ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

পুরুষের জীবন গাধা কুকুর বানরের মতো!

বেলায়েত বাবলু

প্রকাশিত : ১৩:২৩, ২০ জুন ২০২০

বেলায়েত বাবলু

বেলায়েত বাবলু

যৌথ পরিবারে বসবাসের রীতি এখন সেকেলে’র ধারনায় পরিণত হয়েছে। আজকাল যৌথ পরিবার খুঁজে পাওয়া আর অনাবিল সুখ হাতের মুঠোয় পাওয়া প্রায় একই কথা। আজকাল মা-বাবা সন্তানদের কাছে অনেকটা বোঝার মতো। বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের করুণ পরিণতি দেখতে পেয়ে নিজের মধ্যেও একই ভাবনা উকি দেয়, বেঁচে থাকলে আমার অবস্থাও একই রকম হবে কিনা। 

কিছুদিন আগে আমার শ্রদ্ধেয় এক গুণীজনের কাছ থেকে পাওয়া একটি লেখা পড়ে এ ভাবনা আরো বেড়েছে। তাঁর লেখার সারাংশটা হচ্ছে এরকম যে, শেষ বয়সে গিয়ে পুরুষ মানুষ তিনটি প্রাণীর ন্যায় জীবনযাপন করে। ওই লেখাটি পড়ে দেখা যায় ছেলেরা, পুরুষ মানুষ হিসেবে বাঁচে ২০ বছর, পরের ৩০ বছর গাধার মত সংসারের বোঝা টানে! তার পরের ১৫ বছর ছেলে-মেয়ে যা দেয় তাই খেয়ে-পরে বেঁচে থাকে কুকুরের মত! আর তারও পরের দশ বছর বানরের মত, কখনো এ সন্তানের বাসা, তো কখনো আরেক সন্তানের বাসায় ঘুরে আর নাতি নাতনিরে বিনোদন দেয়াই হয় তাদের প্রধান দায়িত্ব! 

আসলে বিষয়টি যদি একটু ভালোভাবে ভেবে দেখি, তাহলে এটাই চরম সত্য বলে মনে হবে। কেননা, একজন পুরুষ সত্যিকার অর্থে মানুষ হিসেবে মাত্র ২০ বছরই বেঁচে থাকে। নিরীহ প্রাণী গাধা বাঁচে ত্রিশ বছর। একজন পুরুষও তার যৌবন কালের পরবর্তী ত্রিশ বছর গাধার মতোই সংসারের বোঝা টানে। অপরদিকে প্রভূভক্ত কুকুর বাঁচে ১৫ বছর। একজন পুরুষ গাধার মতো ত্রিশ বছর সংসারের বোঝা টানার পরের ১৫ বছর কুকুরের মতোই জীবনযাপন করে। অর্থাৎ ওই সময়টাতে তার পুরো নির্ভরতা আসে সন্তানদের ওপর। কুকুরের যেমন তার প্রভূর ওপর। সন্তানরা  ওই সময়টাতে তারা যা দেয় তাই খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে হয় অনেকটা কুকুরের মতোই। 

আর বানর বাঁচে দশ বছর। বেঁচে থাকার সময়টাতে ওরা এ গাছ থেকে ওই গাছে লাফিয়ে লাফিয়ে চলাচলের পাশাপাশি মানব জাতিকে বিনোদন দিয়ে থাকে। তেমনি গাধার মতো ৩০ বছর আর কুকুরের মতো ১৫ বছর কাটিয়ে দেয়া লোকটিকে শেষ দশ বছর বানরের মতো আজ এ সন্তানের বাসায় তো পরের দিন আরেক সন্তানের বাসায় গিয়ে বাধ্য হয়ে থাকতে হয়। আর ঘুরে ঘুরে নাতি-নাতনিদের বিনোদন দিতে হয় ঠিক বানরের মতোই।  

আসলে আজকে যদি আমরা সংসার জীবনের দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে বাস্তবতা হয়তো এর চেয়ে আরো ভয়ংকর। কারণ এমনো পুরুষ মানুষ আছেন যারা শেষ বয়সে গাধা, কুকুর ও বানরের মতো করেও জীবনযাপন করার সুযোগ পায়না। গাধার মতো ত্রিশটি বছর সংসারের বোঝা বহন করা মানুষটিকে শেষ পর্যন্ত তাঁর সন্তানেরা বোঝা মনে করে তাঁকে প্রভূভক্ত কুকুরের মতোও সংসারে ঠাঁই দিতে রাজি হয়না। শেষ বয়সে বানরের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে তাঁর আর কোন সন্তানের বাড়ি থাকা হয়না। নাতি-নাতনীদের দেখার সুযোগও হয়না। তাঁর ঠাঁই হয় কোন এক আশ্রমে। যাদের জন্য জীবনের সব সুখ বিসর্জন দেয়া তারাই তাদের পিতাকে গাধা, কুকুর কিংবা বানরের মতোও মূল্যায়ন না করে তাঁর সমস্ত ত্যাগকে অস্বীকার করে। নিজেদের সুখের কথা চিন্তা করে তারা পিতাকে অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দেয়। 

আহ্বান থাকবে, বৃদ্ধ বয়সে আপনার আমার পরিণতি আরো ভয়াবহ হতে পারে এটা মাথায় নিয়ে এখন থেকেই আমরা যেন নিজেদের শুধরাই।

লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি