চাঁদে জমি নয়, মনের সুখ কিনুন
প্রকাশিত : ১৯:৩৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
বছর খানেক আগের কথা। আমার পরিচিত এক ধনীলোকের মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান। আমি খুব হতভম্ব ছিলাম এই ভেবে যে, কি গিফট দেয়া যায়। পরে আমার বড় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তুরাগ নদী থেকে ছোট ছোট কটা মাছের বাচ্চা ধরে অ্যাকুরিয়ামে ভরে উপহার দিয়েছিলাম। দেশী মাছ। অ্যাকুরিয়ামটাও ছিল নিজের তৈরি। তাই বেশ ব্যতিক্রম ছিল উপহারটা।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে মেয়েটির বাবা এমন একটি ঘোষণা দিলেন, যার জন্য আমি বা আমরা মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। বলা হলো- এখন একটি তারার নিবন্ধন সনদ উন্মুক্ত করা হবে। আমরা সবাই থমকে গেলাম। একটু পর একটি কার্টিছ পেপারের সনদ দেখিয়ে বলা হলো- আমি আমার মেয়ের নামে আকাশের একটি তারা কিনেছি! বাবার পক্ষ থেকে এবার এটাই তার বার্থ ডে গিফট।
আমেরিকান একটি সংস্থার কাছ থেকে। সেটার নিবন্ধন পত্র এটি। একটি নম্বরও দিয়েছে তারা। সেই তারাটা নাকি চাঁদ থেকে কয়েক মাইল দূরত্বে দেখাও যায়। মিটি মিটি করে জ্বলে। মহাকাশের ছবি বা নভোমন্ডলের ড্রয়িং-এ সেটার নামকরণ, অবস্থান, আয়তন, সবই নাকি তাঁর মেয়ের নামেই বরাদ্দ করে দিয়েছে সেই মার্কিন সংস্থা। আর তাতে উনার খরচ হয়েছিল প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। আমরা তো অনেকটা হতবাক, হতভম্ব ছিলাম কিছুটা সময়।
মেয়েটির কখনো মন খারাপ হলে এখন মাঝে মাঝে তার নামে কেনা তারাটিকে দেখে মন ভালো করে। আহা! মানুষের কত শখ! কত প্রত্যাশা, কত উচ্চাকাঙ্খা। সম্ভব নয় বলে হয়তো এখনও কেউ দাবি করেনি যে, গতকাল আমি মঙ্গলে গিয়ে ডিনার করেছি! তবে সেদিন হয়তো দূরে নেই, যেদিন মানুষ মহাকাশে গিয়ে অফিস করবে। আবার চাঁদে গিয়ে হানিমুন করবে। সেকেন্ড হোমও গড়তে পারে!
পাঠকের নিশ্চয়ই মনে আছে, সম্রাট শাজাহান যা করেছিলেন সেটা নিশ্চয়ই সে সময় ছিল কল্পনাতীত ব্যাপার। তারপরও তিনি তা সম্ভব করেছিলেন তাজমহল বানিয়ে। ফলে এই যুগে এসে এত এত অত্যাধুনিকতার যুগে চাঁদে জমি কেনাটা আজগুবি- এমন বিশ্বাস করাটা কঠিনও বটে। তবে হ্যাঁ ব্যাপারটা আজগুবিই বটে।
চাঁদে অবতরণকারী মার্কিন নভোচারী ইউরি গ্যাগরিন, মাইকেল কলিন্স, এডুইন অলড্রিন, কিংবা ভ্যালেন্তিনা তেরেস্কোভারা এখন হয়তো ভাবছেন, যখন তারা গিয়েছিলেন তখন কেন কিছু জমি নিজেদের নামে লিখে আনেননি। হয়তো আফসোসও করছেন এদের মধ্যে যারা বেঁচে আছেন।
ইতিহাস বলছে, ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে মার্কিন নভোচারীরা যখন প্রথম চাঁদে গিয়ে নেমেছিলেন, সেই ঘটনা বিশ্বজুড়ে দেখেছেন কোটি কোটি মানুষ। কিন্তু পৃথিবীতে এখনো এমন বহু মানুষ আছেন, যারা বিশ্বাস করেন যে, মানুষ আসলে কোনদিনই চাঁদে যায়নি। ব্যাপারটা ছিল পুরাই ধাপ্পাবাজি- এমন অভিযোগও করেছেন অনেকেই।
অবশ্য মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে জরিপ চালিয়েছে। তাদের জরিপে সব সময় দেখা গেছে, চাঁদে মানুষ যাওয়ার ব্যাপারটিকে সাজানো ঘটনা বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় পাঁচ শতাংশ মানুষ।
এদিকে, গত দুদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে চাঁদে জমি কিনে বউকে উপহার দেয়ার একটা খবর ভাসছে। যদিও এটাতে আমার তেমন কোনো আগ্রহ নেই। তবে ব্যাপারটা বেশ চমকপ্রদ। ওই তারকা কেনার মতই ব্যাপার এটা। এরপর যদি কেউ কোথাও থেকে দলিল বানিয়ে এনে বলে যে, পুরো পৃথিবীই আমার! তাতেও হয়তো অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ টাকা উপার্জনের জন্য মানুষ পারে না এমন কোনো কাজ হয়তো নেই।
বর্তমানে বাংলাদেশে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর চটকদার অফার তো চাঁদে জমি কেনার মতই অনেকটা। তাই এবার ভাবছি, আমি একটা দোকান খুলব। যেখানে চাঁদের জমি বিক্রি করা হবে। সকল কপোত-কপোতী, প্রেমিক-প্রেমিকা, নতুন-পুরান কাপল সবাই সাশ্রয়ী রেটে চাঁদের জমি কিনতে পারবেন। তাই নাসার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা শাখা অফিস খুলব। তারপর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হব। অবশ্য, আমার ডান হাতের অনামিকায় (রিং ফিঙ্গার) কদিন ধরে প্রচন্ড ব্যথা। ফুলেও গেছে।
আমার ভাবনাগুলো কাল্পনিক হলেও লেখার ঘটনা কিন্তু সত্য। ফলে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো কাল্পনিক সব অফার দিলেও বাস্তবে তারা জনগণকে বিরাট বোকা মনে করে। অবশ্য মানুষ তো সত্যিই বোকা। অফারের ধোঁকা কিংবা লোভের বশবর্তী হয়ে মানুষ অন্ধ, বধির, হিতাহিত বোধহীন হয়ে ধরা খায় বার বার। তবুও তার পিছু ছাড়ে না!
পৃথিবীতে একদল মানুষ আছে, যারা ডেইলি স্লিপিং খেয়েও ঘুমাতে পারেন না। আবার বেশিরভাগ মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমায় যাদের চাহিদা কম। কারণ সুখ হলো মন আর দেহের সম্মিলিত একটা ব্যাপার। কোটি টাকা খরচ করে চাঁদে জমি কেনা যায় বটে। কিন্তু সুখ-শান্তি কেনা যায় না! মন আর দেহে শান্তি থাকলে ইট মাথায় দিয়েও টানা আট ঘণ্টা ঘুমানো যায়। শান্তির ঘুম। তাই চাঁদে জমি নয়, প্রকৃত সুখ খুঁজুন, সুখ কিনুন, মনের সুখে বাঁচুন।
এনএস//
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।