করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম
প্রকাশিত : ১২:২৫, ১৭ জুন ২০২০ | আপডেট: ১৭:৫৪, ১৭ জুন ২০২০
ছবি: আইসোলেশনে থাকার সময় সন্তানদের করুণ চাহনি
করোনাকালীন পরিস্থিতিতে চারদিকে এত ভয়, আতঙ্ক, হতাশা বিরাজ করছে; তাই বিষয়টি সবাইকে জানাইনি। স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়াতে চাইনি। ঈদের ঠিক আগে ২২ মে রাত থেকে আমার জ্বর, সর্দি ও ঠান্ডা ভাব দেখা দেয়। মনে করেছিলাম সিজনাল সমস্যা। ডাক্তারদের পরামর্শ নিই। অফিস করেছি, কলিগের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে এটা জানার পর সবাই আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন।
সেভাবেই থাকতে শুরু করি। স্ত্রীও আইসোলেশনে থাকে। বাড়তি সতর্কতার কারণ, বাসায় বয়োবৃদ্ধ মা আছেন। দুটিই সন্তান ও একটি মেয়ে আছে আমাদের সঙ্গে। এ অবস্থায় আমাদের বাসায় এবার ঈদ আসেনি। জীবনে এই প্রথম কোন ঈদ গ্রামের বাড়ির বাইরে থাকা।
কি হয় না হয়, একটা ভয়ের মধ্যে সময়টা কাটে। করোনা টেস্ট করাই ২৯ মে। রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তারপর ৬ ও ১৩ জুন টেস্ট করিয়েছি তাতে নেগেটিভ এসেছে।
সংকটে কাছে পাবো এমন কয়েকজন স্বজনকে অসুস্থতার খবর জানিয়েছিলাম। তারা প্রতিনিয়ত খোঁজ নিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। অসুস্থ এ খবরটা শুনে ছোটভাই সায়েম সুদূর আমেরিকা থেকে যখন Pulse oximiter, Spirometer, N 95 মাস্ক, ভিটামিন সি, জিন্ক পাঠিয়ে দেয়; এই ভালোবাসার প্রতিদান কীভাবে দেব?
ভরসা ছিল, জীবনে করো ক্ষতি করিনি, কখনো হারাম স্পর্শ করিনি, আল্লাহ আমাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলবেন না। সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া, তিনি রক্ষা করেছেন।
সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছি। তারপরও সংক্রমিত হলাম। একটা উপলব্দি হলো, একা ভালো থাকার উপায় নেই, সবাইকে নিয়েই ভালো থাকতে হবে। মানুষ, পরিবেশ-প্রকৃতি, জীবজন্তু সবাইকে বাঁচিয়েই পৃথিবীটাকে ভালো রাখতে হবে।
সবার জীবন মঙ্গলময় হোক। সবাই আশির্বাদ রাখবেন।
আরেকটা বিষয় : করোনা সংক্রমণ মানেই মৃত্যু না। এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নিয়ম মানতে হবে আর সতর্ক থাকতে হবে। বুঝতে পারছি মৃত্যুর দুঃসংবাদ পেতে পেতে সবার মনে ভয় ঢুকে গেছে। কারণ মানুষের জীবন তো অমূল্য। প্রতিটি জীবন তার নিজের কাছে, স্বজনদের কাছে ও পরিবারের কাছে মহামূল্যবান। আমরা একজনকেও হারাতে চাই না।
কিন্তু তারপরও কিছু মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। সংখ্যা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের কাছে মৃত্যুর হার নাকি বেশি না। টিবি রোগে প্রতিদিন দেশে ১৩০ জন মারা যায়, এ তথ্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, অভয় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন গবেষক আফসান চৌধুরী।
আরেকজন জানিয়েছেন, দেশে হৃদরোগে প্রতিদিন মারা যায় ১৩৬ জন। এই সব মৃত্যু গা-সয়া হয়ে গেছে। মানুষকে প্রভাবিত করে না। অথচ করোনা নিয়ে এত ভয়, এত আতঙ্ক!
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের ৮২ বছর বয়স্ক মা যখন করোনা আক্রান্ত হয়েও সুস্থ হয়ে উঠেন, তখন তো সবারই আশাবাদী হওয়া উচিত। সুতরাং ভয় পেয়ে মরার আগে মরে যাব না, ভয় পাব না, আতঙ্কিত হবো না।
করোনা আক্রান্ত হয়ে মানুষের উপকার করার সুযোগ এসেছে। আমি তার সদ্বব্যবহার করতে চাই। প্লাজমা দিতে চাই।
লেখকঃ সাংবাদিক
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।