অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার জন্য পদ্মা সেতু
প্রকাশিত : ২৩:৫৬, ১৮ ডিসেম্বর ২০২০
প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী
অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার জন্য পদ্ম সেতু বাংলাদেশের গর্ব । বিশ্বব্যাংক এবং তার সঙ্গে আরও কয়েকটি দাতা গোষ্ঠী যখন পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করল না তখন এ দেশের সাহসী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সুচিন্তিতভাবে দেশে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেন। এটি ছিল তাঁর বিজ্ঞজনোচিত চিন্তা। এক সঙ্গে তিনি পদ্মা সেতুতে রেল ব্যবস্থাপনাও যুক্ত করেন। পদ্মা সেতু যখন সংযোগবদ্ধ হবে তখন সাপ্লাই চেইন কানেক্টিভিটির মাধ্যমে আরও ভাল পরিস্থিতি পাবে ।১৬ ডিসেম্বর ছিল এ দেশের ৪৯তম বিজয় দিবসের বার্ষিকী । তার ঠিক ছয় দিন পূর্বে পদ্মা সেতুর সর্বশেষ ৪১তম স্প্যানটি যখন বসানো হলো তখন সমগ্র জাতির মধ্যে এক ধরনের উল্লাস বয়ে গেল। বিজয়ের মাসে আরেকটি বিজয় অর্জনের সমূহ সম্ভাবনা দেশবাসীকে আনন্দে উদ্বেলিত করেছে।
যদিও বলা হচ্ছে পদ্মা সেতু সম্পূর্ণভাবে নির্মিত হলে জিডিপিতে প্রবৃদ্ধির হার ১.২৬% পর্যন্ত সামগ্রিক অর্থনীতিতে সংযুক্ত হবে, কিন্তু রেল ব্যবস্থাপনা সংযুক্তির ফলে এই হার ২.০৩% হবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে অটোরিগ্রেসিভ ইন্টেগ্রেটেড মুভিং এভারেজের মাধ্যমে হিসাব করে সম্প্রতি বের করেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু সমগ্র দেশে যে অঞ্চলগত বৈষম্য দূর করতে চেয়েছিলেন, পদ্মা সেতু এবং তার সঙ্গে সংযুক্ত রেল ব্যবস্থাপনার ফলে সম্পূর্ণরূপে যখন পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে, তখন থেকে তা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একুশটি জেলার সঙ্গে রাজধানীর সংযোগই কেবল বাড়বে না, বরং দেশে-বিদেশে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। মংলা ও পায়রা বন্দরকে আন্তর্জাতিকমানের করা গেলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন আজ তাঁর অদম্য সাহসী কন্যা শেখ হাসিনার দুর্দমনীয় নেতৃত্বগুণে নিট ফরেন এসেটকে সঠিকভাবে ডমেস্টিক ক্রেডিটে ব্যবহার করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্নের পথে। যদি বিশ্বে কোভিড-১৯ না দেখা দিত তবে পদ্মা সেতুর সড়কপথ সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন হতো আরও আগেই। তারপরও সরকার চেষ্টা করছে। মুজিববর্ষে সব স্প্যান স্থাপন সম্পন্ন করা হয়েছে। সম্পূর্ণ অবয়বে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এবং সড়ক পথে চলাচল যাতে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে শুরু করা যায় সেজন্য। হয়ত আগামী বছরের বিজয় দিবসে যান চলাচলের ব্যবস্থাও চালু করা সম্ভব হতে পারে। পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কর্মপ্রত্যাশী মানুষদের মধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। যেহেতু এতদিন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল শিল্প স্থাপনায় অনগ্রসর ছিল সেটি এখন সঠিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় গুরুত্বপূর্ণ ফল বয়ে আনবে। শিল্পপতি, উদ্যোক্তারা শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে উৎসাহী হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেলে ব্যাস্টিক অর্থনীতিতে যেমন ইতিবাচক প্রভাব রাখবে, তেমনি সামষ্টিক অর্থনীতির গতিপ্রবাহতেও নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। তবে খেয়াল রাখা দরকার যে, কৃষি জমি যেন নষ্ট না হয়। যে সমস্ত পচনশীল দ্রব্য সময়াভাবে বা দীর্ঘসূত্রতার জন্য এক জেলা থেকে আরেক জেলায় স্থানান্তরে সমস্যা ছিল সেটি এখন দূর হয়ে যাবে। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে কৃষকের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ছদ্মবেশী বেকাররা কাজের জন্য রাজধানীমুখী না হয়ে বরং স্থানীয়ভাবে অকৃষিজ খাতে কাজে সংযুক্ত হতে পারবে। এক্ষেত্রে একটি কথা না বললেই নয়, পরিকল্পনা কমিশনকে কিন্তু গিনি সহগ গণনার ক্ষেত্রে যে খাতগুলো সেমি ফর্মাল হয়ে গেছে সেগুলো গণনায় অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করে সরকারের আমলে অর্জিত কর্মসংস্থান এবং সমতার বিষয়ও দারিদ্র্য দূরীকরণে সঠিকভাবে গণনা করতে হবে। কেন গিনি সহগের মান বেড়ে যাচ্ছে এবং তা অসাম্য নির্দেশ করছে এটি আসলে দেশের অব্যাহত উন্নয়নের সঙ্গে যায় না। এজন্যই গণনা পদ্ধতি পর্যালোচনা করে সঠিক তথ্য দেয়া উচিত। আমরা দেখছি দারিদ্র্য হ্রাস পাচ্ছে, মাথাপিছু আয় বাড়ছে, গড় আয়ু বাড়ছে এবং গ্রামীণ অঞ্চল এখন দেশ-বিদেশে রোল মডেল হচ্ছে।যাঁরা অবৈধভাবে তথাকথিত বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসাবে সমস্যার মুখোমুখি হন তাদের অবশ্যই ন্যায়বিচার পাওয়া উচিত।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা উচিত। একই সঙ্গেবন্দর নগরী চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লাতেও কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় স্থানান্তর করা প্রয়োজন। ব্যাংক ব্যবস্থাকে আবার গণমুখী করা দরকার, যা বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে করেছিলেন। সময় এসেছে বেসরকারী ব্যাংকগুলোকে দায়িত্ব নিয়ে সরকারের যে অঞ্চলগত বৈষম্য হ্রাস করার যুগান্তরকারী পদক্ষেপ রয়েছে সেগুলোকে দূর করতে সহায়তা করা। ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করার কথা ছিল। কিন্তু এখন চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সেতু যান চলাচলের উপযোগী করতে এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত সময় চেয়েছে। সম্প্রতি একনেকের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়নে অহেতুক কালক্ষেপণ করে সময় ও অর্থ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। আশা করব আগামী বছরের বিজয়ের মাসের মধ্যেই পদ্মা সেতু যান পরিবহনের জন্য সম্পূর্ণরূপে উপযোগী হয়ে উঠবে।এমনকি সর্বাধিক নকশাকৃত সেতুতে নিয়মিত পরিষ্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন require প্রয়োজনীয়।
একটি হিসাব কষে দেখেছি মানুষের আত্মমর্যাদা, সামাজিক পুঁজি, মানবিক উন্নয়ন বিবেচনায় আনলে পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লোকদের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি তিন শতাংশ হারে বাড়তে পারে। সঙ্গে আবার ওই অঞ্চলগত দারিদ্র্য হ্রাস পেতে পারে ১.২৫%। সেতুর কর্মীরা তারপরে এই অর্থ স্থানীয় সম্প্রদায়কে কর প্রদান করে এবং স্থানীয় পণ্য ও পরিষেবাদি কিনে ফেরত দেয়।আমি এখনও পদ্মা সেতু সংক্রান্ত একটি সেমিনারে স্মরণ করছি, যেদিন পদ্মা সেতুর বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা এবং আইডিবি প্রত্যাখ্যান করেছিল সেই মুহূর্তেবাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতি বক্তৃতা ই ডঃ, মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন সঠিকভাবে দেখেছিলেন যে পদ্মা সেতু অবশ্যই দীর্ঘকালীন স্থায়িত্বের হতে হবে।বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমিতির ভূমিকা প্রশংসনীয় যদিও কিছু অর্থনীতিবিদ এখন বলছেন যে তারা পরামর্শ দিতেন।পদ্মাসেতু প্রয়োজনীয়তা মেটাতে, পুনরায় চাপযুক্ত, বিভাগীয় বা কাস্ট-ইন-প্লেসকে শক্তিশালী করা যেতে পারে।সেতু নির্মাণের কারণে যানজট বিঘ্ন বেশ কয়েক ঘন্টা হ্রাস হবে এবং দেশীয় বাজারে ভাল মূল্য সংযোজন তৈরি করবে। আশেপাশের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক প্রভাব মডেল কাজ করবে এবং ব্যবসা অন্তর্ভুক্ত ব্যবহারকারীর মূল্য, পরিবেশগত ব্যয় এবং ব্যবসায়ের আয় পরিবর্তন। পদ্মা সেতু অর্থনৈতিক মূল্য সংযোজন তৈরি করবে।পদ্মা সেতু নির্মাণের দ্বারা প্রভাবিত একটি
অনুন্নত এবং অপুষ্ট অঞ্চল এবং যেখানে বেশিরভাগ অংশই বন্ধকযুক্ত ব্যবসায়ের অবস্থান সাপ্লাই চেইন ব্যাহত সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে।
সহযোগী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি যে কোন উন্নয়নের কস্ট-বেনিফিট এনালাইসিস করে পরিবেশের যে ক্ষতি হতে পারে সেক্ষেত্রে প্রোএ্যাক্টিভ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যে কোন উন্নয়ন স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সংঘটিত হোক না কেন, পরিবেশগত সমস্যার উদ্রেক করে থাকে এবং দূষণের সমস্যাগুলো বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে বর্জ্য মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই। যারা উৎপাদন করে তারা অনেক ক্ষেত্রেই আইন মানতে চায় না। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ইতোপূর্বে বিভিন্ন সরকারের আমলে ঘটানো সম্ভব হয়নি। কেননা সব সময়ই একটি শক্তিশালী চক্র গেম তত্ত্বের মতো এক-দু’জনকে বাদ দিয়ে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে ভোল পাল্টায় এবং ক্ষমতা যন্ত্রের কাছাকাছি থাকে। এরা হচ্ছে লুম্পেন বুর্জোয়া। অথচ পরিবেশকে যখন শিল্পায়ন হবে তখন দূষণমুক্ত করা না গেলে বাহ্যিক কারণে নেতিবাচক দূষণ ঘটতে পারে। বিপজ্জনক প্রক্রিয়ার বর্জ্যরে ডাম্পিং ঘটতে পারে। একই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে বিপজ্জনক বর্জ্যরে জন্য; কৃষিজ অর্থনীতিতে জমির উর্বরতা হ্রাস পেতে পারে; বনজ সম্পদ উজাড় হতে পারে; ইকো ব্যবস্থাপনা এবং জৈববৈচিত্র্য হ্রাস ঘটতে পারে ও যে সমস্ত সম্পদ পুনর্ব্যবহারযোগ্য সম্ভব নয় সেগুলো সীমাবদ্ধ সম্পদে রূপান্তরিত হতে পারে। এ কারণেই প্রথম থেকেই যেন পদ্মা সেতুতে যান পরিবহনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা সতর্ক থাকি। কলকারখানা স্থাপনের সময় শিল্পপতি এবং উদ্যোক্তারা যেন সবুজ শিল্পায়নের পথ বেছে নেন সেদিকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে এখন থেকেই কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পদ্মা সেতুতে সড়কপথের পাশাপাশি রেলের সংযোগ যত দ্রুত চালু করা যাবে তত উন্নয়নের গতিময়তায় নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস পরিলক্ষিত হবে। এক্ষেত্রে যাতে দীর্ঘসূত্রতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে না ঘটায় সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। যদিও পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৬.১৫ কিলোমিটার পানির অংশে, তবে ভূমি অংশকে বিবেচনায় আনলে এটি নয় কিলোমিটার পর্যন্ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমান সরকার অবশ্য গত এগারো বছরে রেল যোগাযোগ উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে দুর্ভাগ্য হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা একটি রেলের উন্নয়ন প্রকল্প কুমিল্লা থেকে গোমতী, মেঘনা, কাঁচপুর হয়ে সরাসরি ঢাকা আসার কাজটি ঝুলে আছে। আশা করব অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় এটি বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করা হবে, যাতে ঢাকার ওপর চাপ কমে। ঢাকার বাইরে থেকে অফিস করে ফেরত যেতে পারেন লোকজন। এরশাদ সাহেবের আমলে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়। আওয়ামী লীগের সাবেক রেলমন্ত্রীর সময়ও প্রকল্পটি নিয়ে নাড়াচাড়া হয়েছিল, কিন্তু এটি নিয়ে পরে আর এগুতে দেখা গেল না। জনহৈতিষী এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন বন্ধ করা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটানো। একটি কথা না বললেই নয়, প্রকিউরমেন্টের ক্ষেত্রে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে ই-প্রকিউরমেন্টে যাওয়া দরকার, যাতে স্বচ্ছতা ও ন্যায়পরায়ণতা আসে। ই-প্রকিউরমেন্টের সঙ্গে কর্পোরেট গবর্নেন্স সংযুক্ত করতে হবে। আসলে পদ্মা সেতু নির্মাণে অসীম সাহসিকতা এবং ধৈর্যের পরিচয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সমন্বয়ে গড়ে উঠবে। তবে এটি করতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে কাজে লাগাতে হবে। অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ড যদি পরিচালনা করা হয় তবে যে সুফল অর্জনের কথা সেটি কিন্তু হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। আজকে আমাদের সময় এসেছে অর্থনীতি যেহেতু বেগবান রয়েছে। ব্রিজও স্থানীয় অর্থনীতির সমর্থন করে, নির্মাণ শ্রমিকদের এবং মজুরীর কর্মীদের দেওয়া মজুরির জন্য।যে কোনভাবেই হোক সুপরিকল্পিতভাবে শিল্পায়ন করা এবং কৃষি ও শিল্পের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানো, যাতে একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে। পদ্মা সেতু নিয়ে সামগ্রিকভাবে দেশের মানুষ উদ্বেলিত, বিজয়ের মাসে পারদসম প্রত্যাশা এবং বাঙালীর আত্মমর্যাদা বিশ্ব দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমাদের ভুললে চলবে না, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উচ্চ জনবসতির জন্য হয়ত পদ্মা সেতুর আরেকটি দ্বিতীয় সংস্করণ বা সেতুকে বহুতল বিশিষ্ট করতে হতে পারে। পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে পর্যায়ক্রমে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে শিল্প-কলকারখানায় অটোমেটিক ফায়ার ফাইটিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ফলে রোবোটিকস অবশ্যই মধ্যম ও বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহে দরকার হবে। এমনকি সিএসএমই সেক্টরেও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্লক চেইন, আইওটি, বিগ ডেটার ব্যবহার হবে। মংলা এবং পায়রাবন্দর যেমন এটিকে সঠিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ পাবে ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপন ও নির্মাণের কাজও হাতে নিতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, "স্বল্পমেয়াদে মূল এবং গন্তব্য পয়েন্টগুলি
হবে Dhak - দারসানা আন্তর্জাতিক রুট, যা এর উত্তর-পূর্ব অংশকে সংযুক্ত করবে।পদ্মা সেতু - পুকারিয়া - ফরিদপুর - রাজবাড়ি - পোড়াদহ - দরসানা - রানাঘাট - কলকাতা।এটির জন্য কেবল 70০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রয়োজন হবে। এর যথেষ্ট অংশের জন্য জমি রেলপথটি ইতিমধ্যে 70 কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের জন্য অর্জিত হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে পর্যটন শিল্প ব্যবস্থাও গড়ে উঠবে। দক্ষিণ-পশ্চিমের একুশটি জেলায় যদি কর্মদক্ষতা বাড়ানো যায়, মানুষের জন্য সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় ঋণ গ্রহীতাদের ব্যাংকের আওতায় প্রশিক্ষণ দেয়া যায়, তবে তা ইতিবাচক প্রভাব রাখবে অবশ্যই। তারুণ্যনির্ভর বিকাশ ঘটাতে পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। বিশ্বমানের হাসপাতাল ও হোটেল-মোটেলও তৈরি হতে পারে। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হলে পদ্মা সেতু আরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। একই সঙ্গে নৌপথেও পণ্য পরিবহন অব্যাহত রাখতে হবে।ধন্যবাদ আমাদের পদ্মা সেতু প্রস্তুত করার জন্য মহান নেতা শেখ হাসিনা যিনি আমাদের গর্ব এবং ধারাবাহিকতা প্রেরণার উত্স।
লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট এবং আইটি এক্সপার্ট
pipulbd@gmail.com
আরকে//
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।