ঢাকা, বুধবার   ০৬ নভেম্বর ২০২৪

আমাদের পাপ বনাম করোনার অভিশাপ

বাপ্পী রহমান

প্রকাশিত : ১৬:০০, ২ এপ্রিল ২০২১

অনিশ্চিত ঝড়ের সুনিশ্চিত ধর্ম হচ্ছে- ঝড় থেমে যায়। ঝড় থেমে গেলেও রেখে যায় অনেক ক্ষত। ধুলোয় ধোঁয়াশা হয়ে ওঠে জীবন! তবে এও সত্য- প্রকৃতির ওপর আমাদের আধিপত্য তো আর কম দিনের নয়। আমরা যেদিন থেকে নিজেকে “র‍্যাশনাল অ্যানিম্যাল” তকমাটি দিয়েছি, সেদিন থেকেই নিজের পিঠ চাপড়ে এতই খুশি যে, নিজেদের যুক্তি-বুদ্ধিকে প্রশ্ন করার প্রয়োজন বোধ করছি না। অথচ প্রকৃতি স্থবির নয়! 

প্রায় সোয়া’শ বছর আগে আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসু জানান দিয়ে গেছেন- এমনকি একটি বৃক্ষও অনুভূতিপ্রবণ, আঘাতে সে ন্যুব্জ হয়, ভালোবাসায় উৎফুল্ল হয়। হতে পারে, করোনার আক্রমণ তাই মানবসভ্যতার ওপর প্রকৃতির নিষ্ঠুর জবাব। শেষতক হয়তো মানবসভ্যতা টিকে যাবে কিন্তু যারা বেঁচে যাবে তারা থাকবে এক ভিন্ন পৃথিবীতে। 

ফিনান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ ইউভাল নোয়াহ হারারির নিবন্ধ ‘The World After Coronavirus’-এ দুটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প উঠে এসেছে। মোটা দাগে প্রথমটি হচ্ছে- নাগরিক ক্ষমতায়ন, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে- বৈশ্বিক সংহতি। হারারি নতুন কিছু বলেছেন তা আমরা ঠাওর করি না। সর্বশেষ ২০১৫ সালে জাতিসংঘে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বা ২০৩০ এজেন্ডা গৃহীত হওয়ার পর পৃথিবীব্যাপী উন্নয়ন চিন্তায় ‘রূপান্তরমুখী, অংশীদারিত্বমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সার্বজনীন’ দর্শনের ঢেউ এসেছে। তাহলে কী আছে সঙ্কটের মূলে?

কে জানে, হয়তো এইসব গালভরা তত্ত্ব নাজিল করে পৃথিবীকে ফেরি করার বস্তুতে পরিণত করে ফেলেছি আমরা। অথচ আমাদের পৃথিবী কেবল একটাই! হয়তো সে কারণেই মহামতি মার্কস জানান দিয়ে গেছেন, ‘আমাদের বেঁচে থাকার যে শর্ত, তাকে ব্যবসার পণ্য করে তুললে আমরা নিজেদের ধ্বংস করার শেষ ধাপে পৌঁছে যাব।’

আবারও ফিরে আসছি হারারির কথায়, হোক তা ‘ওল্ড ওয়াইন ইন অ্যা নিউ বটল’! আমাদের বেছে নিতে হবে মানুষের ক্ষমতায়ন আর সংহতির পথ। তাতে বিজয়টা শুধু করোনা ভাইরাসের বিপক্ষেই হবে না, হবে ভবিষ্যতের সমস্ত সংকটের বিরুদ্ধেও। 

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটছে তা নেহাতই বিকৃত পুঁজিবাদ! আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে একটি অন্ধ কিংবা সর্বোচ্চ এক চক্ষুওয়ালা দৈত্য। তাই আমরা বাধ্য হয়ে উপভোগ করছি নিষ্ঠুর নিঃসঙ্গতা! আহ, জীবন!

লেখক- সহযোগী অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি