ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাজেট নিয়ে সাধারণের ভাবনা

বেলায়েত বাবলু

প্রকাশিত : ১২:৩৩, ১২ জুন ২০২০ | আপডেট: ১২:৫৮, ১২ জুন ২০২০

বেলায়েত বাবলু

বেলায়েত বাবলু

অনেকটা সুনসান নীরবতার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার মহান জাতীয়  সংসদে ২০২০-২০২১ সালের অর্থ বছরের বাজেট পেশ করা হয়েছে। ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত এ বাজেট নিয়ে বরাবরের মতো এবারও সাধারণ জনগণের তেমন কোন মাথা ব্যথা নেই। তবে কোন পন্যের দাম বাড়লো আর কোনটা কমলো সেটা নিয়ে কারো কারো মধ্যে আলোচনা থাকলেও দাম বাড়তে পারে এ খবরে ইতোমধ্যে অনেক পন্যের দাম বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। 

মহামারী করোনার এই সময়টাতে পেশ করা বাজেট নিয়ে এ বছর কারো মধ্যেই তেমন কোন প্রতিক্রিয়া খুব একটা পরিলক্ষিত হয়নি। একসময় সংবাদপত্রের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকার কারণে বাজেট পেশের সময়টাতে এনিয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করতে হতো। আগে দেখতাম, বাজেট পেশ হওয়ার সাথে সাথেই প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল বাজেটের পক্ষে বিপক্ষে নগরীতে মিছিল বের করতো। একপক্ষ বাজেটকে জনমুখী আখ্যায়িত করে যেমন আনন্দ মিছিল করতো, তেমনি প্রতিপক্ষ বাজেটকে গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে ওই বাজেটকে প্রত্যাখান করে রাজপথে মিছিল করতো। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত থাকতো নগরী। বাজেট কেমন হলো তা পর্যালোচনা না করেই দুই পক্ষই আগেভাগেই ব্যানার তৈরী করে রাখতো। এই কালচার থেকে ধীরে ধীরে আমরা যেন সরে আসছি। 

মিডিয়া কর্মী হিসেবে বাজেট পেশের পরপরই যখন বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইতাম, তখন শ্রদ্ধাভাজন বিশিষ্টজনেরা সঙ্গত কারণে দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যেতো। বিএনপির সময়ে আওয়ামী ঘরানার বিশিষ্টজনদের দেখতাম কোন পর্যালোচনা ছাড়াই পেশকৃত বাজেটকে গরীব মারার বাজেট আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখান করে দিতো। আবার বিএনপি ঘরানার বিশিষ্টজনেরাও কোন পর্যালোচনা ছাড়াই বাজেট জনমুখী আখ্যায়িত করে পেশকৃত বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে সরকারকে অভিনন্দন জানতো। আবার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিএনপি ঘরানার বিশিষ্টজনেরা বলেছে বাজেট গণবিরোধী, এ বাজেট কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। পক্ষান্তরে আওয়ামী ঘরানার বিশিষ্টজনেরা বলেছে, পেশকৃত বাজেট জনবান্ধব। এ বাজেট উন্নয়নমুখী। 

বাজেট পেশকালে যেসব প্রতিক্রিয়া পাওয়া যেতো, বাজেট পাশের পর তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া আর পাওয়া যেতো না। নিয়ম মেনে এবারও বাজেট পেশ করা হলো। কিন্তু নিস্প্রাণ জাতীয় সংসদে যেমন সকল সদস্য উপস্থিত ছিলনা, তেমনি বাজেটের পক্ষে বিপক্ষে কোন মিছিল বা প্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি। তবে চায়ের দোকানের আড্ডায় বাজেটে কোনটার দাম বাড়লো আবার কোনটার দাম কমলো তা নিয়ে আলোচনায় করতে দেখা গেছে। কেউ বলছে, বাজেট কি হলো তা দিয়া মোরা কি করমু, মোরা ডাইল ভাত খাইয়া বাঁইচা থাকলেই হইলো। 

আসলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বাজেট দেয়া হবে, একপক্ষ সমর্থন দিবে আরেক পক্ষ বিরোধীতা করবে এই কালচার চলবে যুগের পর যুগ। তবে বাজেট তৃণমূল মানুষের কতোটা ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে সে প্রশ্নই থেকে যাবে অনন্তকাল। কেননা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের করা প্রতিদিনকার বাজেট বাজারে গেলে আর ঠিক রাখা যায় না। দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলেও নিম্ন আয়ের মানুষের কিন্তু আয় বাড়েনা। রাষ্ট্রের বাজেট দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটাতে পারলেও জনগণের ভাগ্যের প্রভূত উন্নতি করতে পারেনা কোন সময়েই। দেশে জনসংখ্যার তুলনায় কর্ম সংস্থানের সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমছে। বেকার থাকা মানুষগুলো হতাশায় ভোগে রাত দিন। প্রিয় জন্মভূমিতে ধনী আরো ধনী হচ্ছে আর গরীবেরা গরীব হচ্ছে, হবে -এটাই যেন নির্মম বাস্তবতা। 

কার কাছে রাষ্ট্রের বাজেট জনবান্ধব হলো আবার কার কাছে গণবিরোধী হলো- তা দুঃখী মানুষের কাছে মুখ্য নয়। রহিম, করিম আর তসলিমা, তাহমিনারা দুটো ডাল ভাত খেয়ে আর মোটা কাপড় পরে দিন পার করতে পারলেই সন্তুষ্ট। এটাই যেন তাদের কাছে ভালোভাবে বেঁচে থাকা। তারা মাস শেষে সঞ্চয় কারে বলে তা বোঝে না। উৎসব পার্বনে তারা নতুন পোশাকে ঘুরতে চায় না। যাকাতের কাপড় অথবা কারো দানে পাওয়া কাপড় পরে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি ঘুরে বেড়াতে পারে। তারা শত কষ্টের মাঝেও চিৎকার করে সম্ভাবনার জয়গান গাইতে পারে।

লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি