করোনাকালের বাজেট
প্রকাশিত : ২১:৩০, ৭ জুন ২০২০ | আপডেট: ০০:৫৬, ৮ জুন ২০২০
করোনা আমাদের অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। এ বছরটা এবং সামনের কয়েকটা বছর করোনাকাল হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। অতীতের থেকে অনেক আলাদাভাবে আমাদের চিন্তা-ভাবনা করতে হবে, পরিবর্তীত পৃথিবীর উপযোগী রূপরেখা তৈরি করতে হবে। এই ভিন্নতা উপলব্ধি করে এবারের বাজেট অবশ্যই সামাজিক চিন্তা-ভাবনা থেকে হতে হবে। আমাদের অর্থনীতি পুঁজিবাদের আদলে করা হয়। দেশে দেশে করোনাকালেরর আগেই পুঁজিবাদের সংস্কার নিয়ে কথা হচ্ছিল। এটা এখন নিশ্চিন্তে বলা যায় যে গত চার দশকে পুঁজিবাদ যেভাবে প্রয়োগ হয়েছে তা সামগ্রিকভাবে মানব কল্যাণে ব্যর্থ হয়েছে। দিকে দিকে আয় এবং সম্পদ বৈষম্য চরমে রূপ নিয়েছে। এই করোনাকালেও পুঁজিপতিদের লাভের অংক বড় থেকে আরও বড় হচ্ছে। সমগ্র পৃথিবীর ৭৮০ কোটি মানুষের যা যম্পদ আছে তার অর্ধেক আছে মাত্র ২৬ জন ব্যাক্তির হাতে। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। দিন দিন এখানে বেড়ে চলছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। বাংলাদেশ এখন বড়লোক বানানোর কারখানায় পরিণত হয়েছে।
করোনা উত্তর পৃথিবী আগের মত হবে না। বদলে যাবে অনেক কিছু–মানুষের সঙ্গে মানুষের, দেশের সঙ্গে দেশের সম্পর্কগুলো বদলাবে অনেক। অর্থনীতি আরও অনেক সুশৃঙ্খল করতে হবে। পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেয়া নির্বিচার মুক্তবাজার অর্থনীতি থেকে বেড়িয়ে এসে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় অর্থনীতি সাজাতে হবে। একপাল পুঁজিপতি নির্ধারিত ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দরকার নেই। বৈষম্যহীন সাদামাটা, বিজ্ঞান ভিত্তিক, উন্নত সংস্কৃতির, সাম্যবাদী বাংলাদেশ চাই। এ চাওয়া আজকের নয়। এই চাওয়া পাওয়ার জন্য শহীদ হয়েছে ৩০ লক্ষ। সামনে বাজেট। এবারের বাজেট তৈরি হোক সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য নিয়ে।
এবারের বাজেট কেমন হওয়া উচিৎ তা নিয়ে আমার দুটি লেখা ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। একটা বেশ বড় লেখা “করোনাকালের অর্থনীতি ভাবনা” শিরোনামে প্রকাশ হয়েছিল দৈনিক সমকালে। আরেকটা অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠান ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের করোনা অর্থনীতি নিয়ে স্বনামধম্য অর্থনীতিবিদদের অনেকগুলো লেখার একটা সংকলনে “করোনাকালে বিশ্বায়ন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য” শিরোনামে প্রকাশ হয়েছে তাদের ওয়েবসাইটে। প্রেক্ষাপটের বিস্তারিত আলোচনা বাদ দিয়ে লেখা দুটোর সুপারিশগুলো এক সঙ্গে নিচে উল্লেখ করা হলো।
১. কৃষক যে দাম পায় তার প্রায় দশগুণ দামে শাকসবজি, ফলমূল ও মাছ আমাদের কিনতে হয়। এর কারণ কৃষিপণ্যের বণ্টন ব্যবস্থায় সরকারের কোন অংশগ্রহণ নেই। সরকারের নিজস্ব পণ্য ক্রয় এবং বণ্টন ব্যবস্থা থাকলে মধ্যসত্ত্বভোগীরা এই দৌরাত্ব দেখাতে পারত না। কমত পথে পথে চাঁদাবাজি, খুনোখুনি। সরকার একটা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেসরকারী খাতের পাশাপাশি এইখাতে কাজ করলে কৃষক ভাল দাম পাবে; শহুরে নিম্ন আয়ের মানুষেরা একটু স্বস্তি পাবে।
২. করোনা কালে দেখা গেল বেসরকারী খাত কোন কাজে আসছে না। অথচ দেশের দুই তৃতীয়াংশ চিকিৎসা সেবা এই বেসরকারী খাতের উপর নির্ভরশীল। চিকিৎসা সেবায় সরকারের বিনিয়োগ এতটাই বাড়াতে হবে যেন মধ্যবিত্ত পর্যন্ত যেন চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না হয়। জেলা পর্যায়ে এবং বড় বড় শহরে সরকারী হাসপাতালগুলোকে ১০/২০ তলা বানিয়ে পর্যাপ্ত বেড আর চিকিৎসা উপকরণের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, ঔষধ এবং রাসায়নিক ও অন্যান্য সামগ্রী উৎপাদনে সরকারের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। চিকিৎসা সেবার মান নিশ্চিত করতে জনপ্রতিনিধি এবং সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৩. ১৩ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ বলেছিল গ্রামে গ্রামে বহুতল দালান করে এবং তার সংলগ্ন খেলার মাঠ, স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার করে গ্রামে পৌঁছে দেয়া হবে শহরের সুবিধা, বাড়ানো যাবে কৃষির জন্য জমি। সরকার পরবর্তীতে একটা প্রকল্পও শুরু করেছিল। সে প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা কেউ জানে না। বেড়ে চলছে গৃহহীন মানুষের মিছিল। সরকারের হিসেব মতে, দেশে এখন ৫০ লক্ষ মানুষ গৃহহীন; ৭৪% থাকে কাঁচা ঘরে। করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে হলে অবকাঠামো নির্মানে প্রচুর ব্যয় করতে হবে। নিম্ন আয়ের নাগরিকদের জন্য, দুঃস্থদের জন্য ঘর-দুয়ার বানিয়ে দিলে একই সঙ্গে মানুষের দুঃখ-দুর্দশার লাঘব করা যাবে অন্য দিকে অবকাঠামো নির্মান করে অর্থনীতির চাকায় দ্রুতগতি দেওয়া যাবে। গ্রামে গ্রামে বহুতল দালান তৈরি করে দেয়ার প্রকল্পটা ফার্স্ট ট্রাকে নিয়ে আসতে হবে।
৪. শহরগুলো থেকে কারখানা বের করে নদীর আর সমুদ্রের ধারে নিয়ে যেতে পারলে কমবে শহরের উপরে জনসংখ্যার চাপ। তাতে একদিকে শহরে, নগরে ট্রাফিক জ্যাম, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ এবং জমির দাম কমবে; নগরের প্রকৃতি স্বাভাবিক হবে, গ্রামীণ জনপদে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানুষ বসবাস করতে পারবে; গ্রামীণ জমির দাম বেড়ে সারাদেশে কিছুটা ভারসাম্য তৈরি হবে।
৫. রেল কম খরচে, কম সময়ে, নিরাপদে অনেক বেশি মানুষ একসঙ্গে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে। উন্নত দুনিয়া রেলের উপর নির্ভর করে। এখানেও নতুন করে হাজার হাজার কিলোমিটার রেল লাইন এবং অনেক রেল গাড়ি দরকার। দরকার তাদের সময়ানুবর্তিতা, পরিচ্ছন্নতা। রেলের টিকেট কালোবাজারীর আখড়া। এসব থেকে রেলকে মুক্ত করা গেলে মানুষের জীবনে স্বস্তি আসবে।
৬. পরিবহণ নিয়ে চলে চরম অনিয়ম, লুটপাট। এটা হচ্ছে গণপরিবহণে বিআরটিসির ভূমিকা দিন দিন কমে আসার জন্য। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিআরটিসি থাকলে সড়ক পরিবহণে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে; বন্ধ হবে যাত্রীদের প্রতি দুর্ব্যবহার, অত্যাচার, অতিরিক্ত ভাড়া; নিরাপদ হবে সড়ক পথে ভ্রমণ।
৭. কারখানা বানানোর পরিকল্পনা এমনভাবে দরকার যাতে সড়ক পথে পণ্য পরিবহণের একদম প্রয়োজন না হয়। বাড়াতে হবে নৌচলাচলের রুট। আধুনিকায়ন দরকার লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজে।
৮. বর্তমান সময়ে চিকিৎসা এবং শিক্ষাদান অন্যতম প্রধান দুর্নীতিগ্রস্থ পেশায় পরিণত হয়েছে। শিক্ষায়তন শিক্ষার্থীর প্রাণের মেলায় পরিণত করতে হবে। ছাত্রছাত্রীরা যেন হাতে-কলমে শিখতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্য প্রতিটি শিক্ষায়তনে পর্যাপ্ত পরিমাণে গবেষণাগার এবং তা চালিয়ে রাখার জন্য যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য উপকরণের পর্যাপ্ত সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে। গবেষণায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। গবেষণার জন্য সরকারের সাহায্য অনেকগুণ বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে সরকারী স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। বন্ধ করতে হবে মাদ্রাসা আর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দৌড়াত্ব। এই দুইধারায় শিক্ষিতরা দেশের কাজে আসে না। মাদ্রাসা শিক্ষিতরা দেশকে, সমাজকে পেছনে টানে।
৯. অরাজকতায় বসবাস করতে করতে আমরা ভুলে গেছি কি করে সুস্থ সমাজ গঠন করা যায়; কি করে সবাই মিলে সুন্দরভাবে একসঙ্গে বাঁচা যায়। আমাদের সমাজে এত কিছুর দরকার নেই। জীবনের জন্য দরকার একটা বাসস্থান, সুষম খাদ্য, অসুখ হলে চিকিৎসা, মানসম্পন্ন বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা, পরিচ্ছন্ন পোশাক, সুশৃঙ্খল ও নিপীরণহীন পরিবহণ, দুষণমুক্ত পরিবেশ। ভেজালবিহীন খাবার খেলে অসুখ-বিসুখ কম হয়, চিকিৎসাও কম লাগে। তারপর লাগে শরীর ঠিক রাখতে শরীরচর্চার কেন্দ্র, পরিচ্ছন্ন পার্ক; সুকুমার মনোবৃত্তির খোরাক সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, কবিতা, নাটক আর বই।
আন্তর্জাতিক বাজারের গতিবিধির উপর সতর্ক নজর রেখে করোনা দুর্যোগকে আমাদের সুযোগে পরিণত করতে হবে। তার জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নেয়া যেতে পারেঃ
১. করোনাকালে অনেক দেশ স্বাস্থ্য সেবায় নিজেদের দূর্বলতাগুলো বুঝতে পেরেছে। স্বাস্থ্য সেবা শক্তিশালী করতে হলে তাদের প্রয়োজন হবে ডাক্তার, নার্স এবং চিকিৎসা যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য রসদের। খাদ্য শস্য আমদানী নির্ভর অনেক দেশ কৃষিতে স্বাবলম্বী হওয়ার বিষয়টি এখন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। তারা নিজেরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাইবে। সেজন্য দরকার হবে কৃষিকাজে দক্ষ কৃষকের। বাংলাদেশের রয়েছে যথেষ্ট দক্ষ ডাক্তার, নার্স এবং কৃষক। এই দুই ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারবে। কূটনৈতিক মিশনগুলো যে যে দেশে আছে সে দেশের এবং তাঁর পার্শবর্তী দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করলে এই চাহিদাগুলো দেখতে পাবে। চাহিদা সৃষ্টি হওয়া মাত্র তা যোগান দেবার জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
২. বাংলাদেশ জ্বালানি তেল ও গ্যাস দুইই আমাদানী করে। সতর্কতার সঙ্গে আমরা বেশ কিছু কৌশলগত ক্রয় করতে পারি। পুর্ণ করে রাখতে পারি আমাদের ট্যাংকগুলো। বিস্তারিত বিবেচনায় উপযুক্ত মনে করলে নতুন নতুন ট্যাংক বানিয়ে আমাদের জ্বালানী তেলের ও এলএনজি’র মজুদ বাড়িয়ে রাখতে পারলে অনেক জ্বালানী খরচ সাশ্রয় করা যাবে।
৩. রফতানি বহুমুখীকরণের কথা অনেক আলোচনা হয় কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এবার এ ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে। করোনাকালে প্রয়োজনের তাগিদে বাংলাদেশ ভ্যান্টিলেটরের মত আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা স্থাপন করছে। ইতোমধ্যে দেশে ইলেক্ট্রনিক্স উৎপাদন প্রায় বিপ্লব সৃষ্টি করে ফেলেছে। শুধু ইলেক্ট্রনিক্সই নয় অন্যান্য যন্ত্রপাতি তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল দেশেই রয়েছে। উচ্চতর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণেরা যোগ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ পাচ্ছে না। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার এই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে শিল্প কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির দাম অনেক কমে গিয়েছে, আরও কমে যাবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজও অনেক এগিয়েছে। বর্তমান এবং নতুন শিল্পে বিনিয়োগের এখন উৎকৃষ্ট সময়।
৪. শিল্পের জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি এবং তথ্যপ্রযুক্তির যন্ত্রপাতিতে বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ এই করোনা দুর্দিনকে সুদিনে রূপান্তর করে ফেলতে পারে।
