ক্রিকেট উৎসব ও বদলে যাওয়া সন্দ্বীপ-১
প্রকাশিত : ২২:৪৭, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | আপডেট: ২০:৪৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ক্রিকেট উৎসবে মাঠে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ
শিরোনামে একটু খিটমিট আছে। মনে হয় দুটি অংশ। একটি ক্রিকেট উৎসব ও অন্যটি সন্দ্বীপের উন্নয়ন বা অবনতি। কোনটা দিয়ে শুরু করবো। উৎসব না উন্নতি? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মাথায় আসে, আসলে ক্রিকেট উৎসবইতো বদলে যাওয়া সন্দ্বীপের অন্যতম একটা দৃষ্টান্ত হতে পারে। উন্নতি বা বদলে যাওয়া মানে শুধু অবকাঠামোর উন্নতি নয়। মানুষের সুকুমার বৃত্তির চর্চা ও বিকাশও উন্নতির বড় অর্জন। একটা বাড়িতে গেলে তার রান্নাঘর ও বাথরুম বলে দেয় সেই বাড়ির অবস্থান কেমন। তেমনিভাবে একটি রাষ্ট্র, দেশ জাতি কিংবা এলাকা বা পাড়া-মহল্লার উন্নতি কতটুকু হয়েছে তা মাপার অন্যতম সূচক হচ্ছে সেই দেশ, জাতি বা এলাকার শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে কতটুকু উন্নত তার উপর।
বিজয়ী দলকে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন-সাংসদ পত্নী মাহমুদা মাহফুজ, শিক্ষাবিদ ড. সালেহা কাদের
জানুয়ারির (২০২১) ২২ তারিখ সন্দ্বীপের পাবলিক হাইস্কুলের মাঠে দু’দিনব্যাপী এই ক্রিকেট উৎসব শুরু হয়। শেষ হয় পরের দিন ২৩ তারিখ। উৎসবতো নয় যেন এক মিলনমেলা। স্থানীয় এবং প্রবাসী সন্দ্বীপবাসীর এই মিলন মেলায় হেলিকপ্টারে করেও যোগ দিয়েছেন ঢাকার অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং তরুণ শিল্পপতিরা (আবুল কাশেম, উৎসবের স্পন্সর পেট্রোমেক্সের কর্মকর্তা আকবর হায়দার মুন্না, ড. সালেহা কাদের প্রমুখ)। সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা মধ্যমনি হয়েই এ উৎসবের উদ্বোধন এবং পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। উৎসবে তাঁর নিজেরও একটি এবং অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দলের মধ্যে আমাদের প্রিয় স্কুল কার্গিল হাইস্কুলের নামে কার্গিল দ্যা লিজেন্ড নামেও একটি দল ছিল।
বিজয়ী দলের এক খেলোয়াড়কে মেডেল দিচ্ছেন সাংবাদিক কানাই চক্রবর্তী
সন্দ্বীপের এক্স ক্রিকেটারদের নিয়ে এই নান্দনিক উৎসবের মূলে ছিলেন বেশ কয়েকজন। এরা হচ্ছেন মনির হোসেন রোকন, নাট্যকর্মী সুজাত শিমুল, মো. নাজিম উদ্দিন, আবু হেনা মো. মহসীন, আমিনুল করিম বিপুল, মো. আবদুর রহিম জুয়েল, মাহবুবুল হক আদর, আজিজুর রহমান সুমন প্রমুখ। এই নামগুলো আমি উল্লেখ করলাম এই কারণে তাদের অসাধারণ শ্রম ও মেধায় এই উৎসবটি সম্পন্ন হয়েছে এবং সন্দ্বীপের ক্রীড়াঙ্গনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। সন্দ্বীপ এখন আলোয় আলোকিত। সাগরের তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ এসে পুরো সন্দ্বীপকে আলোকিত করছে। আমার বিশ্বাস, উৎসবের শেষ দিন সমাপনী অনুষ্ঠানে আতশবাজি থেকে যে আলো বিচ্ছুরিত হয়েছে, তা ভবিষ্যতে ক্রিকেটকেও আলোকিত করবে। সন্দ্বীপে আরো এগিয়ে যাবে ক্রিকেটে। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন ক্রিকেটার, যারা একদিন সাকিব-মুশফিক এর মত হয়ে জাতীয়ভাবে দেশে এবং বিশ্বে আলোকিত হবে।
সন্দ্বীপে সাবেক ক্রিকেটারদের মিলনমেলা
