সাহসী নৌকায় দিন বদলের গীত
প্রকাশিত : ১৭:৩২, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ | আপডেট: ১৭:৩৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩
নৌকা প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত ময়মনসিংহ সদর-৪ আসনের প্রার্থী মোহিত উর রহমান শান্ত তার আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেছিলেন ব্রহ্মপুত্র নদে ১০০টি কাগজের নৌকা ভাসিয়ে। নদের শান্ত জলে ভাসানো হয় নৌকা-মঞ্চ। সেখানে প্রার্থীর সাথে বসেন কৃষক, জেলে, কুমার-কামার, মুক্তিযোদ্ধা, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পূজারী, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা, জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়ড়সহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
নৌকার পক্ষে তারা ভোট চান সবার কাছে। দিনব্যাপী সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড আর দেশের গান চলতে থাকে সেই নৌকা-মঞ্চ থেকে। আয়োজনটির নামকরণ হয় ‘সাহসী নৌকায় দিন বদলের গীত’। নান্দনিকতা হারানো রাজনীতির দৃশ্যপটে এই ঘটনাটি বেশ আশাজাগানিয়া।
ইচ্ছে হলো সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলার। প্রথমেই গেলাম ‘মটকা আঁচে’। এটি তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় একটি আড্ডার জায়গা। ভাড়ের চায়ে চুমুকের ফাঁকে অড্ডা চলছে। বাইরের বেঞ্চেও বসেছেন অনেকে। চা পানের ফাঁকে মুরাদ আর সাফাত নামের দু’জনের সঙ্গে কথা হল। জানতে চাইলাম, নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন? এরা দু’জনই নতুন ভোটার। প্রথম বারের মত ভোট দিতে যাচ্ছেন জাতীয় নির্বাচনে। তারা বেশ উচ্ছসিত। প্রার্থীদের ব্যাপারে জানতে চাইলাম। বললেন, ‘শান্ত ভাই (নৌকার প্রার্থী) তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়।’ জিজ্ঞেস করলাম কেন? তারা বললেন: আমরা উনারে দেখছি ব্রহ্মপু্ত্রের পাড়ে বসে গলা ছেড়ে গান গাইতে, সার্কিট হাউজ মাঠে ক্রিকেট খেলতে। উনি একজন ক্রীড়া সংগঠকও। বিপিএলে ময়মনসিংহের দল আনতাছেন। কোভিডের সময় উনারে দেখছি ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাবার বিতরণ করতে। উনার নেতৃত্বের স্টাইল ভাল লাগে।
সেখান থেকে গেলাম ছোট বাজারে। উদ্দেশ্য কিছু ব্যবসায়ী এবং পেশাজীবী মানুষের সাথে কথা বলা। যেমনটা ভেবেছিলাম, এখানকার মানুষদের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ভিন্নতর। তাদের মতামতও তরুণদের মত না। একজন বললেন, ‘মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মোহিত উর রহমান শান্তর সাথে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর।’ পাশ থেকে আরেকজন বলে উঠলেন, ‘এক ভাইয়ে মেয়র, অহন আরেকজনে এমপি হবার চায়। দল নমিনেশন দেয় নাই। তাই স্বতন্ত্র খাড়ই পড়ছে। ট্যাকাওলা পার্টি।’ বুঝলাম যে হাওয়া এখানে গরম!
আমরা সেখান থেকে সরে এসে কথা বললাম মোড়ে দাঁড়ানো কয়েকজন অটোচালকের সাথে। এরা শহরে অটো চালান। বাড়ী ময়মনসিংহ সদরের চর এলাকায়। বেশ স্পষ্ট করেই নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতার কথা বললেন তারা। বড় অংকের টাকা দিয়ে লাইসেন্স নিয়েছিলেন কিন্তু দেখছেন বিনা লাইসেন্সের গাড়িও চলছে প্রকাশ্যে। তার উপরে আছে চাঁদাবাজি। ভোটের কথায় বললেন, ‘আল্লাহ! আগেতো সবাই আওয়ামী লীগ আছিন। এখন স্বতন্ত্র গুরপ আলাদা হইয়া গ্যাছে। হ্যাগোর আছে ট্যাকার পাওয়ার আর প্রিন্সিপালের পুতের (শান্ত) পক্ষে মাইনষের মায়া বেশী। নিজের খাইয়া নৌকা। চরের মানুষ এইভাই (এভাবেই) দ্যাখতাছে।’
শহরের বিভিন্ন জায়গায় অন্য প্রার্থীদের পোষ্টারের আধিক্য চোখ টানল। কিন্তু ভোটের দরিয়ায় নৌকার পালে হাওয়ার বেগ বেশ স্পষ্ট। এখান থেকে আমরা ছুটলাম একটা সভার দিকে যেখানে সদর আসনের নৌকার প্রার্থী মোহিত উর রহমান শান্ত বক্তৃতা করবেন।
আমরা যখন সভাস্থলে পৌঁছালাম তখন তাঁর বক্তৃতা প্রায় শেষের দিকে। তিনি বলছেন, ‘আমি একজন রাজনীতিবিদ। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। কিন্তু সবার আগে আমি এই সদরের সন্তান। ময়মনসিংহ আমার আবেগের নাম। আমার স্বপ্ন এই ঐতিহ্যবাহী জনপদের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনা। আমি জানি এই কাজটি করা খুব একটা সহজ হবে না। আর সে কারণেই আমি মানুষের কাছে যাচ্ছি, তাদের বুঝাচ্ছি। তাদের সমর্থন পেলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব ময়মনসিংহকে স্মার্ট শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে। …’
বক্তৃতা শেষে ছুটছেন পরবর্তী সভার দিকে। সামান্য কখা বলার সুযোগ হলো। জানতে চাইলাম নির্বাচনী এলাকা নিয়ে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। তিনি বললেন, ‘আমাদের এই সদর আসনটি ময়মনসিংহ বিভাগেরও কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে জেলায় কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিভাগীয় শহরের উন্নয়নে সিটি করপোরেশন প্রশাসনকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হয়, এটাই নিয়ম। কিন্তু এই মহানগরের দায়িত্ব যাদের উপর দেয়া হয়েছিল তাদের ব্যর্থতার কারণে ময়মনসিংহ সদরের বাসিন্দারা বেসিক নাগরিক সুবিধা থেকে এখনও বঞ্চিত। এই নগর সেই কর্তাব্যক্তিদের সবকিছু দিলেও এখানকার মানুষ, মাটি তাদের আপন হয়ে উঠেনি কখনও। আর সে কারণেই দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে শেখ হাসিনার উন্নয়নকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার।’
তিনি বলেন: এ ব্যাপারে আমার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অপরিকল্পিত নগরায়ন রোধে কাজ করা। ২০১৮ সালে গঠিত সিটি করপোরেশনের পুরনো ২১টি ওয়ার্ডের সঙ্গে যুক্ত শহরতলীর আরো ১২টি ওয়ার্ডে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো। যানজট নিরসনে সড়কগুলো প্রশস্ত করা। রেলের লেভেল ক্রসিংকে বাইপাস করে দেওয়া য়ায় কিনা এবং নগরের তিনটি মূল প্রবেশ পথে উড়াল সড়কের সম্ভাবনাকে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া। আবাসনের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা। ই-কমার্স - বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রাশাসনিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা। ড্রেনেজ সিস্টেম এবং আবর্জনা ব্যবস্থাপনার জন্য সংস্লিষ্টদের সহযোগিতা নিয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যা ও কলেবর বৃদ্ধি করা। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রাশাসনিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা। কর্মসমস্থান বাড়াতে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে কাজ করা। সদর আসনের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাচীন ও মুক্তিযুদ্ধের নানা নিদর্শন এবং এতিহ্যগুলোকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া। বিশেষ করে পর্যটন বান্ধব উদ্যোগগুলোকে সহায়তা দেওয়া।’
তারপর হঠাৎ থেমে বললেন, ‘কিছু মনে করবেন না। লোকজন বসে আছেন। আমাকে বের হতে হবে। আপনারা যদি আজকে থাকেন, তবে রাতে বা কাল সকালে আসবেন মিন্টু কলেজের সামনে। সময় নিয়ে কথা বলা যাবে।’ বললাম যে, আমাদের পক্ষে থাকা সম্ভব।
এসবি/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।