সব বাবাই শ্রেষ্ঠ বাবা!
প্রকাশিত : ১৪:৫০, ২১ জুন ২০২০
আমার বাবার কোন ছবি নেই আমাদের কাছে। কিন্তু তিনি আমাদের মন মগজে গেঁথে আছেন। থাকবেন আজীবন। বাবার কাছ থেকেই প্রথম পড়েছিলাম মদন মোহন তর্কালঙ্কারে শিশু শিক্ষা বইয়ে, অ আ ই ঈ। তাঁর হাত ধরেই স্কুলে গেছি প্রথম। বাবার একটা গুণ সব সময় আমাকে মুগ্ধ করে। তিনি কখনোই আমার মাকে বকা দিতেন না। বাইরে থেকে এসে জামাটা খুলে মায়ের হাতে দিতেন। মা আজ বয়সের ভারে আর বাবার শোকে মুহ্য। তারপরও শুকরিয়া মা ভাল আছেন।
৯২/৯৩ সালের কথা। একটা রেডলিফ কলম কিনতে চেয়েছিলাম। বাবা বললেন- এটা তো দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা। এটায় ভাল করলে বার্ষিক পরীক্ষার সময় কিনে দেব। সে সময় এই কলমটা খুব লোভনীয় ছিল। স্কুলের স্যারেরা ব্যবহার করতেন সাইন করার জন্য।
আমাদের বাংলা ব্যাকরণ পড়াতেন ক্ষিরোদ স্যার। ঐ স্যারের কাছে দেখতাম কলমটা সব সময়। বাবার কথা মতো পরীক্ষায় তৃতীয় হলাম। প্রথম হলো বর্ণালী (এখন কোথায় আছে জানি না)। বাবা কলমও কিনে দিলেন। কিন্তু পরের বছর সে স্থান হারিয়ে সপ্তম হলাম। আমার স্থানে চলে এল লুনা রানী। এখন সে গৃহিনী। বাবা শোনার পর বললেন- তুমি খালি মেয়েদের কাছে হেরে যাও। তাদের সাথেই প্রতিযোগিতা। এটা ভাল। শত্রু হবে কম।
বাবার দেয়া সে কলমটা খুব যত্ব করে রাখতাম। লিখতাম খুব কম। লেখার জন্য ইকনো-ডিএক্স কলম ব্যবহার করতাম। বাড়িতে একটা কাচারি ঘর ছিল। আমরা সেটাকে বৈঠক ঘর বললাম। সেখানে একটা চৌকি ছিল। আমি আর বড় ভাই সেখানেই ঘুমাতাম। বাবার দেয়া কলমটা হঠাৎই হারিয়ে ফেলি '৯৯ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর। বাবা এবং ঐ কলম দুটোকেই খুব মিস করি। কিন্তু বাবার ঐ কথাটা সব সময় মনে পড়ে।
বিয়ে করেছি ২০১০ সালে। অক্টোবর মাসে। প্রেমারেঞ্জ বিয়ে। তিন মাসের চেনাজানা আর প্রেম। তারপর বিয়ে। সম্পর্কের শুরুতে প্রথম যে দিন ফোন করি মুন্নীকে (বর্তমানে স্ত্রী) সেদিন বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১০ আসরের ব্রাজিলের খেলা ছিল। ফোনের সিম বদলে মুন্নীকে ফোন দেব বলে খেলা দেখতে বসি। ম্যাচ শেষে হলো। হঠাৎ মনে হলো, আহা! ফোন তো দেয়া হল না। এরপর যখন ফোন দিলাম। মুন্নী ফোন ধরে বলল- এই আপনার সিম পাল্টানো। কোন কথা বলতে পারিনি। শুধু বললাম- কাল সকাল ১০টায় খামারবাড়ি থাকবো। পরদিন সকালে যথারীতি লেট। দূর থেকে আমাকে দৌড়াতে দেখে মুন্নী মুচকি হাসল। কাছে এসে স্যরি বললাম। আবারো হেরে গেলাম। যাক গে...।
এখন তো ২০২০ সাল। আজ বাবা দিবস। গত বছর এই দিনটা ছিল ১৬ জুন। সেদিন আমি দ্বিতীয় বার বাবা হই। আমাদের কোলে আসে ছোট ছেলে কাব্য। আজ ওর বয়স ১ বছর ৪ দিন। দুই ছেলের দেখাশোনা, বড় ছেলের স্কুল, পরিবার, নিজের স্কুল। সবই সামলান মুন্নী। আমি শুধু ঢপের বাক্স। সারা জীবন হেরে থাকতে চাই, বাবার সেই কথাই। কিন্তু পারি না। আমার দুই ছেলে আমাকে জিতিয়ে দেয়। তারা আমাকে পেলে মাকে ভুলে যায়। তাই মুন্নী মাঝে মাঝে বলে, ‘তোমার মতো বাবা আর বোধ হয় একটাও নেই। ছেলেদের জাদু করে রাখো সব সময়!’
আজ বাবা দিবস। কিন্তু আমি বলি- প্রতিদিনই বাবা দিবস। তাই বৃদ্ধ বাবা-মাকে ভালোবাসুন সন্তানের মতো। আগলে রাখুন শিশুর মতো। শান্ত হোক পৃথিবী। দূরে যাক প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস।
এনএস/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।