মূলত এই ক্রিকেট উৎসবকে সামনে রেখে আমার সন্দ্বীপ যাত্রা। সন্দ্বীপে ক্রিকেট খেলার প্রবর্তকদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম এবং আয়োজকদের স্বীকৃতির মত ভালো লাগার কারণে তাদের আমন্ত্রণটা লুফে নিয়েছিলাম। বিশেষ করে আমার সন্দ্বীপ ভ্রমণের জন্য মিতা ভাইর (সংসদ সদস্য) আগ্রহ এবং আন্তরিকতাকে উপেক্ষা করতে পারিনি। এর আগে রোকন (মনির হোসেন রোকন) বারবার স্মরণ করে দিয়েছে এবার সন্দ্বীপ যেতেই হবে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দির কারণেও পরিবারসহ সন্দ্বীপ যাওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। সব মিলিয়ে আমার রথ দেখা এবং কলা বেচারমত অবস্থা। তবে একথা নিদিষ্ট করে বলতে পারি, আমার এবারের সন্দ্বীপ সফর নানা কারণেই বিশিষ্ট হয়ে থাকবে। নাটোরের বনলতা সেন যেমন রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশকে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিল, তেমনি আমার প্রিয়দর্শিনী সন্দ্বীপ আমাকে ১১ দিনে ১১ বছরের প্রশান্তি দিয়েছে। মাঝে মধ্যে আমার ভাবনায় এসেছে আমি এমন কি বা কি করেছি।
ক্রিকেট ফেস্টিভ্যালের শেষদিনে বক্তব্য রাখছেন সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা
আমি সন্দ্বীপের একজন স্কুল শিক্ষকের সন্তান এবং একেবারেই সাধারণ একজন মানুষ, রুটি-রুজির জন্য সাংবাদিকতার মত কিছু একটা করছি ঢাকায়। এর চেয়ে বেশি আমি কিছু দাবি করার সুযোগ নেই। সেই আমি এত ভালোবাসা কিভাবে পেলাম। সন্দ্বীপ থেকে যেভাবে আমি দুহাতে ভালোবাসা নিয়ে এসেছি, প্রকৃতপক্ষে আমার তার সিকিভাগ পরিশোধ করার সামর্থ্য নেই। যখন যেখানে গিয়েছি সেখানকার মানুষ পরিস্থিতি এবং পরিবেশ আমাকে আপ্লুত করেছে। প্রতিটি স্থান এবং ক্ষণে যেন বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। সন্দ্বীপ এতটাই বদলে গেছে যে, আমরা যখন সন্দ্বীপে ছিলাম তা কল্পনাও করতে পারিনি। রাস্তাঘাট, স্থাপনা এমন কি ব্যক্তিগত বাড়িঘরেও কি আধুনিকতার ছোঁয়া। বিশেষ করে আমার দেখা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং কলেজ) স্থাপনা আমাকে বিশেষভাবে মুগ্ধ করেছে।
মঞ্চে বসে ফাইনাল খেলা উপভোগ করছেন সাংসদ মিতা সহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ
আমার ১১ দিনের সফরে আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্রথম কয়েক দিন থাকার জন্য হোটেলের কয়েকটি কক্ষ বরাদ্দ ছিল। তবে আমি একরাত থাকার পর খুব সকাল সকাল হোটেল ছেড়ে দীর্ঘদিনের বা এর আগে না দেখা আত্মীয় এবং বন্ধুদের আতিথ্য গ্রহণ করা শুরু করি। কোন বাড়িতে থেকেছি- খেয়েছি, কোন বাড়িতে খেয়েছি কিন্তু থাকিনি। তাদের নামগুলো যুক্তিসংগত কারণে উল্লেখ না করে বলছি (কারো নাম যদি বাদ যায়), তাদের আতিথেয়তা আমাদের মুগ্ধ করেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে মনে হয়েছে তারা তাদের সামর্থ্যর চেয়েও বেশি করছেন। আবার অনেকের আমন্ত্রণ রক্ষা করতে পারিনি তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। প্রকৃত অর্থে সন্দ্বীপে আমার আত্মীয়-স্বজন বেশি না, কিন্তু তারাসহ সন্দ্বীপের সব মানুষ যেন এই ১১ দিনে আমার আত্মীয়ের চেয়েও বেশি হয়ে গিয়েছিল। আগেই বলেছি নাম উল্লেখ করতে গেলে একটি বড় তালিকা হয়ে যাবে, তাদের নাম এখানে লিখা না হলেও নিশ্চিত করে বলতে পারি, হৃদয়ে এবং মননে তাদের নাম লিখা থাকবে অনেক দিন।
লেখক পরিচিতি: উপপ্রধান প্রতিবেদক, বাসস।
কেআই/এসি
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।