ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

কেমন বাংলাদেশ চাই

মীর ইমরান আলী

প্রকাশিত : ২২:৩৩, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ | আপডেট: ২৩:১১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। তবে স্বাধীনতা পাওয়াই সব নয়। মানুষের বাক-স্বাধীনতা, যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মের অধিকার—এসবই থাকতে হবে। ক্রয়ক্ষমতা থাকতে হবে সবার। দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে সব ক্ষেত্রে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা পাইনি। আজ শিশু ও নারীর নিরাপত্তা নেই। শিশু নির্যাতন যে হারে বাড়ছে তা দুঃখজনক। 

সরকার প্রতিরোধের চেষ্টা করেও সফল হচ্ছে না। জনগণকেও তাই এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দুর্নীতির রাশও টেনে ধরতে হবে। সমাজে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এমন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চাই, যেখানে বৈষম্য হ্রাস পাবে। 

সর্বশেষ সিলেটের এম সি কলেজ গৃহবধূ ধর্ষণ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুরে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ধর্ষণের চেষ্টা। এমন ঘটনা অহরহই ঘটছে। শিশুরা এত দিন ছিল খাঁচায় বন্দি। এখন তাদের দিকেও হাত বাড়াচ্ছে হায়েনারা। শিশু স্কুলে যাবে, মাকে আগলে রাখতে হয়। ফিরবে, তখনও মাকে আগলে রাখতে হয়। তারপরও কি সবাই নিরাপত্তা পাচ্ছে? ওরা কেন মুক্ত বিহঙ্গ হতে পারছে না? 

বাড়ছে শিশু অপহরণ। অভিভাবকদের ভয় ও উৎকণ্ঠাও বেড়ে চলেছে। সব ধর্ম ও মতের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে হবে। সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা চাই। কর্মদক্ষতা ও সততার প্রয়োগ করা গেলে এমন স্বপ্নের দেশ গড়া কঠিনও হবে না। স্বাধীনতা জয় করা সহজ, রক্ষা করা কঠিন। এই কঠিন সময় আমরা এখন পার করছি। মানুষে মানুষে হানাহানি কমছে না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আরও বাড়ছে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আরও সফলতা সবার কাম্য ছিল। দেশ কৃষি খাতে আধুনিক কৃষিনির্ভর হয়ে ওঠেনি। দাবি করা হয়- বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই অর্জনের নেপথ্য নায়ক দেশের কৃষক সমাজ। দেশের কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের অগ্রগতি খুবই সামান্য হওয়ায় আক্ষরিক অর্থেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষকরা ক্ষেতের ফসল ফলান। বন্যা, খরা, অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই, তার ওপর আছে বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সংকট এবং কীটনাশক, সার ইত্যাদির চড়া মূল্য। 

এতসব সংকট মোকাবিলা করে ফসল ফলিয়েও কৃষকেরা যদি ফসল বিক্রি করে উৎপাদন খরচ মেটাতে না পারেন তাহলে পুঁজিহীন কৃষকরা বাঁচবে কী করে? কৃষি খাতের উন্নতিও সবার লক্ষ্য ছিল। বর্তমানে স্বাধীনতা ও প্রকৃতি বিরোধীরা স্বাধীন বাংলার প্রাকৃতিক সম্পদ, পশুপাখি, বন্য প্রাণী, নদী, জলাশয়, পাহাড়, বন-জঙ্গল ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে। আমরা স্বাধীন হয়েও প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছি প্রতিনিয়ত। 

যে প্রকৃতি আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে, তাদের আমরা রক্ষা না করে ক্রমাগত ধ্বংস করছি। অপরূপ বাংলাদেশ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে বিশ্বে আলো ছড়াক এটাই তো কাম্য। 

বেকারত্ব আমাদের দেশে যেন একটা অভিশাপে হয়ে গেছে। দেশে এখনও শিক্ষিত যুবকের একটা বড় অংশ বেকার রয়েছে। কর্মসংস্থান না পেয়ে লাখো যুবক পথে পথে ঘুরছে। চাকরিতে সীমিত পদের জন্য হাজার হাজার আবেদন পড়ে। এত আবেদনকারীর মাঝে নিজেকে অসহায় লাগে। এমন পরিস্থিতিতে চাকরি না পেয়ে দুশ্চিন্তা কুরে কুরে খায় অগণিত যুবককে। আর যখন কোনও শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে বের হয় তার জন্য তো সেটা আরও বেদনাদায়ক হয়ে দাঁড়ায়। যদিও কর্মসংস্থানসমৃদ্ধ দেশ ছিল সবার একান্ত আশা। 

এ দেশের যোগাযোগ খাতের উন্নতি হলেও তা আশানুরূপ নয়। যতটুকু উন্নত যোগাযোগ মাধ্যম প্রয়োজন ছিল ততটুকু হয়নি। দেশে সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এ মিছিল অপ্রতিরোধ্য। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে এবং আহত হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো অনেক আগেই শনাক্তকৃত। কী করলে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব, তাও বিশেষজ্ঞরা বহুবার বলেছেন। তারপরও কিছু হচ্ছে না। 

আমরা বিশ্বাস করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো সচেতন, তাৎপর ও দায়িত্বশীল হলে সড়ক দুর্ঘটনার অভিশাপ থেকে দেশকে একেবারে মুক্ত করা সম্ভব না হলেও দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনা অবশ্যই সম্ভব। তাই যোগাযোগ খাতের আরও উন্নতি কামনা করছি। 

এ দেশের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারেনি। আশা করি, আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাব। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যে দেশে থাকবে না মাদক, দুর্নীতি, থাকবে না প্রশ্নফাঁস, থাকবে না হানাহানি, ধর্ষিতা হয়ে পড়ে থাকবে না কোনও বোন, কিংবা লাশ হয়ে কলঙ্কের দাগ নিয়ে পড়ে থাকতে হবে না কোথাও, কেউ ক্ষুধার জ্বালায় চিৎকার করবে না, সড়কের দুর্ঘটনায় কেউ হারাবে না প্রাণ, বৈষম্য রবে না।

একটি মানুষও কাঁদবে না এই বাংলায়। কমবে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য। এ ছাড়া রাজনীতিবিদরা হবেন সৎ, শিক্ষিত ও দক্ষ। মানুষ হবে আরও মানবিক, আরও সুসংগঠিত। আর সবার হাত ধরে গড়ে উঠবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শভিত্তিক এক সোনার বাংলাদেশ।

লেখক- তরুণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট, শিক্ষার্থী আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি