ঢাকা, শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪

অনন্য উচ্চতায় আওয়ামী লীগ

রেজাউল করিম

প্রকাশিত : ১০:৩৬, ২৪ জুন ২০২১

গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় জন্ম নেওয়া উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ২৩ জুন ছিল এই দলের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক দল ১৯৪৯ সালের এইদিনে পুরানো ঢাকার রোজ গার্ডেনে এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে জন্ম নিয়েছিল। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙ্গালীর প্রতিটি স্বাধীকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে অদ্যবধি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা এই রাজনৈতিক দল। এখন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হকসহ অনেকে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁরা সকলে মিলে ঐতিহাসিক ২৩ জুন ১৭৫৭ সালে এই দিনটিকে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের দিন হিসাবে ঠিক করেছিলেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বাঙালি জাতি গঠনের প্রতিটি ধাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। 

১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখেছেন- ‘কোথাও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল’। তিনি আরও লিখেছেন- ‘আমি মনে করেছিলাম পাকিস্তান হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দরকার নাই। একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হবে, যার একটা সুষ্ঠু ম্যানিফেস্টো থাকবে’।

তিনি আরও লিখেছেন, ‘সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন, তার নাম দেওয়া হলো পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। আওয়ামী লীগ নামটির আগে জন্মের সময় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন দলটির নাম রাখা হয়েছিলো আওয়ামী মুসলিম লীগ। দল প্রতিষ্ঠার ছয় বছরের মাথায় ১৯৫৫ সালে এর নাম থেকে ‘মুসলিম, শব্দটি বাদ দেয়া হয়। স্বাধীনতার পর এই দলের নাম দেয়া হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’। ধর্মনিরপেক্ষ এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চর্চা এই রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল। 

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, আইয়ুব খানের স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ এবং ১৯৬৪ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৪ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ, ১৯৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণসহ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে রয়েছে এই দলের গৌরবময় পদচারণা। ১৯৭১ সালের ২৬  মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা এবং অবশেষে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে এ জাতীয় প্রতিটি আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নিজেদের অপরিহার্যতা প্রমাণ করেছে। 

যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রথমবারের মত সরকার গঠন করার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যুদ্ধ বির্ধ্বস্ত ভঙ্গুর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখন স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এবং আন্তর্জাতিক অপশক্তির সহায়তায় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে স্ব-পরিবার হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর পর তৎকালীন আওয়ামী লীগের মূলস্তম্ভ জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে চিরতরে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সভাপতি ঘোষণা হয়। এরপর ১৯৮১ সালের ১৭ই মে দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নবশক্তিতে সংগঠিত হয়। ১৯৯৬ সালে এই বৃহৎ রাজনৈতিক দলটি দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ক্ষমতায় আসে। তারপর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগানের মাধ্যমে ২০০৮ সালে ১২ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আরেকবার জয়ী হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ হয়। পরবর্তীতে আরও দুইটি সাধারণ নির্বাচনে জনগণের বিপুল ভোট জয়ী হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার পরিচালনা করছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।

বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিশ্বের অন্যতম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমানের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছে অভিজ্ঞ নেতৃবৃন্দ। মেধাবী ও প্রজ্ঞাবান এসব নেতাদের সমন্বয়ে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি এবং ১৯টি সম্পাদক মণ্ডলীরপদে স্ব-স্ব বিষয়ে অভিজ্ঞ সম্পাদকও রয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে গঠিত প্রায় সব উপকমিটিতে অর্ন্তভুক্ত হয়েছে বিশেষজ্ঞ সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ শিক্ষক, তরুণ ও অভিজ্ঞ সাবেক ছাত্রনেতা। এদের সমন্বয়ে বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিশ্বের অন্যতম অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও দলটির রয়েছে সুসংগঠিত একটি সংবিধান, যার মধ্যে রয়েছে একটি উন্নত রাষ্ট্র গঠনের সকল উৎপাদন। যা প্রজন্ম হতে প্রজন্মের জন্য একটি লিখিত দলিল হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ইশতেহারের মাধ্যমে বর্তমানে রাষ্ট্রের সকল কাঠামোতে ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। যার সুফল আমরা এখন করেনাকালীন লকডাউন থাকার পরও পেয়ে যাচ্ছি। সরকারের পাশাপাশি দল হিসাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও তথ্যপ্রযু্িক্ততে অনেক দূর এগিয়েছে। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নেতৃত্বে সিআরআই ট্রাস্ট্রি এবং অখইউ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়েব টিম গঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তরুণ এবং মেধাবীদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস এবং বর্তমান সরকারের উন্নয়নের তথ্য সামগ্রিক তথ্য পেয়ে যাচ্ছি। যেহেতু, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ তরুণ, সেহেতু তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের যুগোপযোগী শিক্ষামূলক জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্যে সিআরআই এর ইয়ুথ প্লাটফর্ম ইয়ং বাংলা গঠন করা হয়। এই ইয়ং বাংলা প্লাটফর্মের মাধ্যমে তরুণদেকে স্ব-স্ব সামাজিক ক্ষেত্রে অবদানে উৎসাহ দেওয়ার জন্যে প্রতি বছর দেওয়া হচ্ছে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড। চালু করা হয়েছে সিআরআই থেকে প্রথম পলিসি ভিত্তিক ম্যাগাজিন ‘হোয়াইট বোর্ড’, মুজিব অলিম্পিয়াড: ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’। প্রতি বছর ৭ই মার্চে জাতির পিতাকে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্যে আয়োজন করা হচ্ছে ‘জয় বাংলা কনসাটর’। 
 
যেখানে বৈশ্বিক করোনা মহামারীর মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য ধনী দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে, সেখানে বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকীতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রেখে বিশ্ববাসীর সামনে উদাহরণ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এর মূল অংশীদার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর আরও নানামাত্রিক সফলতা রয়েছে। যেমন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ৩টি সূচকে বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এখন আমরা বঙ্গবন্ধুর ‘স্বপ্নের সোনার বাংলা’ গঠনের জন্য ২০৪১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর এসব বিজয় গাঁথার অংশীদার বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ। আমি এই প্রজন্মের একজন নাগরিক হিসাবে গর্ব বোধ করি।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
সদস্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

এসএ/
 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি