ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বিষাক্ত মাদকের ছোবল থেকে বাঁচার উপায়

মীর ইমরান আলী

প্রকাশিত : ২০:৪৪, ৯ জানুয়ারি ২০২১

মীর ইমরান আলী

মীর ইমরান আলী

তরুণরাই দেশ, জাতি ও সমাজের উজ্জ্বল নক্ষত্র, জাতির আগামী দিনের কর্ণধার। দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে জাতির মূল চালিকাশক্তি হলো তরুণরাই। তরুণ প্রজন্মই আমাদের দেশ-জাতিকে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে টেনে নেয়ার বিরাট ভূমিকা রাখে এবং রেখে আসছে যুগে যুগে। তবে এই তরুণ ও যুব সমাজের একাংশ নানাভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে মরণ নেশা মাদকের সঙ্গে।

মাদক- এক অভিশাপের নাম, এক সর্বনাশা ছোবলের নাম। এটি এমন এক সামাজিক সমস্যা, যা শুধু অপরাধের জন্ম ও বিকাশ সাধন করে তা-ই নয়, বরং এর বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এটা এমনই এক বিষ, যা ধীরে ধীরে বিবর্ণ করে দিচ্ছে আমাদের সবুজ তারুণ্যকে। নষ্ট করে দিচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ। 

এ দেশে রয়েছে পর্যাপ্ত তারুণ্যনির্ভর জনশক্তি। দেশের এ মূল্যবান সম্পদ মাদকের চোরাচালান ও অপব্যবহারের কবলে পড়ে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি দেশের অর্থনীতিও হচ্ছে বিপর্যস্ত, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। নেশার ছোবলে পড়ে এ যুবসমাজ কর্মশক্তি, সেবার মনোভাব ও সৃজনশীলতা হারিয়ে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করছে তিলে তিলে। 

দেশগড়ার কারিগর সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে মাদক। মাদকের কারণেই অনেক মা-বাবার বুক ফাটা কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে যায়। আর এই মরণ নেশার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সামাজিক কাঠামোয়, আর্থ সামাজিক উন্নয়নে, ভারসাম্যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে- এক কথায় জীবনের সর্বত্র। 

এদেশে মাদক উৎপাদন হয় না ঠিকই, তবে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে অঞ্চলটি মাদকদ্রব্য অপব্যবহারের ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি দ্রুত নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহার আর জনসচেতনতার অভাবে মাদক সমস্যা দিন দিন মহামারী আকার ধারণ করছে। 

পাশাপাশি সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যাচ্ছে মাদক গ্রহণের চালচিত্র। গাঁজা, এলকোহল আর আফিম তো রয়েছেই। সঙ্গে যোগ হয়েছে হেরোইন, ফেন্সিডিল, বিভিন্ন মাদক ইনজেকশন এবং ইয়াবা। শহর থেকে সর্বনাশা মাদক ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামে গ্রামে, উচ্চবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে। 

বর্তমানে দেশে প্রায় ৬০ লাখের বেশী অবৈধ মাদক গ্রহণকারী রয়েছে। যাদের বেশীরভাগেরই বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। মাদকের নেশায় আসক্ত হবার পেছনে যেসব কারণ কাজ করে, তার মধ্যে রয়েছে বন্ধু বান্ধবের কুপ্রভাব, কৌতূহল, মানসিক সমস্যা, পারিবারিক অশান্তি, পরিবারে মাদকের ব্যবহার, সহজলভ্যতা, বেকারত্ব, হতাশা এবং সচেতনতার অভাব। 

আবার অনেক সময় অধিকাংশ বাবা-মা-ই খবর রাখেন না যে, তার আদরের সন্তান ঘরের বাইরে কি করে? এমনকি অনেক বাবা-মা ঘরের ভেতরে সন্তান কি করে সে খবরও জানেন না। বাবা-মায়ের এই অসতর্কতার কারণেও অনেক সময় ছেলে-মেয়েরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। 

বিশ্বের প্রতিটি দেশেই কমবেশি মাদক সমস্যা বিদ্যমান। বাংলাদেশেও মাদক ও মাদকাসক্তি এক জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। দেশের অধিকাংশ মাদকসেবী কিশোর-কিশোরী এবং যুবক-যুবতী। এই ভয়াল মাদক তারুণ্য, মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ-মায়া, ভালবাসা, পারিবারিক বন্ধন। 

কয়েক বছর পূর্বে ঢাকার উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার একমাত্র মেয়ে ঐশী মারণঘাতী এই মাদকে আসক্ত হয়ে নিজের বাবা-মাকে হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। আদরের সন্তানটি শুধু মাদকে আসক্ত হওয়ার কারণেই নিজ সন্তানের হাতে জীবন দিতে হয়েছে এরকম বহু বাবা-মাকে। সচেতনতার পাশাপাশি প্রতিটি স্তরের মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাই পারে মাদক নামের এই প্রাণঘাতী ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ দিতে। 

তাই মাদকাসক্তি প্রতিরোধে প্রথম পদক্ষেপটি নিতে হবে পরিবার থেকেই। সন্তানের বন্ধু হোন। তার সাথে কথা বলুন। সে সারাদিন কি করছে, কাদের সাথে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে খবর নিন। ভালো বন্ধু নির্বাচনে সাহায্য করুন। যে কোনও সমস্যায় পাশে থাকুন। 

কৈশোর একটি নাজুক সময়। এই বয়সীদের দেখভাল করা, ভুল শুধরে দেয়ার কাজটি সহজ নয়। শুধুই উপদেশ দেবেন না, বরং সমমনা হয়ে বোঝানোর চেষ্টা করুন। নিজেকে পরিবারের ছোটদের জন্য রোল মডেল হিসেবে ভাবুন। এমন কোনও অভ্যাস নিজের ভেতর তৈরী হতে দেবেন না, যা সন্তান বা ছোট ভাই বোনের মধ্যে দেখতে চান না। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করুন, ধূমপান থেকে দূরে থাকুন আর মাদককে ঘৃণা করুন।

কৌতূহলও মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ার একটি বড় কারণ, তাই আগে থেকেই এ ব্যাপারে ওদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব জাগিয়ে তুলুন।

লেখক- সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থী, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি