‘মধুমা’ এক পাহাড়ি মায়ের গল্প
প্রকাশিত : ১৭:০৮, ২ আগস্ট ২০২০
দিঘীনালা- লংগদুর পাকা সড়ক ধরে বেশ কয়েক কিলোমিটার এগুলো আদ্রক ছড়া গ্রামের দেখা মিলবে। এখানে এসে আপনি যদি কাউকে জিগ্যেস করেন, ‘আচ্ছা দাদা সুভাষীনি চাকমার বাড়ি কোনটা’ তারা আপনার দিকে অবাক দৃষ্টি দিয়ে তাকাবে, এটা আবার কে? আপনি যদি তার পুত্রের নাম বলেন, অমনি আপনি দিক নির্দেশনাটি পেয়ে যাবেন।
সবাই তাকে ডাকে ‘মধুমা’ বলে যা ‘মধুর মা’র সংক্ষেপরূপ। ষাটোর্ধ এই পাহাড়ি মা সময়ের বিবর্তনে তার পিতার দেওয়া নামটি হারিয়ে ফেলেছে ‘মধু’ নামের একমাত্র ছেলের মা বলে।
মায়ের কি আর আলাদা নাম হয়?
প্রথম সন্তানের নামের মাঝে মায়ের নামটি যে কখন বিলিন হয়ে যায় পরিবারের স্বজন তো বটেই মায়েরা নিজেরাও তা টের পায় না।
হাড্ডিসার মধুমাকে দেখতাম প্রায় সারাদিন একটা বাশেঁর কন্চি হাতে পাহাড়ের এধারে-ওধারে ঘুরে বেড়াতো তার লাল রংয়ের দুটো গরুকে শাষণ করতে, পালা শুকর ছানাগুলোকে ডেরায় তাড়াতো।
আমি আমার বাশেঁর ছাউনি ঘেরা ঘরে বসে তার সারাদিনের কর্মকাণ্ডগুলো লক্ষ্য করতাম। সারাদিনই তার পোষা প্রাণীগুলোর দিকে ছুড়েঁ দেওয়া খিস্তী-খেউরগুলো শোনা যেত: ‘ও মগদা শুয়োর হাট হাট, ও মগদা গরু সিদু ন যেই’।
মধুমা’র মুখ নিশ্রিত অদ্ভুত সব শব্দ, ধ্বনি আর গরুর গলার ঘণ্টী বাশেঁর কন্চি দিয়ে কোন কিছুতে আঘাতের মৃদু শব্দ আর মধ্য দুপুরের নির্জনতা মিলে তৈরি করতো এক অদ্ভুত দোতনা।
আমরা যখন দুপুরে ঘরের শীতল ছায়ার আশ্রয়ে মধুমা তখন কড়া রোদে এ টীলা ঐ টীলায় চষে বেড়াতো তার শীর্ণ দেহখানি নিয়ে। মাঝে মাঝে আমার ক্যাম্পের সীমানায় গড়ে ওঠা পুরনো একটি কামরাঙা গাছের তলে বসে জিরাতো।
মধুমার পরনে থাকতো নিজের হাতে বুনান ‘পিনন’। তার উর্ধাঙ্গ ঢাকার জন্য একটা ছোট গামছার বেশি বরাদ্দ থাকতো না। একটা হলুদ রংয়ের ব্লাউজ ছিলো তার। ওটাকে সে ‘ফ্রন্ট ওপেন’ শার্টের মতো পরতো। নিজের আব্রু ঢাকার জন্য এর চেয়ে বেশি কিছুর প্রয়োজন আছে বলে মনে করতো না।
আমার ক্যাম্পের বহিঃ সীমানায় তার ছিল অবাধ যাতায়াত। আমাদের দেওয়া নিরাপওা সীমানা ‘Line of Control’ মধুমা অবলীলায় অতিক্রম করে যেতে। পুরাতন প্রহরীরা তার এই স্ব-অর্জিত স্বাধীনতা নিরবে মেনে নিতো। কিন্তু গোল বাধতো নতুন কোন প্রহরী এলে । ‘রে রে রে’ করে তেড়ে আসা প্রহরীদের সাথে বেধে যেত ‘স্বর-সংগ্রাম’।
প্রথমবার যখন তাকে দেখি তখন তাকে আমার মনে হয়েছিলো বইয়ের মলাট ছেড়ে বেরিয়ে আসা কোন এক ‘মহাশ্বেতা’ দেবী।
মধুমা’র বাড়িটি ছিল আমার ক্যাম্প লাগোয়া ছোট একটি টীলার পর। তার টীলা আর ক্যাম্পের টীলার মাঝে সরু একটি ছড়া। ওটাই তার বাড়ি আর সেনা ক্যাম্পের ‘আন্তঃ দেশীয় সীমানা’।
এক সময় ক্যাম্পের টীলায় ছিল তার স্বামীর ভিটে।
নিরাপত্তার জন্য চাই উঁচু পাহাড়। তাই আশির দশকের উত্তামাল সময়ে মধুমা’র উঁচু ঘরটা সেনা নিরাপত্তার প্রয়োজনেই অপেক্ষাকৃত এই নীচু টীলায় স্থানান্তির হয়।
তার স্বামীর শেষ নিঃশ্বাসের জায়গাটিই এখন আমার থাকার ঘর। টীলার নীচে ছড়ার পাশেই স্বামীর শেষ দাহ হয়। এই ছড়ার পানিতেই মিশে আছে প্রিয় স্বামীর দেহভস্ম।
নতুন এই ক্যাম্পটার নামকরণ হয় : ‘ডানে আদ্রকছড়া আর্মি ক্যাম্প’। জোনের সব চেয়ে দূরবর্তী এই ক্যাম্পে ‘বদলি’ হতো ‘ও এস ডি’ টাইপের তরুণ তুর্কীরা।
নিরাপত্তার কারণ ছাড়াও আরেকটি কারণে স্থানটি আদর্শ বিবেচিত হয় : ‘Away from habitation’ অর্থাৎ জনবসতি থেকে দূরে। কিন্তু পাড়ার ২০/৩০ ঘরের বাসিন্দারা একটু ক্যাম্প ঘেষা নিরাপত্তা বলয়ে থাকতে বেশি স্বাছ্যন্দবোধ করত।
এর কারণ স্বগোত্রীয় শান্তি বাহিনী এবং সেনাবাহিনী দুটোর ‘উৎপাত’ থেকেই রক্ষা পাওয়া।
শুধু মানুষের কথা বলি কেন, ক্যাম্পের একে বারে অন্দরমহলে বাসা বেধেছে দুই প্লাটুনেরও অধিক বাবুই পাখি। সারা দিন পাখিগুলোর আনা -গোনা আর ঘর- গৃহস্থালি দেখে আমাদের দিন কাটে।
মধুমা’র আপওিটা ওখানেই: ওরা ক্যাম্পের আশ্রয়ে থেকে মধুমা’র জমির ধান খেয়ে ফেলছে। ওদের তাড়াতে হবে। ওরা কেন আর্মিকে ভয় করে না। ওর বিশ্বাস আমরা চাইলেই এই বাবুই পাখির ক্যাম্প উৎখাত হবে।
মধুমা’র দ্বিতীয় আপত্তি ওর ছেলেকে আমরা পোর্টার (যা কিনা আজকের দিনে কুরিয়ার সার্ভিস) হিসাবে যে বেতন দেই তা সে ‘দারু’ খেয়ে উড়িয়ে দেয়। ওকে যেন শাসন করি। তবে একমাত্র ছেলে তো, উপায়টা সে নিজেই বাতলে দেয় : ‘দারু মাস্টার’ (চিকিৎসা সহকারী) এর কাছে শুনেছি অনেক ঔষধ থাকে ‘তার কাছে কি দারু আগে, যিহান খেলে নেশা কাডিবো’ ‘আমি বলি, তুমিই তো জুমের নতুন চাল দিয়ে ওকে দারু বানিয়ে দিবে।’
মধুমা তার স্ব-বিরোধীতাকে মেনে নিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে, ‘মূই না হেলে কোনে খাওয়াইবে’। ছেলে ‘মধুকে নিয়ে মধুমার অষ্ট প্রহর চিন্তা- কখন জানি মধু শান্তি বাহিনীর রোষানলে পরে। কারণ: মধু যে ক্যাম্পের বিশ্বস্ত বার্তা বাহক।
মধুমার পাড়ায় ‘বৈদ্য’ বা কবিরাজ বা ‘হারবাল’ বিশেষজ্ঞ বলে সুনাম ছিল। কোন মেয়ের কান ফোঁড়ানোর পর জ্বর এসেছে, তো মধুমা জানে কোন থানকুঁড়ি পাতার রসে তার উপশম হবে। কারো পেটে অম্ল হয়েছে তো মধুমা জানে কোন গাছের শিকড় চিবালে তা দূর হবে। বা কাউকে মৌমাছিতে হূল ফুটিয়েছে তা মধুমার বানানো কাচাঁ হলুদের টোটকায় নিমিষে ভালো হতো।
ক্যাম্পের অন্য সবার থেকে ‘দারু মাস্টার’ কর্পোরাল জহিরকে তার বেশি পছন্দ। মাঝে মাঝে তাকে দেখতাম ঐ কামরাঙ্গা গাছটার নীচে বসে জহির তার সাথে নিগূঢ় আলোচনায় ব্যস্ত। হাতের কব্জি ধরে মধুমার হৃদ স্পন্দের সংখ্যা বা বুকে পিঠে স্টেথোস্কোপ দিয়ে হৃদযন্ত্রের গতি বোঝার চেষ্টা করতো। আমাদের ক্যাম্পটা পাড়ার লোকের জন্য ছিল ‘ডি ফ্যাকটো হেলথ কেয়ার সেন্টার’।
দারু মাস্টার জহিরকে যথাযথ সম্মানী দিতে ভুলতো না মধুমা। কোঁচড়ে লুকানো ডাঁসা পেয়ারা বা শসাগুলো অবলীলায় স্থান পরিবর্তন করে জহিরের প্যান্টের পকেটে ঢুকে যেত।
বছর ঘুরে এলো বৈসাবী। দূরের পাহাড়গুলো পুড়ছে। নতুন বছরের জন্য জুমের পাহাড় তৈরি হচ্ছে। গাছে এসেছে নতুন পাতা। সেবার বৈসাবী উপলক্ষে তাকে দেওয়া হলো একসেট কাপড়, ‘ভগবান তোমার মঙ্গল করুক’। দুই হাতে জড়িয়ে ধরে মাতৃত্বের ছোঁয়ায় সকলকে ভাসিয়ে দিলো।
চৈত্র সংক্রান্তির দিনে এক বিকেলে ‘গোল ঘরে’ বসে অলস সময় পার করছি। এ সময় দেখি আমাদের দূর্গ বেষ্টনী পার হয়ে এগিয়ে আসছে মধুমা সাথে মধু। মধুমার হাতে কয়েকটি বাটি। মধুর হাতে ওর বাড়ির আঙ্গিনায় বেড়ে উঠা গাছের পেঁপে, এককাদী চাপাঁ কলা। মধু আজ খুব ফুরফুরে মেজাজে।
‘দারু পিয়ে’? আজ গিলেছে বেশ। গাল ভরা পানের রসে দুপ্রান্ত ভেসে যাচ্ছে। গোল ঘরের বাঁশ দিয়ে বানানো টেবিলে ওদের উপহার সামগ্রী রেখে ওপাশে বসলো। আমি ভাবলাম বৈসাবীর উপহার আমার জন্য।
‘এসব কি আমার জন্য?’, প্রশ্ন ছুঁড়ে দেই। মধু খুব উৎসাহের সাথে বলে, ‘স্যার আজ বিজুর দিন। তোমাকে এসব খেতে হবে’।
আমি প্রমাদ গুনলাম। পাহাড়ি খাবারের রেসিপিতে ‘নাপ্পি’ অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান। আর শুনেছি নাপ্পি তৈরি হয় ছোট সাপ, ব্যাঙ, কুঁচে, শামুক, মাছসহ নানা উপাদানে।
আমার বিস্ময়ের ঘোর কাটার আগেই ঢাকনা উঠিয়ে একটি বাটি আমার সামনে তুলে ধরে। নতুন চালে পায়েস জাতীয় কিছু। সাথে হারবাল টাইপের লতাপাতা মিশ্রিত। অন্য একটি পাত্রেও নানা ব্যান্জনের সমাহার।
সামনে ভয়াবহ বিপদ। মধুমা আমাকে নিজ হাতে খাওয়াবে। এতো দেখছি শান্তি বাহিনীর সাথে মুখোমুখি এনকাউন্টারের চেয়ে বেশি ভয়ংকর। মনে হলো সব খাবারের মধ্যেই ‘নাপ্পি’ মানে সাপব্যাঙের প্রতিচ্ছবি।
আমার ইতঃস্থতা দেখে মধু ও এগিয়ে এলো মাকে সাহায্য করতে। আমি ‘এখন না পরে খাবো, এখন ক্ষুধা নেই’ বলে যতটাই এড়িয়ে যেতে চাই ততটাই চেপে ধরছে।
অবস্থাটা ঠিক লর্ড মাউন্টব্যাটনের মতো- গান্ধিজী গেছেন দিল্লিতে ভাইসরয় হাউসে তার সাথে দেখা করতে - আসন্ন দেশভাগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ন আলোচনা হবে। গান্ধিজী সাথে নিলেন তার পালিত ছাগীর দুধ দিয়ে তৈরী ‘ছাগদধী’। পেটের নানা বালামুসিবতে তা মহার্ঘ। এটা গান্ধির প্রতিদিনের মেনু। গান্ধি লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে দেখাতে চেয়েছিলেন মহান ভারতের ঐতিহ্য।
তো ‘লর্ড অফ দি সি’ ঐরকম ‘সাদা বিদঘুটে’ বস্তটির স্বাদ নিতে মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। পাশে দাঁড়ানো এডিসি'র বুদ্ধিমওায় সে যাএায় বেঁচে যান ভারতের শেষ ভাইসরয়।
মধুমার সঙ্গে লেখক নাসিম হোসেন
আমাকেও মা-পুত্রের স্নেহের ‘এনকাউন্টার’ থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে ‘দারু মাস্টর’ জহির।
‘স্যার আজকে রোজা আছে’, সন্ধায় খাবে।
ওরা একটু নিবৃত হলো আমি হাফ ছাড়লাম।
মধুমা জানতে চায়, ‘এটা কিসের রোজা’?
জহিরের চটজলদি জবাব, এটা মহররমের রোজা।
ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে দেখি আজ শাবান মাসের ৯ তারিখ। মহরম মাস তো গত হয়েছে অনেক আগে। মনে মনে দারু মাস্টর’র প্রশংসা না করে পারলাম না। আরবি মাসের ক্রম বিন্যাস আমরাই তো জানি, না মধুমা কেমন করে জানবে।
মধুমাকে কড়া মিস্টির দুধ-চা খাইয়ে বিদায় করি।
ওরা চলে যেতেই রানার সব খাবার নিয়ে আমার দরজায় হাজির হয়,
স্যার, এগুলো কি করবো?
কিছু না ভেবেই তড়িৎ জবাব দিই, ‘ফেলে দাও’। রানার একটু ইতঃস্থত করে, ‘সবই’?
