জাতিসংঘে বাংলাদেশের শান্তিসেনা
প্রকাশিত : ০০:১৭, ৩০ মে ২০২৪ | আপডেট: ০০:৪০, ৩০ মে ২০২৪
২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪; জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দরাজ কণ্ঠে বাংলাদেশকে পরিচিত করান শান্তি সম্প্রীতির অন্যতম দেশ হিসেবে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্যের দল যোগ দেয় ইরাক ইরান শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে। সেই থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ যাত্রা শুরু।
ব্ল হেলমেট এর অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে প্রদত্ত ভাষণে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের কথাই অনন্যভাবে তুলে ধরেছিলেন। সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়- এই আদর্শকে অনুসরণ করে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হয়ে আসছে।
সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ বিগত ৩৬ বছর ধরে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ এলাকায় অংশগ্রহণ করে আসছে। শান্তিসেনাদের ধারাবাহিক গৌরবকে স্মরণ করে প্রতিবছর ২৯ মে পালিত হয় আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। এবছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য-'Fit for the Future, Building Better Together'.
শান্তিসেনাদের ইতিহাস বলছে, ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশের একটি দল প্রথমবারের মতো নামিবিয়ায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেয়। আর নৌবাহিনী প্রথম অংশ নিয়েছিল ১৯৯৩ সালে মোজাম্বিকে। সমসাময়িক বিমান বাহিনী বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছিল। হাইতি থেকে পূর্ব তিমুর, লেবানন থেকে কঙ্গো পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের পদচিহ্ন রয়েছে। এদেশের শান্তিসেনাদের সবচেয়ে বড় অর্জন যে, তারা সব ধরণের পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন। বসনিয়ার তীব্র শীত, সাহারা মরুভূমির দুঃসহনীয় গরম ও পূর্ব এশিয়ার ক্লান্তিকর আর্দ্রতার সাথে সহজেই এরা মানিয়ে নিয়েছে। আর সারাবিশ্বের কাছে তাই এদেশের সেনারা অনন্য বিস্ময়।
একই সঙ্গে ধর্ম, গোত্র, বর্ণ, ভিন্ন মতাদর্শ ও আঞ্চলিক বৈষম্যকে ঠেলে দিয়ে এদেশের শান্তিরক্ষী সদস্যরা নিজেদের উৎসর্গ করেছেন বিশ্ব মানবতার সেবায়। পাশাপাশি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩,০৩৮ জন নারী শান্তিরক্ষী সদস্য সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ৪৯৩ জন নারী সদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্মরত। বাংলাদেশের নারী সদস্যেদের দায়িত্ব এতোটাই নজর কেড়েছে যে, ভিনদেশি ফোর্স কমাণ্ডারগণও আমাদের নারীসেনাদের মডেল মনে করেন। সার্বিক বিবেচনায় তাই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ শান্তিসেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। শান্তি প্রতিষ্ঠায় এ পর্যন্ত ৪৩টি দেশে ৬৩ টি মিশন-এ্যাসাইনমেন্টে ১,৯৪,৮৫৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সদস্য অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৩ টি দেশ বা স্থানে ৬,০৯২ জন সদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে।
তথ্য বলছে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ১৬৮ জন বাংলাদেশি বীর সন্তান নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। মারাত্মক আহত হয়েছেন ২৬৬ জন শান্তিরক্ষী।
সম্প্রতি মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ও প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করেছে জার্মানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলে। এ প্রতিবেদনের সরাসরি প্রতিবাদ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। বিশিষ্ট রাজনীতিক ও বিশেষজ্ঞদের দাবি, এটি নিতান্তই ভূরাজনীতির খেলা। তবে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশীদের অবদানের সঙ্গে কতিপয় দেশের স্বার্থকে সম্পৃক্ত করা ঠিক হয়নি। যদিও এতেকরে কোন প্রভাব পড়বে না।
(লেখক: ড. অখিল পোদ্দার, একুশে টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক)
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।