ইউক্রেন যুদ্ধ ও আমাদের শঙ্কা
প্রকাশিত : ১৫:০৭, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২
রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে আমাদের এত আগ্রহের কারণ কি, এরকম একটি প্রশ্ন আছে জনমনে। এর কারণ হলো, আমাদের জাতিগত স্বার্থ। একটি বৃহৎশক্তির পাশে থেকে কিভাবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যায়, এই যুদ্ধ থেকে আমাদের তা আয়ত্ব করতে হবে।
ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের সাথে যদি মিলায়, তবে আমাদের ঝুঁকি হলো, অনাগত ভবিষ্যতে ইন্ডিয়ার দিক থেকে আমাদের চ্যালেঞ্জ। রাশিয়াঘেঁষা পৃথিবীর মানুষের যুক্তি হলো, ইউক্রেন পাশের সুপার পাওয়ার রাশিয়াকে ফেলে ন্যাটোতে কিংবা আমেরিকান ব্লকে কেন যাচ্ছে? এটি একটি ভালো প্রশ্ন।
এবার প্রশ্নটি আমাদের সাথে মিলিয়ে দেখি। আমাদের যদি কখনো ইন্ডিয়ার সাথে ভালো প্রতিবেশি হিসেবে বনিবনা না হয় তবে আমাদেরকে নিরাপত্তার স্বার্থে অন্য সুপার পাওয়ারের সাথে জোটে যেতে হবেনা কেন? নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদেরকে অবশ্যই চেষ্টা করে যেতে হবে।
রাশিয়া বলতে চায়, ইউক্রেনসহ পূর্ব ইউরোপ রাশিয়ার এককালের অংশ। এই যুক্তিতে ইন্ডিয়া যদি বলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান পূর্বে ভারতের অংশ ছিল, তবে কি আমরা তা মেনে নিব, নাকি মেনে নেয়া উচিত? উচিত না, কারণ স্বাধীন কোনো দেশকে আপনি আপনার অংশ দাবি করতে পারেন না।
এটি সত্য যে, বিশ্বরাজনীতিতে আমেরিকা-রাশিয়ার যে পাওয়ার বা ভর, ইন্ডিয়া সে মানের পাওয়ার এখনো নয়। কিন্তু আমাদের পাশাপাশি রাষ্ট্র হওয়ায় এবং আমাদের থেকে বেশি শক্তিধর হওয়ায় আমাদের ঝুঁকি কিন্তু ইউক্রেনের মতো থেকেই যায়, যদি আমরা জিও-পলিটিক্স চালে ভুল করি।
অদূর ভবিষ্যতে ইন্ডিয়া-চীন যদি যুদ্ধে যায়, বা যুদ্ধ-যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যায়, তবে বাংলাদেশকেও এরকম বা কাছাকাছি একটি পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে যেতে হবে। কোনো সরকারই গণরায়ের বাইরে যেতে পারেনা। সেক্ষেত্রে এই সময়ে যারা ইউক্রেনের রাশিয়ার পক্ষে থাকার জন্যে যুক্তি দেখাচ্ছেন, তারা কিন্তু ইন্ডিয়ার সাথে আমাদের থাকাকে সমর্থন করবেনা, যতটা করবে চীনের পক্ষে।
আমাদের জনগণের বেশিরভাগের এই হলো সমস্যা, তারা আমেরিকার সাথে যেকোনো দেশের যুদ্ধে আমেরিকার বিরুদ্ধে থাকে। কিন্তু সেসব দেশে অভিবাসনে যেতে চায়না, যতটা যেতে চায় আমেরিকায়।
এটি হিউম্যান সাইকোলজির একটি দোদুল্যমানতা। এটি অন্য প্রসঙ্গ। এখন কথা হলো, বাংলাদেশের সব মানুষের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে থাকলেও এই যুদ্ধের ফলাফলে কোনো পরিবর্তন আসবেনা। তাই আমাদের শুধু পর্যবেক্ষণ করতে হবে আমাদের ভবিষ্যৎ মাথায় রেখে।
আমাদের জনগণের আগ্রহের আরো একটি কারণ হলো, মানুষ জানে পৃথিবীর যেখানেই যুদ্ধ লাগুক তার অভিঘাত সমস্ত পৃথিবীর মানুষকে কমবেশি বহন করতে হয়। ইতোমধ্যে বিশ্ববাণিজ্যে যুদ্ধের হাওয়া লেগে গেছে। তেলের দামসহ নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। মানুষের জীবনে যুদ্ধের আঘাত লাগা শুরু হচ্ছে। আধুনিক পৃথিবীতে যুদ্ধের রেশ যুদ্ধ শেষের সাথে সাথে শেষ হয়ে যায়না। অতীতেও এমন ছিল, বর্তমানে তা প্রকট।
তবে আপাতত স্বস্তির কথা হলো, রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবেনা। এটি করার পরিস্থিতি বর্তমানে পৃথিবীর কোনো দেশের নেই। রাশিয়া করবে না, কারণ নিজেদের বোমার অভিঘাত তাদের নিজেদেরও বহন করতে হবে ভৌগোলিক কারণে। ইউরোপের কোনো দেশই পারমাণবিক যুদ্ধের অবস্থায় নেই। কারণ তারা পরস্পর সন্নিকটে। তাদের আবহাওয়া জলবায়ু প্রায় কাছাকাছি। তাই এই যুদ্ধ প্রলম্বিত হবে।
শেষ কথা হলো, রাশিয়ার মতো শক্তির মোকাবেলায় ইউক্রেন যেহেতু দাঁড়াতে পারবে না, তাদের শিক্ষা নিতে হবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে। অর্থাৎ নিজেদের ভূমি দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখা কিংবা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন নিয়ে তাদেরকে গেরিলা যুদ্ধের দিকে চলে যেতে হবে। আপাতত এ ছাড়া ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ খুব বেশি অনুকূলে নেই।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
এএইচএস/ এসএ/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।