শহিদ সাহেদ কাণ্ডে আপনি কি লজ্জিত?
প্রকাশিত : ১০:০৮, ১০ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১২:১২, ১২ জুলাই ২০২০
“নামের বড়াই করো না’কো, নাম দিয়ে কি হয়! নামের মাঝে পাবে না’কো, আসল পরিচয়।” -এটি একটি জনপ্রিয় গান। গানের কথাগুলো অসত্য প্রমাণ করেছেন শহিদ আর সাহেদ। একজন এসএসসি পাশ, আরেকজন অবশ্য স্নাতক ডিগ্রাধীরা। শহিদ নিজে এমপি, তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামও এমপি। বাহ! কি দারুণ ব্যাপার, তাই না? স্বামী-স্ত্রী দুজনেই আইন প্রণেতা! কিন্তু সেই আইন প্রণেতা হয়েও পাপুল একজন মানবপাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে এখন ভিন দেশের কারাগারে বন্দী। এক দেশের আইন প্রণেতা আরেক দেশের আইনের চোখে অপরাধী। এটা কি লজ্জা! নাকি দেশের বারোটা বাজানো? ঠিক ঠাহর করতে পারছি না।
সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুল আর রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ যা করেছেন, তাতে কার কি লাভ আর লোকসান হয়েছে সেটার হিসাব করার দরকার নেই। কিন্তু এই দুজনই যে দেশের বারোটা বাজিয়েছেন এতে কোন সন্দেহ নাই। দুজনের নামেও কিন্তু দারুণ মিল আছে, শহিদ আর সাহেদ। কাজেও তেমনি ব্যাপক মিল। একজন আইন প্রণেতা হয়ে মানবপাচারের মত ঘৃণ্য অপরাধের হোতা। আর একজন মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছেন নির্মম খেলা। যার বলি এখন সোনার বাংলাদেশ। এ রকম দু’এক পিছ থাকলে সারাবিশ্বের কাছে দেশের বারোটা বাজাতে বেশি কিছু লাগে না এবং সেটাই সুসম্পন্ন হয়েছে।
পাপুলের জন্য কুয়েতসহ সারাবিশ্বের বাংলাদেশি প্রবাসীরা এখন সংকটে। আর সাহেদ কাণ্ডে পুরো ইউরোপ জুড়ে বাংলাদেশিদের দরজা বন্ধের উপক্রম। এদের কর্মকাণ্ডে আপনি কি লজ্জিত? আমি কিন্তু মোটেও লজ্জিত নই। বরং আমি ক্ষুব্ধ, মর্মাহত, হতাশ। একই সঙ্গে আমি আশাবাদীও বটে। কেননা আমি সবকিছুকেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করি। শহিদ আর সাহেদ তো মাত্র দুজনই নন। এদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় যারা দিয়েছেন, নি:সন্দেহে তারা বহুত ক্ষমতাধর আর প্রভাবশালী। ফলে তাদের শুধরানোর একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এখানে একটা অবাক করা বিষয় হলো- রিজেন্ট হাসপাতালের নাকি অনুমোদনই নাই। তাদের লাইসেন্স হলো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের। আর এই লাইসেন্স নিয়েই ছয় বছর ধরে চালিয়ে গেছে হাসপাতাল ব্যবসা। আহা! আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর! এদের ঘুম ভাঙবে কবে? নাকি ভাঙবেই না! এমন অনুমোদনহীন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য সরকার তাদের সাথে এমওইউও করেছে। কি অদ্ভূত! সংশ্লিষ্টদের কতটা দেউলিয়াত্বের প্রকাশ এটা। শুধু তাই নয় রিজেন্ট হাসপাতাল বন্ধের যে নোটিশটি জারি করা হয়েছে, সেই ছয় লাইনের একটি প্রজ্ঞাপনে চারটি ভুল। এমনকি যে আইনের (অর্ডিনেন্স) ক্ষমতাবলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে সেটা পর্যন্ত ভুল লেখা হয়েছে। এতেই কি প্রমাণ হয় না যে, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা কী খাওয়ার কথা আর কী খান! তারা কী করার কথা আর কি করেন! আপত দৃষ্টিতে তো মনেই হয় না যে তাদের ঘুম এখনো ভেঙেছে।
শহিদ দেশ থেকে মানবপাচার করেছে। তার যেমন প্রমাণের অভাব নেই। সাহেদ যে অন্যায় আর ভয়াবহ অপরাধ করেছে তারও কিন্তু হাজারটা প্রমাণ ইতিমধ্যে চোখের সামনে এসেছে। এরপরও তাদের কি শাস্তি হবে, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে সেটা হয়তো অনুমান করা যায়। আর এ দুইজনকে নিয়ে আলোচনাই বা কতদিন চলবে সেটাও চোখ বন্ধ করে আন্দাজ করা যায়। একজন কোন রকম অনুমোদন না নিয়েই হাসপাতালের কার্যক্রম চালায়। সে হাসাপাতাল আবার কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করে ভূয়া করোনা সার্টিফিকেট সরবরাহ করে। যারা সেই সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশ গেছেন, তারা দেশটাকে কোথায় নামালেন। ফলে শহিদ আর সাহেদ কি শুধুই অপরাধী, নাকি মহা অপরাধী? তাদের কি একবার শাস্তি হলেই চলবে, নাকি ডাবল ট্রিপল শাস্তি হতে হবে।
তারপরও কি দেশের ভাবমূর্তি উদ্ধার করা সম্ভব হবে? নিশ্চয়ই নয়। ফলে এদের যারা আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে বছরের পর বছর, তাদেরকে কেন ধরা হবে না? সবকিছুর মূলে যেতে না পারলে কাজের কাজ তো কিছুই হবে না। এক পাপুল জেল খাটবে। কয় বছর পর আবার বেরুবে। আবারো একই কাজ করবে। এই সাহেদই তো মাত্র ১০ বছর আগে জেলও খেটেছে চেক জালিয়াতির মামলায়। তারপর কি তার অবনতি হয়েছে নাকি উন্নতি। নিশ্চয়ই তার নিজ কর্মের উন্নতিই হয়েছে। ফলে শুধু অপরাধীকে নয় অপরাধ ও অপরাধীর প্রশ্রয় দাতারও কঠোর শাস্তি বিধান হওয়া উচিত। নয়তো এমন সাহেদ, শহিদ আরো জন্মাবে।
এই সাহেদ যে কিনা জেল থেকে বেরিয়ে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মূখার্জীর বেডরুম, আর এলকে আদভানীর ড্রয়িং রুম, বাংলাদেশের বঙ্গভবন থেকে সেনা ভবন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। যে কিনা সবাইকে বোকা বানিয়ে টিভি টকশোর জনপ্রিয় টকারে পরিণত হতে পারে। তার পক্ষে করোনার ভূয়া সার্টিফিকেট দেওয়া তো অতি সহজ কাজই বটে। তার তো দেশই বিকিয়ে দেওয়ার কথা। আর পাপলুর তো অন্য কোন দেশই কিনে নেওয়ার কথা। ফলে এদের যারা তৈরি করেছেন তাদেরকে ধরুন। নয়তো এর চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। এদের এহেন কাণ্ডে শুধু শুধু লজ্জা না পেয়ে অপরাধের সঠিক বিচার করুন। দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।
এমবি//
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।