বিজয়ের ৪৯ ও আমার প্রত্যাশা
প্রকাশিত : ২২:৪২, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০
১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন। তাজা ৩০ লাখ শহীদের প্রাণ ও দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, ১৯৭১ সালের এইদিনে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর প্রায় ৯৩ হাজার সদস্য আত্মসমার্পণ করে। তখনই আমরা পেয়ে যাই কাঙ্খিত বিজয়। পৃথিবীর বুকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয় ঘটে ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্রটির।
প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বিশেষ দিবস হিসাবে আমরা এইদিনটি পালন করে আসছি। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই দিবসটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এই দিনে ছুটি থাকে।
প্রতি বছর এই দিবসটিতে আমরা যথাযথ মর্যাদা ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে পালন করে থাকি। ১৬ ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর সারাদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়। অনুষ্ঠানের মধ্য থাকে কুচকাওয়াজ, প্রদর্শনী, ছবি অঙ্কন, খেলা-ধুলা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।
আমরা ৪৯ তম বিজয়ের মুহুর্তে পৌছে গেছি। স্বধীনতার স্বাদ উপভোগ করছি। কিন্তু তাও কোথাও যেনো একটা কমতি রয়েছে। যে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আমরা যুদ্ধের মাধ্যমে কাঙ্খিত বিজয়টি এনেছিলাম, সেটি যেনো মলিন হয়ে যাচ্ছে। আমরা গুটি কয়েক লোকের কাছে জিম্মি হয়ে আছি। চারিদিকে আজও অন্যায়-দুর্নীতি, চাদাবাজি-সন্ত্রাসী, খুন রাহাজানি, ধর্ষন নিপিড়ন চলছে। চারিদিকে সাম্প্রদায়িক উস্কানি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। কিন্তু এমনটি হওয়ার কথা ছিলো না।
আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। যেখানে থাকবেনা কোনও ধর্মীয় ভেদাভেদ, সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ। হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সকলের এই দেশ। আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় আমরা বাঙালি। তাই আমাদের স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করতে হলে সবাইকে শপথ নিতে হবে অসাম্প্রদায়িক এক বাংলাদেশের। যেখানে থাকবেনা কোনও অন্যায়, দুর্নীতি, অবিচার। যেখানে থাকবেনা কোনও স্বাম্প্রদায়িক উস্কানি, সেখানে থাকবেনা কোনও ধর্ষক, নিপিড়ক।
আমরা বীরের জাতি। আমরা ভয় পাই না। আমরা যুদ্ধ করে আদায় করেছি আমাদের দেশ। তাহলে কেনও আমরা গুটিকয়েক দুর্নীতিবাজের হাতে জিম্মি হয়ে থাকবো। আমরা যারা তরুণ রয়েছি, তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে সকল প্রকার অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে। গড়তে হবে তাদের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিরোধ। তেজদ্বীপ্ত সাহসী উদ্দীপনার মাধ্যমে তরুণরাই গড়বে আগামীর স্বনির্ভশীল বাংলাদেশ।
তাই স্বাধীনতার ৪৯ বছরে আমার চাওয়া- সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা বন্ধ হোক। অন্যায় অবিচার বন্ধ হোক। ধর্ম, বর্ণ, জাতীর ঊর্ধ্বে আমরা হয়ে উঠি এক নতুন প্রজন্ম। কলুষিত মুক্ত করি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে। সকলেই একসঙ্গে গেয়ে উঠি- ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’।
লেখক- গণমাধ্যমকর্মী।
এনএস/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।