‘হ্যাঁ’-আমার ছোট উত্তর।
অতঃপর ফেলে দেওয়া খাবার গুলো ক্যাম্পের কুকুর খুব তৃপ্তির সাথে খেয়ে নেয়।
কুকুরের ভূড়িভোজ দেখতে দেখতে ভাবি আজ কি বাঁচাটাই না বাঁচলাম। ‘অপরিচ্ছন্ন হাতের রান্না’, ‘সারাদিন শুকর- কুকুর চড়ে বেড়ায়’, হারাম - হালালের ধার ধারেনা, ‘চোলাই মদে’ আচ্ছন্ন গৃহস্থালি- না আর যাই হোক ওদের সাথে তো আর এই ভাব করা যায় না।
তার ক’দিন পর প্রথম বর্ষার বর্ষণে ভিজে উঠলো মাটি। এরই সাথে এলো পাহাড়ে আমাদের দ্বিতীয় শত্রু প্রাণঘাতি ম্যালেরিয়া। একদিন সন্ধ্যায় ভীষণ কাঁপুনি দিয়ে এলো জ্বর। এটা আমার দ্বিতীয় সংক্রমন। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে জ্বর বাড়তে লাগলো। এসব ক্ষেত্রে জ্বর নিয়ন্ত্রণে ‘ওয়াটার স্পনজিং’ খুবই কার্যকরী। সবাই ধরাধরি কে টীলার নীচে টিউবওয়েলের পাশে বাশেঁর বেঞ্চির উপর শুইয়ে মাথায় পানি ঢালা, গা মুছে দেওয়া কার্যক্রমগুলি চলছিল। জ্বরে আমিও প্রলাপ বকছিলাম। টিউবওয়েল পয়েন্টের কাছেই মধুমার ঘর। সবার উৎকণ্ঠিত সংলাপ শুনে মধুমাও ছুটে আসে।
সবার সাথে সেও তার চিকননলের মাটির সরাই থেকে পানি দিয়ে আমার তীব্র জ্বরের সাথে যুদ্ধে নেমে পরে। আমার খুব বমি হয়। যা ম্যালেরিয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ। মধুমা তার ‘অপরিচ্ছন্ন’ হাত দিয়ে পরিষ্কার করে দেয়।
তার মলিন ‘অপরিষ্কার’ গামছা দিয়ে আমার গা মুছে দিতে থাকে। তার এই সব মাতৃমঙ্গলা কার্যক্রমে কেও আপত্তি করেনি। পানি ঢালা শেষ হলে সেও সবার সাথে ক্যাম্পের অন্দরমহলে আমার ছাউনিতে চলে আসে ক্যাম্পের অলংঘনীয় ‘এস ও পি’ অগ্রাহ্য করে।
পরদিন সকালে বেশ ভালো বোধ করি। জ্বর নেই। ম্যালেরিয়ার এ এক অদ্ভুত রূপ। কিছুক্ষণ পর মাদাম তেরাসা রূপে হাজির হয় আমার গোলঘরে। হাতে তার একটি বাটি। বাটিতে বিন্নি ধানের রাইস সূ্প-ধূমায়িত সূপের সুঘ্রাণ নাকে এসে লাগছে। মধুমা আগ্রহ ভরা কণ্ঠে বলে, ‘এগুলো হেলে তুমার জ্বর না থাহিবো। বমি না অবো’।
আজ কেন জানি ঐ সুপের মধ্যে কোন সাপব্যাঙের প্রতিচ্ছায়া দেখতে পেলাম না। মধুমার শীর্ণ হাতও আজ আর ‘অপরিচ্ছন্ন’ মনে হলো না।
জুমের বিন্নি ধানের সাথে আদার কুচি, জুমের ‘৪২০ ভোল্টের’ কাচা লংকাসহ নানা হারবালের সংমিশ্রণ- ‘চাকমা থাই সুপ’।
মধুমা সাগ্রহে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আজ নিশ্চয়ই তুমি রোজা নেই’?
‘না, আজ তো মহরম মাস নয়’। আমার মুখ বাটি স্পর্শ করলো।
ক্লোরো কুইনের তীব্র তেতোঁ স্বাদ মুখ থেকে দূর হলো, মন থেকে দূর হলো দীর্ঘদিনের এক জাতিগত ‘অস্পৃশ্যতা’।
খাওয়া শেষে শূন্য বাটি হাতে টীলার ঢাল বেয়ে নেমে গেল মধুমা।
সেদিন দুপুরে ক্যাম্পের কুকরটা অভুক্ত ছিল।
লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা
এমবি//
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।