৫. বিনিয়োগ সবসময় ঝুকিপূর্ণ। সতর্কতার সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের এবং বৈদেশিক মুদ্রার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হলে হিতেবিপরীত হতে পারে। অভিজ্ঞ এবং দক্ষ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সতর্কতার সঙ্গে যাচাইবাছাই করে বিনিয়োগের জন্য নির্ধারণ করতে হবে। প্রশাসনিক জটিলতা দূর করে অনলাইনে ব্যবসা ও শিল্প স্থাপনের অনুমতি, লাইসেন্স, ইত্যাদি পাবার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেবার জন্য বিভিন্ন রকমের কর, অর্থায়ণ এবং অন্যান্য প্রণোদনা দিতে হবে। দূর করতে হবে বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতাগুলো; দিতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাবলী। লালফিতার দৌরাত্ব ঘুঁচিয়ে ব্যাপকভাবে শিল্পায়ন করার এখনই সময়। এ কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য এখনই একটা কমিশন গঠন করলে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে। কমিশন বিনিয়োগের উপযুক্ত ক্ষেত্র নির্ধারন করে, নীতিমালা প্রণয়ন করে দিলে করোনাকাল কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ কাজে নেমে পড়তে পারবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং সরবরাহ সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। দেশের রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তার উপর রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নেয়ার অনেক সুযোগ। তৈরি পোশাকের রফতানী এবং প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ বর্তমানে কমে গেলেও এ অবস্থা বেশি দিন বজায় থাকবে না। আমাদের তৈরি পোশাক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অন্তর্ভুক্ত, বিলাস দ্রব্য নয়। ফলে ইউরোপ, আমেরিকা কিছুটা চালু হলেই আবার আমাদের বাজার ফিরতে শুরু করবে। একই ব্যাপার ঘটবে প্রবাসীদের রেমিটেন্সের ক্ষেত্রেও। নতুন সৃষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে রফতানি বাড়াতে পারলে আর শ্রমিক পাঠাতে পারলে বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান। দেশে অনেক অপ্রয়োজনীয় বিলাস পণ্যের আমদানি হয়। এসব আমদানি বন্ধ করলে অনেক বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। অর্থের অভাব হবার কথা নয়। দরকার স্বপ্নদর্শী যোগ্য নেতৃত্ব আর সাহসী ও সতর্ক পদক্ষেপ।
আগামী দিনের পৃথিবী কতটা কল্যাণমুখী হবে তা নির্ভর করবে এখন আমরা কি করছি আর নিকট ভবিষ্যতে কি করব তার উপর। বর্তমান সভ্যতা যে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে নাই করোনাভাইরাস তা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। করোনা আমাদের এও শিখেছে যে একটু যত্ন নিলেই সেরে উঠবে অসুস্থ পৃথিবী। বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ করোনা উত্তর পৃথিবীর রূপরেখা নির্মানে যে রকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেরকম ভাবেই তৈরি হবে আগামী দিনের বিশ্বব্যবস্থা বা বিশ্বায়ন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের যথেষ্ট সুনাম এবং গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। দিনবদলের সন্ধিক্ষণে তাঁর কল্যাণকামী এবং দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব ভুমিকা রাখবে আগামী পৃথিবীর রূপরেখা প্রণয়নে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ প্রকৃতি ও তার সকল সন্তানের মঙ্গলের জন্য, কল্যাণের জন্য সোচ্চার হলে আমরা পাব সকল প্রাণের সমান অংশিদারিত্বে বাসযোগ্য নতুন পৃথিবী।
লেখক: চার্টার্ড একাউন্টেন্ট (এফসিএ) এবং লিড কনসালট্যান্ট ও চেয়ারম্যান, ঢাকা কনসাল্টিং লিমিটেড।
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।