ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা: শুভ জন্মদিন

প্রফেসর  ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

প্রকাশিত : ২০:৪১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়োকচিত গুণে দেশ আজ অবিরাম গতিতে মানবকল্যাণের সঙ্গে জনজীবন সম্মুখপানে এগিয়ে চলেছে। জ্যোতির্ময় গুণাবলীর অধিকারী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য সম্মুখ সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ মহান নেত্রী ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছিল। বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে অবিরত ত্যাগ-তিতিক্ষা, মানুষের প্রতি অকুণ্ঠ ভালবাসা এবং জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল। দেশ স্বাধীন করার পর বঙ্গবন্ধু দেশকে আর্থিক মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চক্রান্তকারীরা সেদিন মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তাঁর দলেরই একাংশ মোশতাক-জিয়া ও আমলা চাষীর যৌথ নেতৃত্বে দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছে।

পঁচাত্তরের ঘৃণ্য হত্যা পরবর্তী একুশ বছর মানুষের মধ্যে সীমাহীন দুর্নীতির বীজ জিয়া-এরশাদ-খালেদা গ্রথিত করে ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থায় শাস্তিহীন সীমাহীন দুর্নীতির ব্যবস্থা করেছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা হিংস্র ঘাতকদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছিলেন সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রনায়োকচিত গুণাবলী তার মধ্যে কেবল বিদ্যমান নয়, বরং সঠিক স্ফুরণ ঘটিয়ে মানুষের মঙ্গল সাধনায় তিনি আলোকোজ্জ্বল পথের দিশারী। চলতি বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন এবং ৭৩তম জন্মবার্ষিকী। অন্তরের অন্তস্তল থেকে দোয়া করি বাঙালীর জীবনযাত্রা, মান উন্নয়নে তার যে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম গুণাবলী দেশকে তার প্রজ্ঞা ও ধীশক্তি দিয়ে আরও দীর্ঘকাল আল্লাহর অশেষ রহমতে নেতৃত্ব দেন।

ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন করা খুবই ভাল হয়েছে। ২০৪১ সাল নাগাদ এদেশ উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কর্মের গুণাবলীতে জাজ্বল্যমান শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে নানা সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় পুরস্কার হচ্ছে সাধারণ মানুষের অন্তরের অন্তস্তলের ভালবাসা এবং সমর্থন। করোনার সময় টিকা আবিষ্কার হলে সেটি এদেশবাসীর কাছে যাতে সহজলভ্য করা যায় সেজন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। করোনার টিকা এখন সর্বাগ্রে প্রয়োজন বিধায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দূতিয়ালী চলছে। আবার দেশেও টিকা উদ্ভাবনে একদল বিজ্ঞানী কাজ করে চলেছেন। ভেন্টিলেটর মেশিন যেমন ওয়াল্টন, মিনিস্টার তৈরি করেছিল সেগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংগ্রহ করা উচিত ছিল। দেশে দারিদ্র্য হ্রাস করা থেকে আরম্ভ করে ডিজিটালাইজেশন, শিক্ষার মান উন্নত করা, নারী সমতার প্রতি গুরুত্বারোপ করা, স্বাস্থ্য-চিকিৎসাসেবায় মানুষ যাতে তার ন্যূনতম সুবিধা পায়, ব্লু ইকোনমির সঠিক প্রয়োগ করা, সিএসএমই খাত, শিক্ষার সম্প্রসারণ এবং এখন গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা করা ও করোনাকালে যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান ও চিকিৎসা পায় তার জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছেন। রাজনীতিক হিসেবে তিনি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং মানুষ মানুষের জন্য এ চিন্তা থেকে পেটে-ভাতে রাজনীতির প্রায়োগিক কৌশল গ্রহণ করেছেন। যারা দুর্নীতি করছে, নানা অসাধু উপায় অবলম্বন করছে তাদের চিহ্নিত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তাদের বিচারের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি সাহসী নেতৃত্বগুণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন এবং করছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার চক্রান্তকারীরা চক্রান্ত করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং ইনডেমনিটি বিলের মাধ্যমে তাদের বিচার বন্ধ করে রেখেছিল। প্রচলিত আইনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের ব্যবস্থা করেন। মুজিব শতবর্ষে দোষী সাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ঘৃণ্য হত্যাকা-সমূহের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনকে বিচারের আওতায় আনার জন্য প্রয়াস গ্রহণ করেছেন। বাঙালী বঙ্গবন্ধুর কাছে চিরঋণী। যেদিন তাঁর সকল হত্যাকারী যারা দ-প্রাপ্ত তাদের শাস্তির বিধান করা যাবে সেদিনই কেবল জাতি হিসেবে আমরা দায়মুক্ত হবো। শেখ হাসিনার কল্যাণে দেশ আজ ডিজিটালাইজেশনে এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা করোনাকালের প্রথম দিন থেকে সামনে থেকে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার আদর্শে আদর্শান্বিত হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন ছাত্রলীগ করেছি। মনে পড়ে সবাইকে ছাত্রাবস্থায় বলতাম আমাদের মূল দলের শক্তির আধার হচ্ছেন শেখ হাসিনা। আজকের শেখ হাসিনাকেও কিন্তু কঠিন থেকে কঠিনতম সংগ্রামের মুখোমুখি হয়ে ন্যায়ের পথ বেছে নিতে হয়েছে। আর এই বেছে নিতে গিয়ে তাকে বারবার হত্যার ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি পর্যন্ত হতে হয়েছে। তারপরও তিনি বাঙালীকে ভালবেসে তাদের জীবনমান উন্নয়নে ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইতোমধ্যে নিম্নমধ্যম আয়ের রাষ্ট্র থেকে উচ্চমধ্যম আয়ের রাষ্ট্র আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে করতে চাচ্ছেন। অবশ্য দৈবদুর্বিপাক করোনা বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে থাবা বসিয়েছে। তারপরও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তার গতিটা ধীরলয়ে হচ্ছে। তার এই যে দূরদর্শী নেতৃত্বগুণ তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মানবতাগুণ। তিনি মিয়ানমারের নাগরিক প্রায় তের লাখ রোহিঙ্গাকে এদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। এর আগে যখন প্রথমবার প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেছিলেন তখন তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানকল্পে কাজ করেছিলেন। শান্তি, মানবতাবাদ, জনকল্যাণ হিতকর এবং সর্বোপরি মানুষের প্রতি সর্বদা শাসক নয়, সেবা প্রদানকারী বিবেচনায় শেখ হাসিনাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা উচিত। তিনি মানুষের জন্য যাতে দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের মান উন্নত করা যায় এবং গ্লোবাল ক্লাইমেট চেঞ্জের আক্রমণ থেকে বাঁচানো যায় সেজন্য সদা সচেষ্ট রয়েছেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১২ মে ২০১৮-এ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আমাদের জাতীয় সত্তা ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট আছেন। বাংলাদেশে ৪জি সার্ভিস চালু করেছিলেন। এবার ৫জি সার্ভিস চালুর প্রয়াস নিয়েছেন। দেশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পাশাপাশি চিকিৎসাক্ষেত্রে রোবট এবং বলক চেন টেকনোলজির ব্যবহার এবং প্যাশেন্ট এভলুশন ফর্মের ব্যবস্থা করা জরুরী হয়ে পড়েছে। কোভিড হাসপাতালগুলোতে ভয়ে রোগীরা চিকিৎসার জন্য পারতপক্ষে যেতে চাচ্ছে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণে ২০২৪ সাল নাগাদ লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিসের গ্রাজুয়েট হওয়ার কথা। তবে নিউ নর্মাল সিচুয়েশনের কারণে পৃথিবীর সব দেশেই আজ বিরাট ধাক্কা লেগেছে অর্থনীতি-সামাজিক-শিক্ষা-ব্যবস্থা-বাণিজ্য-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। তারপরও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গতিময়তা আনার জন্য সরকারপ্রধান হিসেবে ৩১টি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। এই প্যাকেজগুলোর পাশাপাশি প্যাকেজবহির্ভূত আর্থিক সহায়তা প্রদান করে মানুষের মধ্যে ‘জীবন ও জীবিকার’ সমন্বয় সাধনে তার ঐকান্তিক প্রয়াস রয়েছে। ১৯টি প্রণোদনার আওতায় সরকার ১০৩,১১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে বাস্তবায়নের সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় গ্রামীণ ও কৃষি খাতকে আরও বেশি করে সুসংহত করার জন্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তার নির্দেশিত পথকে অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মধ্যম ও নিম্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপকরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উল্টাপাল্টা করে ফেলে। এজন্য প্ল্যান-ডু-চেক-এ্যাক্ট-এর আওতায় কাজ করা এবং সরকারপ্রধানের নির্দেশিত পথ থেকে বিচ্যুত না হওয়া বাঞ্ছনীয়। দেশে করোনাকালে কৃষি খাত এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট শিল্পায়নকে সরকার প্রধান গুরুত্ব দিতে বলেছেন। সরকার পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ২১ সেপ্টেম্বর স্বপ্ন এবং চাল ডাল ডটকমের মধ্যে পেঁয়াজ টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি শুরু করে। ঘণ্টাখানেক চেষ্টা করেও এ পেঁয়াজের হদিস পেলাম না। রাতে চাল ডাল ডটকমের প্রতিনিধি জানান কিছুক্ষণের মধ্যেই ১০০ কেজি পেঁয়াজ শেষ-এজন্য কোন ঘোষণা নেই। গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকিং সেক্টরকে দুর্বলতামুক্ত হয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করতে বলেছেন এবং যে সমস্ত দুর্বল ব্যাংক রয়েছে সেগুলো বিবেচনায় এনে মার্জার করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন। কিছু ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। তার অনুশাসন প্রশংসনীয়। যেখানে থাইল্যান্ডের মতো একটি দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা হচ্ছে ৩১টি, আমাদের দেশে রয়েছে ৫৯টি। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। কৃষকদের পাশে নানামুখী কৃষিবিষয়ক প্রকল্প গ্রহণ করে ব্যবসা-বাণিজ্যকে সম্প্রসারণ করতে হবে। সরবরাহজনিত সমস্যা দূরীকরণ করতে মেধা ও মননকে কাজে লাগাতে কৃষি ব্যাংককে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এদিকে গত এক মাসে সোয়া লাখ মানুষ প্রবাস থেকে ফিরে এসেছেন। এদের পুনর্বাসনে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে কাজ করতে হবে। আবার সাড়ে তিন লাখ বাংলাদেশী প্রবাসে যেতে পারছেন না। তাদের সহায়তা করতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে কার্যক্রম ও বিশেষ প্রকল্প চালু করতে হবে। এদিকে একশ্রেণীর শিল্প মালিক বেসরকারী খাত থেকে করোনাকালে চাকরিচ্যুত করছেন, এটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং আশা করব প্রত্যেকের বেতন-ভাতাদি যেন সঠিকভাবে দেয়া হয়। ই-কমার্স পরিচালিত সংগঠনকে আরও সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করতে হবে। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশের রেল সম্প্রসারণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর আবার রেলওয়ের ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সচেষ্ট হন। তবে দীর্ঘদিন ধরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন ৬৩ কিলোমিটার হ্রাস করে কুমিল্লা হয়ে দাউদকান্দি-মেঘনা-নারায়ণগঞ্জ দিয়ে রেল চলাচলের যে ব্যবস্থা নেয়া হয় সেটি দীর্ঘকাল ধরে আটকে আছে। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী চাইলে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক জটিলতামুক্ত হতে পারে। এতে ঢাকার ওপর চাপ হ্রাস পাবে বলে প্রতীয়মান হয়। প্রধানমন্ত্রী নৌপথে চলাচলে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি নৌপথ সংস্কারের প্রয়াস গ্রহণ করেছেন এবং ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা নিয়েছেন। দুর্ভাগ্য হলো, যারা ঠিকাদারি করে ড্রেজিংয়ের কাজে, তারা যথাযথভাবে ড্রেজিংয়ের কাজ না করায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। যে সমস্ত ঠিকাদার তাদের কাজকর্মে অবহেলা করবে তাদের অবশ্যই শাস্তির বিধান করা দরকার। নৌপথে পণ্য পরিবহন করলে খরচ এক-চতুর্থাংশ হ্রাস পেয়ে থাকে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী নৌপথ সংস্কার সাধনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি একজন দক্ষ কূটনীতিকের মতো ভূরাজনৈতিক গুরুত্বকে কাজে লাগিয়েছেন।

করোনাকালে যাতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ না থাকে সেজন্য অনলাইনে শিক্ষার উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন। প্রাকটিক্যাল শিক্ষার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সপ্তাহে একদিন শিক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। অনলাইনে যাতে নকলমুক্তভাবে পরীক্ষা হয় সেজন্য ডিভাইস ব্যবহার করা কিংবা ওপেন বুক এক্সামের ব্যবস্থা করা দরকার। প্রধানমন্ত্রী গত ২০ সেপ্টেম্বর জনগণকে সাবধান করেছেন, শীতকালে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে। শীত আসার আগেই সংক্ষিপ্ত পরিসরে এইচএসসি পরীক্ষাটি নেয়া যায় কিনা সেটি বিবেচনা করে দেখা দরকার। কেননা ইতোমধ্যে অনেক এইচএসসি পরীক্ষার্থী মানসিকভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। দরকার হলে অনলাইনে পর্যায়ক্রমে ওপেন বুক এক্সাম নেয়ার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দরকার, যাতে করে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা করোনাকালে পরীক্ষা দিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার ভারমুক্ত হয়।

প্রধানমন্ত্রী সব সময় দেশের শিল্পী-সাহিত্যিক-ক্রীড়াবিদদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে আসছেন। তার এই মহানুভবতার কারণে বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং ক্রীড়াঙ্গনে জোয়ার এসেছে। এটি আসলে দেশের জন্য একটি গুরুত্ব বহন করে থাকে। তার মমতাময়ী দিকটি সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। মানুষকে অকৃত্রিমভাবে ভালবেসে তিনি উজাড় করে দিচ্ছেন, যেন মানুষের হিতসাধনের কঠিন ব্রতে ব্রতী এই মহীয়সী নারী, যিনি দেশের সাধারণ মানুষকে ভালবাসেন। তিনি এদেশের অহঙ্কার এবং অবিসংবাদিত নেত্রী।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যদি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তন না করতেন তবে এদেশের উন্নতি তো দূরের কথা, বরং অন্ধকারে এবং প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের হাতে বন্দী হয়ে যেত। তিনি ধর্মভীরু, কিন্তু ধর্মান্ধ নন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পুষ্টুু এক মহান ব্যক্তিত্ব যিনি বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। শিক্ষার্থীদের ভালবাসেন বলেই বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেড় কোটি প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে এক হাজার টাকা করে অনুদান করোনাকালে দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন- এটি তার ঔদার্যের প্রতীক। আইএলও-এর হিসাব মতে এদেশে ৩০ লাখের মতো বেকার রয়েছে। এই বেকারদের যদি এককালীন কিছু টাকা তাদের ব্যাংকের এ্যাকাউন্টে দেয়া হয় করোনাকালে, তবে তাদের মনমানসিকতাকে উদ্বুদ্ধ করবে। আসলে স্নেহময়ী মাতৃসুলভ অথচ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কূটনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা সম্মান ও পুরস্কারে এই মহীয়সী নারী ভূষিত হয়েছেন। দেশে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং খাদ্য নিরাপত্তার বন্দোবস্তেও তিনি সদা জাগ্রত। তবে দলের ভেতর কেউ যেন কোনভাবেই স্যাবটাজ না করতে পারে সেজন্য গোয়েন্দাদের সজাগ থাকা বাঞ্ছনীয়। যখন গবাদিপশু নিয়ে সমস্যা হলো তখনই তিনি দেশে গবাদিপশু লালন-পালন এবং খামার বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হয়েছেন। গতবার এবং এবার পেঁয়াজ নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে এদেশে পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে ব্রতী হয়েছেন তিনি। দেশে বর্ষা মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদনে বীজ উদ্ভাবন হয়েছে। এখন এ পেঁয়াজ উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি অধিদফতর এবং কৃষি ব্যাংককে কাজ করতে দেয়া যেতে পারে। দেশের মানুষের মধ্যে শেখ হাসিনা হচ্ছেন এমন এক রাষ্ট্রনায়ক যিনি সব সময় সাধারণ মানুষের জনকল্যাণে ব্রতী থাকেন। জন কুইন্সী এডামস মন্তব্য করেছেন যে, তিনিই সর্বোত্তম নেতা যিনি তার কর্মধারার মাধ্যমে অন্যের স্বপ্ন বাস্তবায়নকে অধিকতর ফলপ্রসূ করে থাকেন, আরও শিক্ষিত হতে উদ্বুদ্ধ করেন, আরও কর্মোদ্যমী এবং কর্মস্পৃহ হতে বলিষ্ঠ ক্ষমতা দেন। উপরোক্ত উক্তিটির চেয়ে আরও বলিষ্ঠ, বেগবান গতিতে বাংলাদেশের চারবারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে ভালবেসে কাজ করে চলেছেন। যারা দুর্নীতি ও নৈতিকতাবিহীন কর্মকা-ে লিপ্ত তাদের প্রতি তিনি আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্রতী রয়েছেন। এরিস্টটলের ভাষায় যিনি তার ক্ষমতা প্রয়োগে ন্যায়পরায়ণতা ও সততা দ্বারা মানুষের কল্যাণ সাধনে ব্রতী হবেন এবং জনগণের কল্যাণে তার সব ধরনের সম্পদ-বৈভব ও আত্মমর্যাদা প্রয়োগ করবেন এবং কোন ধরনের ভীতি-বিভ্রান্তি থেকে বিরত থেকে বরং তার সকল সময় ও গুণাবলীকে কাজে লাগান তিনিই হতে পারেন একজন দেশ এবং জনহিতৈষী শাসক। এ বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন মানবদরদী ও প্রাজ্ঞ গণতন্ত্রবাদী শাসক। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে তিনি উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়াস গ্রহণ করেছেন। উদ্যোক্তা হতে হলে মনস্তাত্ত্বি¡ক গুণের পাশাপাশি অর্থায়নের বিষয়টি এবং ব্যবসা করার পদ্ধতি সহজীকরণ দরকার। ব্যাংকাররা যাতে কলোটারাল ফ্রি ল্যান্ডিং তরুণ-তরুণীদের উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেয় সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। পরিশেষে, শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মবার্ষিকী মঙ্গল আলোয় অতিসিক্ত হোক, জনগণের ভালবাসায় পরিপূর্ণ হোক এটাই প্রত্যাশা। জয়তু শেখ হাসিনা। দীর্ঘ জীবনের অধিকারী হোন।

লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট ও আইটি এক্সপার্ট

Pipulbd@gmail.com

আরকে//


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি