বাংলা ভাষা শুদ্ধকরণ ও জনসম্পৃক্তকরণ দরকার
প্রকাশিত : ২২:১২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১
বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে পাওয়ার জন্য যে আন্দোলন আমাদের পূর্ব পরুষরা গড়ে তুলেছিল তা আমাদেরকে ভাষার মাধ্যমে অন্যায়-অন্যায্য কাণ্ডকারখানা থেকে বিরত রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার জন্য যে আন্দোলন-সংগ্রাম সেক্ষেত্রেও আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন যে, ‘... এই সময় পাকিস্তানের সংবিধান রচনা করার কথা ঘোষণা দেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি বাঙালী প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। ছাত্র সমাজ এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। এই আন্দোলনে ১৯৪৯ সালে আমার আব্বা গ্রেফতার হন। একটানা ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তিনি বন্দি ছিলেন।’
বস্তুত কারাগারে থেকেও ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু মহীরুহের ন্যায় প্রেরণা যুগিয়েছেন। মাতৃভাষার আন্দোলনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপোসহীন। এ অঞ্চলে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত বাংলা ভাষার সপক্ষে যে দুর্বার মানুষের আকাক্সক্ষার সূচনা হয় তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা ভাষার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা ঘটে। বাঙালী জাতি স্বৈরাচারী পাকিস্তানীদের অত্যাচারে দুর্বার গতিতে জেগে ওঠে। আন্দোলনের বেগ এত উত্তাল ছিল যে, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হয়েছিল। অবশ্য ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা সংবিধান বাতিল ঘোষণা করেছিল। আবার ১৯৬৩ সালে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জনরোষের কারণে সামরিক শাসকরা যে সংবিধান প্রবর্তন করে তাতে বাংলা ভাষাকে বাঙালী জাতির ভাষা হিসেবে মর্যাদা দিয়েছিল। ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু বাঙালীর জন্য স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিলেন। তার এ প্রয়াস ছিল পাকিস্তানীদের ঘৃণ্য শোষণ-বঞ্চনা এবং নানা দিক থেকে বাঙালীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পৌঁছে দেয়া। ছয় দফা কর্মসূচীর মূল লক্ষ্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তানীদের দ্বারা শোষিত, নিগৃহীত মানুষের শোষণের অবসান ঘটানো। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রে ভূমিকা হিসেবে কাজ করেছিল, যাতে করে মানুষ নিজেদের অধিকার ফিরে পায়। বস্তুত দীর্ঘকাল ধরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, আন্দোলন এবং একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালী বিজয়ীর বেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত বাংলা ভাষা, বাঙালীদের পরিপূর্ণ মাতৃভাষা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯৭২ সালের সংবিধানে বাংলাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা করা হয়েছিল। অথচ যখন ব্রিটিশরা পাকিস্তান সৃষ্টি করল, তারপর ১৯৫১ সালে পাকিস্তানে যে আদমশুমারি হয়েছিল সেখানে দেখা যায় যে, বাঙালী হচ্ছে ৫৪.৬%, পাঞ্জাবী হচ্ছে ২৮.৪%, উর্দুভাষী হচ্ছে ৭.২%, পশতু হচ্ছে ৭.১%, সিন্ধী হচ্ছে ৫.৮% (দ্রষ্টব্য : মোবাশ্বের আলী, বাংলাদেশের সন্ধানে, স্টুডেন্ট ওয়েজ)। এ কারণে মোবাশ্বের আলী আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘বাংলা সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা। অথচ নবপ্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানে বাংলা ভাষার কোন স্থান নেই, মর্যাদা পাওয়া তো দূরের কথা।’
বাংলা ভাষার গুণগতমান উন্নত হলে ২১০ মিলিয়নের অধিক বাংলা ভাষাভাষী বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের সব দেশের বাংলা ভাষা-সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ। ১৯৫২ সালে যদি ভাষা আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে না পড়ত তবে স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি হতো কিনা সেটি এখন প্রশ্নের বিষয়। ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের কর্মসূচী পালন করতে হয়েছে। শেখ মুজিবকে সংসার থেকে কারাগারে আবদ্ধ রাখলেও তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পিছপা হননি। ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করতে কারাগারে থেকে যে সমস্ত নির্দেশ পাঠিয়েছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গণআন্দোলনে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন ছাত্রনেতারা। পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ অন্যায়ভাবে বাঙালীদের মাতৃভাষা কেড়ে নিয়ে উর্দুকে ১৯৪৮ সালে স্থান দিতে চেয়েছিলেন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। এমনকি জনসংখ্যার বিচারও করা হয়নি, কোন ধরনের গণভোট করার প্রয়োজনবোধ করেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জিন্নাহর ঘোষণাকে মানতে না পেরে তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যান করেছিল। শিক্ষিত এবং প্রগতিশীলরা বাংলা ভাষার দাবিকে ক্রমশ জোরদার করে তুলেছিল। শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করলেও তিনি তাঁর নীতিতে অবিচল সত্যের পথে থাকতেন আপোসহীন। মাঝখান থেকে তাঁর সংসারের সদস্যদের অর্থ ও মনোকষ্ট বাড়তেই থাকে। তবে মানসিকভাবে দৃঢ়চেতা হওয়ায় জেলে থেকেই আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।
একজন ভাষাসৈনিকের সন্তান হিসেবে বাংলা ভাষার বিকৃতি দুঃখ দেয়। অথচ মাতৃভাষাকে পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি শুদ্ধভাবে অনুশীলন করা প্রয়োজন। বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের ফল হিসেবে ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর তখনকার বর্ধমান হাউসে বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বস্তুত বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রচার, প্রসার ও বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমিকে মৌলিক ভূমিকা পালন করার কথা। বাংলা ভাষার গবেষণা, প্রকাশনা ও বিশ্বের সেরা অনুবাদকর্মেও বাংলা একাডেমির কাজ করার কথা। বাংলা একাডেমি কতটুকু দায়িত্বশীলতার সঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় দায়িত পালন করেছে তা ভাবীকালই নির্ধারণ করবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডকে বাংলা একাডেমির সঙ্গে একীভূত করে এবং একাডেমির প্রশাসনিক কাঠামোতেও পরিবর্তন সংঘটা। বাংলা একাডেমি প্রধানের পদটি মহাপরিচালক হিসেবে উন্নীত করা হয়। দুটি পৃথক নতুন বিভাগও খোলা হয়েছিল- পাঠ্যপুস্তক এবং ফোকলোর। বাংলা একাডেমি বেশ কিছু ভাল অভিধানও প্রকাশ করেছে। উচ্চারণ নিয়েও তাদের অভিধান রয়েছে। কিন্তু যেহারে উচ্চারণের বিকৃতি ঘটছে তা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কি গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা পালন করেছেন? বাংলা ভাষাকে বিকৃত করে যেভাবে বিভিন্ন রেডিও-টিভি চ্যানেলে ব্যবহার করা হচ্ছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। যে মাতৃভাষায় দক্ষ সে ইংরেজীতেও দক্ষ হবে। বর্তমান বাস্তবতায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী কেবল সঠিক সিলেবাস না জানায় চাকরির বাজারে যখন প্রবেশ করছে তখন নিজেকে ইংরেজী কিংবা বাংলা কোন ভাষাতেই পরিচয় দিতে সক্ষম হচ্ছে না। ভাইভা বোর্ডে কিংবা ইন্টারভিউতে যখন থাকি তখন লজ্জা লাগে যেন এই ভাষার জন্য আমাদের পূর্ব পরুষরা জীবন দিয়েছিলেন।
মাতৃভাষার ভিত্তিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বগুণে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। ইউজিসি, বাংলাদেশের ইতোপূর্বেকার চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কোন কোন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ স্টাডিজ অন্তর্ভুক্ত করলেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে অন্তর্ভুক্ত করেনি। এ ব্যাপারে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছি যে, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ তাদের বিবিএর পাঠ্যক্রমে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে কোর্স হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেনি। আবার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএর পাঠ্যক্রমেও দেখা গেল যে, তারাও বাংলা ভাষা ও সাহিত্য কোর্সটি অন্তর্ভুক্ত করেনি। আসলে ভাষার প্রতি এ সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যূনতম দায়বদ্ধতা না থাকায় উপেক্ষিত হচ্ছে বাংলা ভাষা। জানি না বর্তমান ইউজিসি তাদের ইতোপূর্বেকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কিনা। নচেৎ যারা স্নাতক পর্যায়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে তিন ক্রেডিটের জন্য অন্তর্ভুক্ত করবেন না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। এখন যারা স্নাতক পর্যায়ে বাংলা ভাষা শিখছে তাদের অধিকাংশের সিলেবাস পর্যালোচনা করে আক্কেল গুড়ুম। কারণ হচ্ছে তারা বাংলা ভাষা ও সাহিতহ্যকে ব্যাকরণের জালে আবদ্ধ করে ফেলছে। অথচ ব্যাকরণের পূর্বে দরকার হচ্ছে বাংলা কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, অনুবাদ, মুক্তিযুদ্ধের কালজয়ী ঘটনা অবলম্বনে চলচ্চিত্র, আত্মজীবনী, যেমন বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অন্তর্ভুক্ত করে পাঠ্যক্রম তৈরি করা। বাংলা সিলেবাস নিয়ে আরও কাজ করতে গিয়ে ভিরমি খাওয়ার জোগাড় হয়েছে। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই সুকুমার বৃত্তির ও মননশীল কবিতা, গল্প, উপন্যাস হেফাজতের দাবির মুখে হয় বাদ দেয়া হয়েছে কিংবা পরিবর্তন করা হয়েছে। এটি রীতিমতো দুঃখজনক। জাতীয় টেক্সট বুক বোর্ডের আওতায় বইগুলোতে সম্পাদনায় বড় বড় লেখকদের নাম দেয়া হয়েছে, অথচ ভেতরে দেখছি কাগুজে বাঘ। আবার প্রাথমিক ক্লাসসমূহে যে সমস্ত চিত্রাঙ্কন করা হয়েছে সেগুলো কিন্তু বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় কিংবা বাস্তবতাবিবর্জিত। আশা করব প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বইগুলো উপযুক্ত বাংলা শিক্ষাবিদদের দ্বারা পর্যালোচনা করা হোক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি যে অবিচার হচ্ছে তা বিসিএসের প্রশ্নমালাতেও পরিস্ফুট হয়ে উঠছে। ব্যাকরণের আধিপত্য অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে বাংলা ভাষা শিক্ষা থেকে বিমুখ করছে। সহজভাবে কঠিনকে প্রকাশ করাই হবে মাতৃভাষার প্রতি সম্মান জানানো। আকাশ সংস্কৃতি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে এমন একটি বিরূপ পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে যাতে মানুষ সঠিকভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারছে না। তাতে বিকৃত উচ্চারণ ও অপসংস্কৃতি প্রবেশ করছে। ভাষার মাসে বাংলা ভাষাপ্রেমী প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ রাখব- বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করে সাধারণ আমজনতার উপযোগী সহজভাবে প্রকাশযোগ্য বাংলা পাঠ্যক্রম প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে বলার জন্য। আবার যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কারিগরি প্রতিষ্ঠান বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে তাদের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করবে না তাদের বাধ্য করতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক কষ্ট করে বাংলাদেশ এক্রেডেন্সিয়াল কাউন্সিল প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় দেশের পাঠ্যক্রমের উন্নয়ন ও বিশ্বায়নের সঙ্গে যোগাযোগকল্পে তৈরি করেছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ল না। শিক্ষার মান উন্নয়নে বাংলাদেশের নিজস্ব একটি মানসম্মত শিক্ষার ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা এবং বাংলা ভাষাকে নিয়ে কাজ করতে আমরা উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের কথা বলি, কিন্তু যেটুকু সরকার উন্নয়নের জন্য করেছে তাদের কার্যক্রম কেন বিবেচনা ও তদারকি করা হয় না এবং তারা যদি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হন কেন তবে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করা হয় না? এ অচলায়তন ভাঙবে কে? বাংলাদেশে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে কেউ হয়ত মৌলিক কোন অনুবাদকর্ম করেছেন। কয়েক বছর পর দেখা গেল প্রচ্ছদ ও প্রথম কয়েকটি পাতা বদলিয়ে অখ্যাত কোন প্রকাশক থেকে অন্য ব্যক্তি নিজের নামে তা বের করে ফেলেছেন। এদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া দরকার। বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষা প্রদান দুরূহ নয়, তবে উপযুক্ত অনুবাদকর্ম করার জন্য বাংলা একাডেমি ও এশিয়াটিক সোসাইটিকে অনেক দাযিত্ব এবং গতিশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়ার জন্য বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বইকেও অন্যান্য দেশের ভাষায় অনুবাদ করা দরকার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন : ‘...শিকার কিছুমাত্র সুখের হইত না, যদি মৃগ যেখানে-সেখানে থাকিত এবং ব্যাধকে দেখিয়া পালাইয়া না যাইত।’ ঠিক তেমনি বাংলা ভাষাকে কেবল কথামালা দিয়ে পণ্যে পরিণত করা ঠিক নয়, বরং নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভৌগোলিক পরিবেশে নিজস্ব অধিকার এবং আত্মমর্যাদার বিষয়বস্তুতে পরিণত করতে হবে। তবেই আমাদের মধ্য থেকে ঔপনিবেশিক আমলের দাসত্ব প্রথা- ভাইভাতে সুটেড-বুটেড হয়ে যাওয়া, কথায় কথায় ভুল ইংরেজী বলার মনমানসিকতা দূর হবে।
লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট, আইটি এক্সপার্ট
pipulbd@gmail.com
আরকে//
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।