। সংক্রমণ বাড়বে এ আংশকায় দেশে দেশে হয়েছে কঠোর লকডাউন। কিন্তু আমরা বীরের জাতি ভাইরাসকে মোকাবেলায় স্বাগতম জানিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক করছি।
হাসপাতাল আইসিইউ, টেস্ট- সেখানেও বাণিজ্য। পাঁচ তারকা হাসপাতালগুলো হাত গুঁটিয়ে বসে আছে। আর সরকার বার বার বলছে- লাইসেন্স বাতিল করা হবে সেবা না দিলে। কিন্তু কারো লাইসেন্স কি বাতিল হয়েছে- এই তিন মাসে! তাহলে তো তারা নিশ্চয়ই সেবা দিয়েছে কিংবা দিচ্ছে। হয়তো দিচ্ছে, নয়তো নয়। আসল কথা হলো- দিচ্ছেই না।
সবাই যখন জীবন বাঁচাতে তসবি জপছে, আমরা তখনও বন্দুক বন্দুক খেলছি। লোন মুনাফা, অধিক মুনাফা খুঁজছি। বিমান ভাড়া করে দেশও ছাড়ছি। ধনীদের দায়িত্ব যেন শুধুই সুবিধা নেওয়া। সাধারণ মানুষ মরলেই কি আর বাঁচলেই কি? তবে একটা বিষয় বোধ হয় খুবই সত্য। আমরা আসলে সব সময় প্রকৃতির সহযোগিতা আর আল্লাহর রহমত একটু বেশিই পাই। এই যে বন্যা, খরা, অতি বন্যা, ভূমিকম্প, সাইক্লোন- যেটাই আসুক। প্রতিবেশী দেশও ধসে যায় কিন্তু আমরা বেঁচে যাই বার বার।
এই করোনা মহামারীতেও অন্য দেশে মানুষ মরছে হাজারে হাজারে। অথচ তাদের চিকিৎসা, হাসপাতাল, আইসিইউ, ওষুধ, অন্যান্য সেবা সবই চমৎকার। আর আমাদের ডাক্তার থাকলে ওষুধ নাই। যন্ত্র আছে চালানোর লোক নাই। হাসপাতাল আছে আইসিইউ নাই। ওষুধ থাকলেও তাতে ভেজাল, টেস্ট বাড়ানোর সামর্থ্য নাই তারপরেও কিন্তু মৃত্যু হার অনেক দেশের তুলনায় কম। এটাই আসলে সবচেয়ে বড় ব্যতিক্রম।
লেখক- সাংবাদিক।
এনএস/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।