আমিতো অবাক, হতভম্ব!
প্রকাশিত : ২১:০১, ১১ জুন ২০২০
সহকর্মীদের সঙ্গে লেখক (বাঁয়ে)।
মহামারী আকার ধারণ করা মরণঘাতী করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় সোয়া ৪ লাখ মানুষ। আক্রান্ত ছাড়িয়েছে প্রায় ৭৫ লাখ। দেশেও মারা গেছেন এক হাজার ৪৯ জন এবং আক্রান্ত ৭৮ হাজারের বেশি। প্রতিদিনই এমন নেগেটিভ খবর দেখতে দেখতে আমরা সবাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। সরকারি হাসপাতালে টাকা পয়সা, মোবাইল, চুরি হওয়ার ঘটনার সাথেও মোটামুটি সবাই পরিচিত। বহিরাগত কিছু মানুষ হাসপাতালে ঢুকে এই কাজগুলো করে থাকেন বলে প্রামাণ মেলে।
কিন্তু সম্প্রতি ঘটা এই ঘটনাটি একেবারেই ভিন্ন ধরনের। যেটা দেখে আমিতো আর আমিত্ববোধেই ছিলাম না, খুবই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম।
ঘটনাটা হচ্ছে- চলমান করোনা প্রাদুর্ভাবে বহিরাগত কিছু যুবক হাসপাতালে ঢুকেছে ঠিকই কিন্তু চুরি করতে নয়! করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত যেসব রোগীর সাথে কোনো লোক থাকেনা কিংবা যেসব রোগী একা চলাফেরা করতে পারে না, তাদেরকে সাহায্য সহযোগীতা করার জন্যে ওরা হাসপাতালে এসেছে।
বিষয়টি আমি নিজেও জানতাম না। কি করে বুঝবো যে, ওরা রোগীর লোক নাকি সেচ্ছাসেবী? বোঝার কোনো উপায়ও ছিল না! কিন্তু বোঝা গেল এই ঘটনায়...।
এক রোগীর ব্লাড স্যাম্পল নিয়ে সিএমএইচ হাসপাতালে যেতে হবে। কিন্তু রোগীর সাথে কোনো লোক নেই। আমি আমার এক কলিগের সাথে বিষয়টি শেয়ার করছিলাম, ঠিক তখনি পিপিই পরা (সম্ভবত নিজের টাকায় কেনা, রি-ইউজ করা যাবে এমন কাপড়ের) অবস্থায় একটা ছেলে এসে বললেন, আপু আমাকে দেন, আমি নিয়ে যাবো।
শুনে আমিতো অবাক! জিজ্ঞেস করলাম কে আপনি? সালাম দিয়ে ছেলেটি বললো, আপু আমি আপনাদের সাহায্য করতে এসেছি। আমি বললাম, মানে! কিছুই বুঝলামনা!
তখন সে বললো, আমরা প্রতিদিন আসি। যেসব রোগীর সাথে লোক নেই তাদেরকে আমাদের ফোন নাম্বার দেই, বাহিরের কোনো কাজ থাকলে আমরা করে দেই, আপনারা অনেক ব্যস্ত থাকেন, সে জন্যে যখন অক্সিজেন শেষ হওয়ার সময় হয়, আমরা তখন অক্সিজেন সিলিণ্ডার নিয়ে দেই, যেনো রোগীর কোনো অক্সজেনের কষ্ট না হয়। যাদের অক্সিজেন নিয়ে বাথরুমে যেতে কষ্ট হয়, আমরা তাদের জন্য কাজ করি।
আমি তখন আর আমার আবেগ ধরে রাখতে পারিনি, আমি ঠিক কী বলে যে ওদেরকে ধন্যবাদ দেবো, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। যেখানে নিজেদের আপনজন দূরে সরে যায়, সেখানে ওরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এইসব কাজ করে যাচ্ছে? আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।
সত্যিই পৃথিবীতে এখনো অনেক ভালো মানুষ আছে বলেই হয়তো পৃথিবীটা এখনো টিকে আছে। আমি ওদের বাবা মাকে, পরিবারকে স্যালুট জানাই। এই ছেলেগুলো সুস্থ থাকুক, ভালো থাকুক, পরবর্তী ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে যেনো বেঁচে থাকতে পারে ওরা। আল্লাহ ওদের হেফাজত করুন। ওদের জন্য অনেক অনেক দোয়া আর ভালোবাসা।
লেখক- সিনিয়র স্টাফ নার্স, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।
এনএস/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।