ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

গ্রামে গ্রামে হবে করোনা পুনর্মিলনী! 

মানিক মুনতাসির

প্রকাশিত : ১৩:১৩, ১৩ মে ২০২১ | আপডেট: ১৩:১৪, ১৩ মে ২০২১

বাঙালী এক অদ্ভুত আর অকুতোভয় জাতি। জয়তু বাঙালী। করোনা নিয়ে ভয়ভীতি যতই দেখান, ভারতে যে লাশের সারি, সেটা দেখেও আমরা ক্ষান্ত হই না। হাসপাতালে সিট খালি নেই। আইসিইউ খালি নেই। পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেই। পকেটে টাকা নেই। মনে শান্তি নেই। মানুষের কাজ নেই। বিদেশ ফেরত কর্মহীনদের যাওয়ারও জায়গা নেই। 

প্রায় দু’বছর ধরে মানুষের মনে আনন্দও নেই। এজন্য হয়তো খাবার আর আনন্দের আশায় ঐতিহাসিক স্থানের গাছ কেটে রেস্টুরেন্ট বানাই। গাছ কাটা তো নয়, যেন পরিবেশের ভারসাম্য কাটি!
 
এতসব নেই-এর মাঝে কারও কারও পেটে খাবারও নেই। ফলে হাসপাতালের বেড, আইসিইউ, অক্সিজেন, ওষুধ- এসব নয়, কেবল ঈদ আনন্দই চাই। ঈদ আনন্দের বিকল্পও যে নাই।

ঈদে ঘরে ফিরতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মারা যাই, এরপরও বাড়ি যেতেই চাই। দূরপাল্লার কোনও বাহন নাই জেনেও রাস্তায় নেমে পড়ি। আবেগপ্রবণ জাতি আমরা, বউহারা হতে চাই না। তাই তো মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে স্ত্রী-সন্তানের কাছে ছুটে চলি। এটা ভালোবাসা! না মরণবাসা, নাকি গোয়ার্তুমি- কেউ কেউ হয়তো তাও ভাবছি। 

আমরাও পারি বটে! সবকিছু খুলে দিয়ে গাড়ি বন্ধ করে স্বাস্থ্যবিধি মানার লোক দেখানো চিৎকার আমরা করেই যাচ্ছি। কিন্তু গরীব, অসহায়, কর্মহীন মানুষের ঈদ কোথায়/কিভাবে কাটবে তার খবর কজনই বা রাখি। 

আবার জীবন নিয়ে বাজিও ধরি! মরি বাঁচি- যা হবার হোক, ঈদটা যেন বাড়িতেই হয়। এ যেন ঈদ যাত্রার নামে ভোগান্তি যাত্রা। তাও না, এটা আসলে শব যাত্রা! এবার গ্রামে গ্রামে ঈদ পুনর্মিলনী না হয়ে হবে করোনা পুনর্মিলনী! করোনাকে সঙ্গী করে যে হারে মানুষ জীবনপণ ছুটছে, তাতে এই শব যাত্রায় শুধু লাশের মিছিলই বাড়বে। অবশ্য কে শোনে কার কথা? সবাই তো একেকজন বোদ্ধা।

এদিকে কথিত কঠোর বিধি-নিষেধে বন্দী হয়ে সচেতন মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন ঘরমুখো মানুষও। প্রিয়জনের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া মানুষ একে অপরের পদপিষ্ট হয়ে লাশে পরিণত হচ্ছে। 

দেশজুড়ে চলছে ঈদ এবং বিধিনিষেধ-এর ছুটি। কিন্তু রাস্তায় নেই প্রয়োজনীয় যানবাহন। আবার মাইলের পর মাইলজুড়ে মহাসড়কে মহাজট। বেশিরভাগ মানুষের পকেটে স্বাচ্ছন্দ্যে খরচ করার মতো টাকাও নেই। 
তবে ধনাঢ্যরা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ছুটছেন বিমান ও হেলিকপ্টারে। ক্ষমতাবান বিত্তশালীরা প্রটোকল আর দামী গাড়ি হাঁকিয়ে ছুটছেন মা-বাবা ও প্রিয়জনের কাছে।

এদিকে প্রতিদিন করোনায় মৃত্যুর মিছিল তো চলছেই। প্রতিবেশী দেশ ভারতে লাশ রাখার জায়গা নেই। ঠাঁই নেই শ্মশান আর গোরস্থানেও। এমন চিত্র গত প্রায় এক মাস ধরেই। তবুও আমরা ছুটছি ঈদ আনন্দের খোঁজে। 

বোধ করি, হয়তো এটাই হবে শবানন্দ। তবে তা না হোক, আশা করি ঈদ আনন্দই হোক। মঙ্গল হোক সবার। ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে। ঈদ মুবারক সবাইকে।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি