ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

হুঁশ ফিরে পাক মানুষ!

মানিক মুনতাসির

প্রকাশিত : ২১:৩১, ১৮ জুন ২০২০

মানিক মুনতাসির

মানিক মুনতাসির

মহামারী রুপ নেয়া করোনা ভাইরাসে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে মানুষ। হ্যাঁ, স্বাভাবিক মৃত্যুও কিন্তু থেমে নেই। বাড়ছে আক্রান্তের হার। বাড়ছে লাশের সারি। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার যা অবস্থা, তাতে সামনে কি আছে আমরা হয়তো অনুমান করতে পারছি না। তবে আমার মনে হয়, নীতি নির্ধারকরা ঠিকই অনুমান করতে পারছেন। নইলে লকডাউন আর লাল, সজুব, হলুদের খেলা নিয়ে লুকোচুরি তো চলার কথা নয়।

সংক্রমণ, মুত্যু, জীবন-জীবিকা, অফিস-আদালত, কেনাবেচা সবই তো চলছে। কোনটা থেমে আছে বলেন? এমনকি থেমে নেই অপকর্মও। পিটিয়ে মারা হচ্ছে চিকিৎসককে। আবার চিকিৎসা না পেয়ে কিংবা অপচিকিৎসায় মরছে প্রসূতি। ধর্ষকের যৌনাচারও থেমে নেই। শুধু কি তাই, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার কসবায় একই ওড়নায় ঝুলতে দেখা গেছে দুই বান্ধবীকে। ধারণা করা হচ্ছে, ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে তাদেরকে। এই নরপিশাচ পাষণ্ডদের নিশ্চয়ই করোনা ভাইরাসকেও কোন ভয় নেই।

অর্থাৎ মানুষের (বাংলাদেশী) তো মৃত্যুকেই ভয় নেই। তাহলে করোনা ভাইরাস! সে তো ছোট্ট একটা ক্ষুদ্রাকার কণা। তাকে আবার ভয় কিসের! আবার ধরলেও জয় তো করবোই। মনে হয় যেন, প্রতিটা মানুষই নিশ্চিত হয়ে গেছে যে, করোনা ধরলেও আমি মরব না। হ্যাঁ, এই সাহস থাকাটা ভাল। কিন্তু আরে বেকুব, সাবধান তো থাকতে হবে। 

সংক্রমণ ধরা পড়ার ১০৩ দিনের মাথায় আক্রান্ত লক্ষাধিক। এরই মধ্যে মারা গেছেন প্রায় সাড়ে ১৩’শ। সংক্রমণের দিক থেকে বিশ্বে চীন, কানাডাকে পিছনে ফেলে আমরা এখন ১৭তম অবস্থানে আছি। শুনতে কেমন লাগছে। ভালো না? ভালোই তো লাগার কথা! আমরা তো এসব দেশকে ছাড়িয়েই যেতে যাই। সেটা হয়তো উন্নয়নে। চিন্তা ছিল উন্নয়নে। কিন্তু সে মোতাবেক পরিকল্পনা কিংবা বাস্তবায়ন কোনটাই করিনি। ফলে উল্টোটাই তো হবে। তাই না? 

ধরুন, আপনার হাতে সময় আছে এক ঘন্টা। এর সময়ের মধ্যে আপনাকে ১০ কিলোমিটার যেতে হবে। কিন্তু এর জন্য আপনার একটা বাহন দরকার। সেটা হতে পারে মোটর বাইক, প্রাইভেট কার, পাবলিক বাস, বাইসাইকেল কিংবা প্লেন। কিন্তু এসবের কোনটাতেই যাবার আপনার সামর্থ নাই। ফলে আপনি পায়ে হেঁটে রওয়ানা দিলেন। আবার আপনার শরীরের কলকব্জাও ঠিক নাই। ফলে আপনি দ্রুত হাঁটতেও পারছেন না। দৌড়াতে গিয়ে হাঁপিয়ে পা জড়িয়ে পড়ে গেলেন। এমনকি, অক্কা পেলেন। তাহলে কি দাঁড়াল? আপনার কোন প্রস্তুতিই ছিল না। কিন্তু আপনি ঘন্টায় ১০ কিলোমিটার অতিক্রম করার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। অবশেষে কি হলো? সব শেষ! 

পাঠক, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন উদাহরণটা কিসের জন্য দিলাম। ফলে এখন হা-হুতাশ করে খুব একটা লাভ নেই। শুধু হাই-ইমিউনিটির কথাই ভাবতে হবে। আর ফেসবুকের ওয়ালে মোটা হরফে লিখতে হবে, আল্লাহ তুমি সহায় হও। আবার এ কথাও তো মনে রাখা চাই- আল্লাহ কোরআনে বলেছেন "কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মাওত"। অর্থাৎ- নিশ্চয়ই প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর এটার জন্য আল্লাহ প্রস্তুতিও নিতে বলেছেন। প্রত্যেক প্রাণীর জন্মই হয়েছে মরার জন্য। অর্থাৎ মৃত্যু অবধারিত। ফলে প্রস্তুত থাকুন। তবে করোনাতে নয়। স্বাভাবিক মৃত্যুই কাম্য। 

এখন পর্যন্ত যে সংক্রমণের হার, সেটা এ রকম- নমূনা পরীক্ষা আর সংক্রমণের অনুপাতে ২২ শতাংশ। সে হিসাবে ১৮ কোটি জনগণের মধ্যে ৩ কোটির মতো করোনা পজিটিভ হওয়ার আশংকা! আর মৃত্যুর হার ১.৩৪ শতাংশ! এ হিসাবে প্রায় ৪ লাখ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা! হিসাব দেখে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নাই। সাবধান হোন। এক সময় মারা যেত দূর দেশে। তারপর মারা গেছে নিজ দেশে। এরপর দূরাত্মীয়। এখন নিকটাত্মীয়। হয়তো কদিন পর পরিবারের কেউ। অতএব সিরিয়াস হোন। নিজেকে রক্ষা করুন। নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান। 
 
অর্থনীতি বাঁচাতে আর পোশাক খাতের ক্রয়াদেশ ধরে রাখতে আমরা বেছে নিয়েছি হার্ড ইমিউনিটি গ্রো করার পথ। হয়তো হচ্ছেও সেটা। কেননা সংক্রমণের তুলনায় মৃত্যু এখনো কম। কিন্তু জীবনের চেয়ে অর্থনীতিই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

করোনার এই ক্রান্তিলগ্নেও থেমে নেই জীবন৷ থেমে থাকারও কথা নয়। তাহলে তো বিশ্বই থেমে যাবে। থমকে যেতে পারে, থেমে যাওয়া নয়। সেটাই ঘটছে নানা জায়গায়। বাবাকে রোগী সাজিয়ে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছেলে বিয়ে করতে যাচ্ছে! কারণ আমরা ক্ষমতাশালী। আমরা অধিক শক্তিশালী! কিন্তু দেখুন, আপনার শক্তি কোথায় আর ভাইরাসের শক্তি কোথায়?

মেডিকেল সাইন্স বলছে, একটা ভাইরাসের ওজন ০.৮৫ এট্টোগ্রাম। ১ এট্টোগ্রাম = ০.৮৫ ঈ ১০ টু দ্য পাওয়ার - ১৮ গ্রাম (মাইনাস ১৮)। সহজ করে বললে- ১টা ভাইরাসের ওজন হলো ১ গ্রামের এক ট্রিলিয়ন ভাগের এক ভাগের দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ। একজন মানুষকে অসুস্থ করতে ৭০ বিলিয়ন ভাইরাসের প্রয়োজন। আর সেটা মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ভাইরাসটি করতে সক্ষম। আর এই ৭০ বিলিয়ন ভাইরাসের ওজন ০.০০০০০০৫ গ্রাম। 

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৫ লাখের কাছাকাছি। মারা গেছেন সাড়ে চার লাখের বেশি। তাহলে বিশ্বের সমস্ত আক্রান্তদের দেহে সমস্ত ভাইরাসের মোট ওজন প্রায় ১ গ্রাম। ১ ফোঁটা বিশুদ্ধ পানির ওজন ১ গ্রাম। এতো উন্নত মানব সভ্যতা মাত্র ১ ফোঁটা পানির সমপরিমাণ ভাইরাসের কারণে হাঁটু ভেঙ্গে পড়ে গেছে!! নিরুপায় হয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। ঝাঁকে ঝাঁকে মারা যাচ্ছে। হাজার বছরের মেডিকেল সাইন্স ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে।

এরপরেও কি আমরা নিজেদের অনেক বুদ্ধিমান, ক্ষমতাবান মনে করতে পারি? নিজেদের বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান, অর্থ-সম্পদ, সৌন্দর্য কোনো কিছু নিয়ে অহংকার করতে পারি? হুঁশ ফিরে আসুক অসহায় মানুষের। মানুষের আসলেই কোন ক্ষমতাই নেই। আছে শুধুই অহংকার। যেটা তার থাকার কথা নয়। সেটার মালিক শুধুই সৃষ্টিকর্তা।

লেখক- সাংবাদিক।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি