ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

বাইডেন জয়ে ভাগ্য ফিরবে না সাধারণের 

সাব্বির আহমেদ 

প্রকাশিত : ১০:৩৫, ১৭ অক্টোবর ২০২০

আমেরিকার সবকিছুই টাকার নিয়ন্ত্রণে। টাকা দিয়ে সেদেশে বাঘের চোখও কেনা যায়। টাকা দিয়ে সেখানে রাজনীতি, নির্বাচন, আইন কেনা যায়। বিচারও যে সেখানে টাকা দিয়ে কেনা যায় তা এতকাল আমার জানা ছিল না। 

মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হবার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোনয়ন পেয়েছেন বিচারক এমই কনি ব্যারেট। তার মনোনয়ন চূড়ান্ত করার দ্বায়িত্ব সিনেটের জুডিশিয়ারি কমিটির। গত দুই দিন ধরে সে শুনানির কিছু কিছু অংশ সরাসরি সম্প্রচার করেছে সিএনএন। শুনানি চলাকালীন সময়ে দেখতে পেয়েছিলাম, ডেমোক্র্যাটিক দলের সিনেটর শেল্ডন হোয়াটহাউস কমিটিকে তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করে জানাচ্ছে, ফেডারালিস্ট সোসাইটি, জুডিশিয়াল ক্রাইসিস নেটোয়ার্ক, লিগ্যাল গ্রুপ - পিএলএ, ইত্যাদি নামে বেশ কিছু লবিষ্ট গ্রুপ কিভাবে বিভিন্ন সময়ে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের পেছনে টাকা খরচ করে আদালতের রায় ব্যবসায়ীদের পক্ষে নিয়ে থাকে। এসব গ্রুপের সঙ্গে সিনেটরদের যুক্ত থাকার তথ্য, প্রমাণও তিনি শুনানির সময়ে উপস্থাপন করেছেন। 

যে দেশে সব কিছু টাকা দিয়ে কেনা যায় সে দেশে টাকাওয়ালারা ভাল থাকবে। যাদের টাকা নেই তারা খারাপ থাকবে –এটাই তো হবার কথা। হচ্ছেও তাই। জি৭ দেশগুলোর মধ্যে বৈষম্য সবচেয়ে বেশি আমেরিকায়। ধনীদের সম্পদ সেখানে বেড়েই চলছে, কমে যাচ্ছে দরিদ্রের। 

ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে সকলের জন্য শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের মোটামোটি নিশ্চিত ব্যবস্থা থাকলেও আমারিকাতে তা নেই। আমেরিকার চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয় বহুল। সমগ্র চিকিৎসা ব্যবস্থা কিনে রেখেছে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো। উচ্চ শিক্ষা অনেক টাকা ছাড়া পাওয়া যায় না। শুধু বিত্তবানদের সন্তানেরাই পারে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে। 

ওষুধের, হাসপাতালের দাম নির্ধারণ হয় কর্পোরেট লবির মাধ্যমে। দুর্নীতিতে ঠাসা সেখানের রাজনীতি, অর্থনীতি। দুর্নীতির টাকা পাচার করে দেয়া হয় স্যুইচ ব্যাংকে, কর স্বর্গে। বারাক ওবামার প্রথম নির্বাচনের সময় থেকে সব কয়টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রধান আলোচ্য বিষয় হওয়া সত্ত্বেও নিশ্চিত করা যায়নি শিক্ষা, চিকিৎসা বাসস্থান; সংস্কার হয়নি ৪৫ বছরের পুরনো যোগাযোগ ব্যবস্থার। 

গবেষণায় আমেরিকার সরকারি সাহায্য ১৯৬০ সালে ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশ। সেখান থেকে কমতে কমতে এখন তা জিডিপির ০.৭ শতাংশে পৌঁছেছে। ফলে চীনের সঙ্গে তারা ৫জি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিগ ডাটাসহ নতুন প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়েছে। পিছিয়ে পড়া ঠেকাতে ট্রাম্পকে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে নামতে হয়েছে। নিজ দেশে নিষিদ্ধ করতে হয়েছে চীনের অনেক প্রযুক্তি। এমন কি চীনের টিকটক পর্যন্ত সেখানে নিষিদ্ধ। 

শুধু চীন কেন, আমেরিকা বাণিজ্য যুদ্ধ চালাচ্ছে তার প্রতিবেশী এবং অন্যান্য মিত্রদের সঙ্গেও। টাকা ওয়ালাদের দৌরাত্মে গবেষণায় বিনিয়োগ করেনি বলে বুদ্ধিতে হেরে যাচ্ছে আমেরিকা। বুদ্ধিতে না পেরে পৃথিবীব্যাপী সকলের সঙ্গে লাগিয়েছে ঝামেলা। বাদ পড়েনি দীর্ঘকালীন মিত্র ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও দঃ কোরিয়া। 

কারখানা খোলার যুক্তিগুলো ...

ট্রাম্পের আমেরিকা নেমেছে ভয়াবহ ভবিষ্যৎ ধ্বংসকারী নীতিতে। জলবায়ু চুক্তি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে এক ঘরে হয়ে পড়েছে আমেরিকা। ট্রাম্পের আমেরিকা বিজ্ঞানকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে; উস্কে দেয় বর্ণবাদ, ধর্মীয় সহিংসতা; অবজ্ঞা প্রদর্শন করে নারীর প্রতি। তবুও আমেরিকান ভোটারদের একটা বড় অংশ এবারেও ভোট দেবে ট্রাম্পকে। কেন? তারা ট্রাম্পের মধ্যে কি পায়? 

রোনাল্ড রিগ্যানের সময় থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতির জয়জয়কার শুরু হয় আমেরিকায়। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার নিজ দেশের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো কাটিয়ে তোলার জন্য লুফে নেন রিগ্যান প্রবর্তিত মুক্তবাজার অর্থনীতি। পরবর্তী সময়ে বার্লিন দেয়াল ভেঙ্গে দিয়ে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটিয়ে বিশ্বজুড়ে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের। মুক্তবাজার অর্থনীতির ঝাণ্ডা উড়ানো হয় ধরিত্রীর সকল প্রান্তে। ইচ্ছায় এবং অনিচ্ছায় সব দেশই মেনে নেয় রিগ্যান-থ্যাচারের মুক্তবাজার অর্থনীতি। 

কোটা, পারমিট, লাইসেন্স, বাণিজ্য শর্ত ইত্যাদি কারণে মুক্ত বাজার কোথাও প্রতিষ্ঠা না হলেও তার নামেই চলে পশ্চিমা ধনীদের বিশ্বজুড়ে শোষণ ব্যবস্থা। শোষণকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। শোষণ ব্যবস্থার পোশাকি নাম দেয়া হয় বিশ্বায়ন। বাজার মুক্ত না হওয়ায় বিশ্বায়নের সুবিধা পায়নি খেঁটে খাওয়া মানুষেরা। তথাকথিত বিশ্বায়নের ফলে ধনীর ভাণ্ডারে জমা হয়েছে অঢেল অর্থ। কিছু গেছে ধনীদের তাবেদার উচ্চ শিক্ষিত মধ্যবিত্তের পকেটে। 

বিশ্বের ৮০ শতাংশ গরীব যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই রয়ে গেছে। আমেরিকার খেঁটে খাওয়া মানুষের গড় আয় ১৯৬০’র দশকে যা ছিল ২০১০’র দশকে এসে তা বাড়েনি, বরং কমেছে। 

আমেরিকায় নারীর, শিশুর, হিস্প্যানিক, কালো মানুষ, প্রতিবন্ধীদের ও অভিবাসীদের অধিকার ইত্যাদি নিয়ে আলাপ-আলোচনা, রাজনীতি করা হলেও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাদাদের অধিকার নিয়ে কেউ কথা বলত না। অথচ তথাকথিত বিশ্বায়নের সাইড ইফেক্ট সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছে তারাই। 

বিশ্বায়নের ফলে আমেরিকার কর্পোরেট সমাজ বেশি বেশি টাকা বানানোর জন্য কারখানাগুলো নিয়ে গিয়েছিল মেক্সিকো, ব্রাজিল আর চীনে। ফলে কাজ হারিয়েছে সে দেশের শ্রমিকরা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান রাজনীতি কৌশলী স্টিভ বেনন এই পরিস্থিতিটা ভাল করেই বুঝতেন। রাজনীতি না করা রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খী ট্রাম্পকে তিনি শোষণের এই দিকটা দেখিয়েছিলেন, বুঝিয়েছিলেন।

ট্রাম্প রাজনীতিটা করছেন আমেরিকার এই খেঁটে খাওয়া সাদা মানুষদের নিয়ে। তাদের সমর্থন আদায় করার জন্য ট্রাম্প তাদের মন জুগিয়ে কথা বলেন; কাজ করেন আসলে বিলিনিয়রদের জন্য। বিলিনিয়রদের ভাণ্ডারে আরও সম্পদ সরবরাহ করার জন্য তিনি কর কমিয়েছেন অবিশ্বাস্য পর্যায়ে। সাদা কম শিক্ষিত সমর্থকদের জন্য কিছু কাজও অবশ্য তিনি করেছেন। ট্রাম্পের সময়ে দীর্ঘ দিন ধরে থেমে থাকা মজুরীর পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। আরেকদিকে অতি ধনীদের ভাণ্ডার ভর্তি হওয়ার কারণে বাড়তে থাকে পুঁজিবাজারের সূচকগুলো। ট্রাম্প তার ভোটারদের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন এবং অনেকখানী সফলও হয়েছেন। করোনা ব্যবস্থাপণা করতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন ট্রাম্প। করোনা না এলে ট্রাম্পকে দুর্বল করার সুযোগ পাওয়া যেত কী-না তা গবেষণার বিষয় হতে পারে। 

আমেরিকায় শুধু অতি ধনী আর সাদা শ্রমিকেরাই থাকে না। থাকে সাদা শিক্ষিত উন্নত রুচির বিজ্ঞান মনস্ক মানুষ, ১৫ শতাংশ হিস্প্যানিক ও ল্যাটিনো, ১৩ শতাংশ  কালো মানুষ, ৬ শতাংশ এশিয়ানসহ অন্যান্য মানুষেরাও। তারা দেখেছেন ট্রাম্প বর্ণবাদ উস্কে দিয়ে, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে, অভিবাসীদের রুখে দিয়ে আমারিকান সমাজকে কলুষিত করছেন; কথা ও কাজে তাদের বিশ্বব্যাপী প্রচারিত গৌরব, গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন; সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে করে সমাজকে মধ্যযুগের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করেছেন।

এভাবে চলতে থাকলে আমেরিকা গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হবে–এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেকে। The new American Civil War শিরোনামে লন্ডনের বিখ্যাত প্রস্পেক্ট ম্যাগাজিনে প্রবন্ধ লিখেছেন স্যাম তানেহাস। একই শিরোনামে ইউরোপের সাপ্তাহিক, নিউ ইউরোপে আরেকটি নিবন্ধ লিখেছেন বাসিল করোনাকিস। 

ট্রাম্প প্রশাসনের জলবায় চুক্তি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে থেকে আমেরিকার সরে আসার সিদ্ধান্ত, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ, মিত্রদের সঙ্গে চুক্তিছিন্ন, ন্যাটোকে দুর্বল করে ফেলা, ইত্যাদি; ট্রাম্পের নীতিহীনতা, কথায় কথায় নীতি পরিবর্তন, অঢেল মিথ্যাচার এবং সর্বোপরি করোনা ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে ট্রাম্প আমেরিকার ভাবমূর্তি তলানীতে নিয়ে ঠেকিয়েছে। 

যেভাবে গত চার বছর ট্রাম্প আমেরিকা চালিয়েছে তাতে বিশ্বজুড়ে আমেরিকার প্রভাব-প্রতিপত্তি কমেছে বহুলাংশে; বেড়েছে চীনের রাজনৈতিক বলয়। ঠাণ্ডা মাথার উচ্চশিক্ষিত আমেরিকানরা এ অবস্থা মেনে নিতে পারে না। তারা আর একদিনের জন্যেও ট্রাম্পকে সহ্য করতে পারছে না। এর সঙ্গে ট্রাম্পের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কালো মানুষেরা, হিস্প্যানিকেরা, ল্যাটিনোরা, এশিয়ানরা, অভিবাসীরা ট্রাম্পকে এমনিতেই অপছন্দ করে। তারা সকলে মিলে এবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে। ট্রাম্পের দুশ্চরিত্র এবং নারী বিদ্বেষী কথাবার্তার কারণে কম শিক্ষিত অনেক সাদা নারীও এবার ট্রাম্পকে ভোট দিচ্ছে না। এবার এদের সবার প্রার্থী মন্দের ভাল জো বাইডেন। 

দেলাওয়ার রাজ্যের টানা ৩৬ বছরের সিনেটর এবং ওবামা প্রশাসনের ৮ বছরের ভাইস প্রেসিডেন্ট ৭৭ বছর বয়স্ক জো বাইডেন একজন ঝানু রাজনীতিবিদ। নির্বাচিত হলে তিনিই হবেন আমেরিকার সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। তিনি এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেবার ঘোষণা দেবার আগেই সমর্থন কুড়িয়েছেন ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে থাকা ধনকুবেরদের। টাকা খরচ করে যারা রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন বিল ক্লিনটনকে, বারাক ওবামাকে; স্টিভ বেননের রাজনীতির কাছে ব্যর্থ হয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে আনতে। 

এই ধনকুবেররাই দুই নম্বরি করে ডেমোক্রেটিক দলের মনোনয়ন প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন সাদা-কালো নির্বিশেষে জনগণের প্রকৃত বন্ধু বার্নি স্যান্ডার্সকে। এই ধনকুবেররাই এবারো সব কয়টি দলীয় বিতর্কে হেরে যাওয়া বাইডেনের পেছনে এত টাকা খরচ করেছে যে স্যান্ডার্স এবারেও টিকতে পারেনি টাকাওয়ালাদের দেশ আমেরিকার রাজনীতির ঘোড়দৌঁড়ে। দলীয় মনোনয়নের দৌঁড়ে জিতে গেছে রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যহীন জো বাইডেন। 

বাইডেন সিনেটে এবং প্রশাসনে দক্ষতা দেখিয়েছেন যথেষ্ট। কিন্তু দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে স্থাপন করতে পারেননি নিজস্ব কিছু। নির্বাচিত হলে তিনি টাকাওয়ালা আমেরিকানদের স্বার্থ দেখবেন সবার আগে। খেঁটে খাওয়া মানুষদের প্রয়োজনকে অবজ্ঞা করবেন –এমনও নয়। জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে যাবেন রাজনীতি বিভক্ত আমেরিকান সংসার। দরকার ছিল স্যান্ডার্সেরমতো প্রার্থীর যিনি শুধু আমেরিকারই নয়, জনগণের প্রকৃত কল্যাণের জন্য কাজ করে কল্যাণকামী রাজনীতি শেখাতে পারতেন সারা দুনিয়াকে। 

বহুদিন ধরেই আমেরিকার রাজনীতি দুভাগে বিভক্ত। রিপাবলিকান আর ডেমোক্র্যাটিক। ট্রাম্প আমলে এসে এই বিভাজন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আমেরিকার জনগণ এখন মুখোমুখি। একদল আরেক দলকে দেখতে পারে না –এমন অবস্থা। এবারের নির্বাচনে ভোটের সিদ্ধান্ত নিতে তাই বেগ পেতে হয়নি প্রায় কাউকে। স্যুইং ভোটার কমে গেছে অনেকখানী। যার যার অবস্থান থেকে অনেক আগেই তারা ভোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। ফলে নির্বাচনের প্রায় তিন সপ্তাহ আগেই ভোট দিয়ে দিয়েছে এক কোটি পঞ্চাশ লাখ মানুষ। 

২০১৬ সালের নির্বাচনে এমন সময়ে ভোট দিয়েছিল মাত্র ১৪ লাখ ভোটার। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন রিপাবলিকান এবং একই সংখ্যক ডেমোক্র্যাট ভোটের ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্ব মুক্ত। অর্থাৎ যার যার দলের প্রার্থীকেই তারা ভোট দেবেন। অতীতে এমন কখনো দেখা যায়নি। প্রার্থীর ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মা এবং তার নির্বাচনী ইস্তেহারের কারণে অতীতে বহু রিপাবলিকান ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থিকে ভোট দিয়েছে বা ডেমোক্র্যাটরা ভোট দিয়েছে রিপাবলিকান প্রার্থীকে। এবারে তা প্রায় হচ্ছে না। 

জনমত জরিপ অনুযায়ী বাইডেন ১০ শতাংশ বেশি জনপ্রিয়তা নিয়ে এগিয়ে আছেন। যুদ্ধক্ষেত্র রাজ্যগুলোর বেশির ভাগ রাজ্যে বাইডেন এগিয়ে আছেন। ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের হিসেবেও বাইডেন এই লেখার সময়ে ১০০ ভোটে এগিয়ে আছে। এই ব্যবধান কমার কারণ দেখা যাচ্ছে না। 

ডেমোক্র্যাটরা নির্বাচনের ব্যাপারে সিরিয়াস। শুধু রাষ্ট্রপতি পদ নয় তারা এই সঙ্গে সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে চায়; ধরে রাখতে চায় হাউসের নিয়ন্ত্রণ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ট্রাম্প ইজ্জত হারিয়েছেন অনেকখানী। ডেমোক্র্যাটদের প্রচারযন্ত্রগুলো ট্রাম্পকে নিয়ে হাসি-তামাশা করে তাকে খেলো বানিয়ে ফেলেছে। 

এবারের প্রচারাভিযানে তারা অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, জলবায়ু, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ইত্যাদি নয়, প্রচারণার কেন্দ্রে রেখেছে ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। ডেমোক্র্যাটদের টার্গেট বিপুল ব্যবধানে জয় লাভ। যত বড় ব্যবধানেই বাইডেন জিতুক না কেন তাতে ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না খেঁটে খাওয়া মানুষের। লাভের গুড় অতি ধনীদের ভাণ্ডারই সমৃদ্ধ করবে; বিশ্বব্যাপী আমেরিকার মিত্ররা স্বস্তি বোধ করবে; মাতব্বরি বাড়বে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর উপর। 

লেখকঃ চার্টার্ড একাউন্টেন্ট (এফসিএ) এবং লিড কনসালট্যান্ট ও চেয়ারম্যান, ঢাকা কনসাল্টিং লিমিটেড।

এআই/এমবি


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি