সীতাকুণ্ড সমিতি-চট্টগ্রামের ১০ বছরপূর্তি ও প্রাসঙ্গিক ইতিবৃত্ত
প্রকাশিত : ১৬:৫২, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৮:৩২, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮
১২ নভেম্বর ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ। সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর ১০ বছরপূর্তি দিবস। সমিতির এ গৌরবময় দিবসকে ঘিরে চট্টগ্রাম শহরের স্মরণিকা ক্লাব একখণ্ড সীতাকুণ্ড-এ রূপ নেয়। বর্ণাঢ্য এ আয়োজনে সীতাকুণ্ডের সর্বস্তরের বিপুলসংখ্যক মানুষ শরিক হন। প্রতিবছরের মতো এবারও দু’শতাধিক জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সংবর্ধিত হয়। সমাজের বিভিন্নক্ষেত্রে অবদানের জন্যে ১৪ জন ব্যক্তিত্ব ও দুটি সমাজসেবী সংগঠন সীতাকুণ্ড সমিতি পদক- ২০১৭ সম্মানে ভূষিত হয়। এছাড়া সীতাকুণ্ড সমিতির ১২ শতাধিক সদস্যদের ছবিসহ নামধাম ও সীতাকুণ্ডের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের টেলিফোন নম্বর নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন টেলিফোন গাইড ‘সীতাকুণ্ড সংযোগ’। পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জীবনী ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ছবিসহ প্রকাশিত হয়েছে ভিন্ন আরেকটি পুস্তিকা। অন্যদিকে সীতাকুণ্ড সমিতির প্রতিবছরের নিয়মিত প্রকাশনা ‘আলোকিত সীতাকুণ্ড’ তো আছেই। দু’পর্বের আলোচনা শেষে মেজবান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এক দশকপূর্তি আয়োজনের সফল সমাপ্তি ঘটে।
প্রতিবছরের মতো এবারও সমাজের বিভিন্নক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন এমন ১৪ জন ব্যক্তিত্ব ও দুটি সমাজসেবী প্রতিষ্ঠানকে সীতাকুণ্ড সমিতি পদক-২০১৭ প্রদান করা হয়। পদকপ্রাপ্তরা হলেন- শিক্ষায় মাওলানা ওবায়দুল হক (মরণোত্তর), শিক্ষায় প্রিন্সিপাল নাজির আহমদ (মরণোত্তর), রাজনীতি ও সমাজসেবায় এম আর সিদ্দিকী (মরণোত্তর), রাজনীতি ও সমাজসেবায় এ বি এম আবুল কাসেম মাস্টার (মরণোত্তর), শিক্ষায় ড. মুহাম্মদ হোসেন (মরণোত্তর), শিক্ষায় নিরূপমা মুখার্জী (মরণোত্তর), শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবায় মাস্টার মুছা আহাম্মদ চৌধুরী (মরণোত্তর), প্রশাসনে এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী, প্রশাসনে আহমদ শামীম আলরাজী, ব্যাংকিংয়ে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবায় মোস্তফা কামাল চৌধুরী, সাংবাদিকতায় সাইফুল ইসলাম দিলাল ও সাহিত্য ও গবেষণায় ড. মো. মনওয়ার হোসেন (মনওয়ার সাগর)। এছাড়া সীতাকুণ্ড সমিতির কর্মপরিকল্পনায় অবদানের জন্যে বিশেষ পদক লাভ করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য আ. ম .ম দিলসাদ, সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ বদিউল আলম ও জুয়েল অ্যান্ড কোম্পানির প্রোপ্রাইটর শফকত পাশা চৌধুরী। সমাসেবী সংস্থা হিসেবে পদক পেয়েছে প্যাসিফিক জিন্স ফাউন্ডেশন ও আলহাজ মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশান।
সীতাকুণ্ড সমিতির গোড়াপত্তনের ইতিহাস
সীতাকুণ্ডের মানুষ বাংলাদেশের সব উপজেলায় খোঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু বন্দরশহর চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার শিল্পাঞ্চল সীতাকুণ্ডে দেশের সব উপজেলার লোকজন আছে যারা এখানে কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করে। গিরি-সৈকতের ছায়াঘেরা, অতুলনীয় নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সম্ভার, ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যে অনন্যসাধারণ সীতাকুণ্ডে ছোট-বড়-মাঝারি মিলিয়ে দেড়শতাধিক শিল্প-কারখানা আছে, আছে শতাধিক শিপব্রেকিং ইয়ার্ড। এছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম তীর্থস্থানের কারণে সীতাকুণ্ড ভারতীয় উপমহাদেশজুড়ে অতিপরিচিত এক জনপদের নাম। সীতাকুণ্ডে জমির আইলে যেভাবে সীম উৎপাদন হয়, দেশের আর কোথাও তা হয় না। সবকিছু মিলিয়ে সীতাকুণ্ডের তুলনা সীতাকুণ্ডই। সীতাকুণ্ডের মানুষগলো তুলনামূলকভাবে শান্তিপ্রিয় ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাজনৈতিক দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও সামাজিক দ্বন্দ্ব¦-সংঘাত এখানে তেমন একটা নেই বললে চলে। হিন্দুদের তীর্থস্থান হলেও সব ধর্মের সমন্বয়ে গড়া এ জনপদ অসাম্প্রদায়িকতার এক অপূর্ব নিদর্শন।
জাতীয় কোষাগারে উল্লেখযোগ্য অর্থ-যোগানদাতা সীতাকুণ্ডের বহু মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি-বাকরির কারণে চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করেন। নিজেদের মধ্যে ঐক্য, সম্প্রীতি ও পারস্পরিক প্রয়োজনের তাগিদে চট্টগ্রাম মহানগরে তারা গড়ে তোলেছে সীতাকুণ্ড সমিতি-চট্টগ্রাম। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সীতাকুণ্ড সমিতির উদ্যাক্তাদের সঙ্গে সংশ্লেষের কারণে এ সংগঠনের প্রতি রয়েছে আমার সীমাহীন দুর্বলতা ও অন্যরকম সর্ম্পক। যার নেতৃত্বের যাদু স্পর্শে ও অপরসিীম ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিমিয়ে সীতাকুণ্ড সমিতি আজ ফুলে-ফলে পল্লবিত, সমিতির সে-ই প্রাণস্পন্দন হলেন জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক সেরা সংগঠক হিসেবে সম্মাননা পদকধারী লায়ন মো. গিয়াস উদ্দিন।
২০০৭ সালের ১২ নভেম্বর অরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন সীতাকুণ্ড সমিতি-চট্টগ্রাম এর গোড়াপত্তন হয়। সীতাকুণ্ডের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, চিকিৎসা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সমুন্নত রাখাই এ সংগঠনের মূল লক্ষ্য। সীতাকুণ্ডবাসীর মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের চিরায়িত বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সীতাকুণ্ড সমিতি নানা কর্মসূচির আয়োজন করে আসছে। বিশেষ করে পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী-শিক্ষার্থীদের সম্মাননা ও বৃত্তিপ্রদান, গুণিজন সংবর্ধনা, মেজবান ও মিলনমেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ‘আলোকিত সীতাকুণ্ড’ নামে বিশাল কলেবরের চাররঙ্গা ম্যাগাজিন প্রকাশ করে সবার নজর কাড়ে এ সমিতি। দি কিং অব চিটাগাং, হোটেল সেন্টমার্টিন, গানার অফিসার্স ক্লাব, স্মরণিকা ক্লাবসহ নাগরির বিভিন্ন বনেদি ক্লাব ও হোটেলে আয়োজিত সীতাকুণ্ড সমিতির জমকালো নানা অনুষ্ঠান উপভোগ করে শুধু সীতাকুণ্ডবাসী নয়, বাইরের লোকজনকেও সীতাকুণ্ড সমিতির কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেতে শোনা যায়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজউন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এ সংগঠন কালক্রমে সমাজসেবী সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আন্তর্জাতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক,স্কাইফে, টুইটারে সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম একটি অতিপরিচিত এক নাম। সীতাকুণ্ডের নতুন প্রজন্মের কাছে এ সংগঠন অত্যন্ত প্রিয়।
অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে আশির দশকে চট্টগ্রাম মহানগরে কর্মরত ও বসবাসকারী সীতাকুণ্ডের লোকজনকে নিয়ে ‘সীতাকুণ্ড ফাউন্ডেশান’, ‘সীতাকুণ্ড ফোরাম’ ইত্যাদি নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালানো হলেও নানা কারণে-অকারণে উদ্যোক্তারা তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারেনি। তাছাড়া, বর্তমানে মুঠোফোন থাকায় পারস্পরিক যোগাযোগ যত সহজ হয়েছে, তখন তা ছিল না। মুঠোফোন প্রচলনের পর যোগাযোগ সুবিধে বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম শহরে যুবসমাজের কেউ কেউ বন্ধুবান্ধব মিলে সীতাকুণ্ড সমিতি গঠনের বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে তৎপরতা শুরু করে। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকে ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ করিম, জয়নাল আবেদিন, কাজী নিজামুল বারী, কাজী আলী আকবর জাসেদসহ কয়েকজন মিলে সীতাকুণ্ড সমিতি গঠনে বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠেন। শহরের স্টেশন রোডের নুপুর মার্কেটে অবস্থিত জয়নাল আবেদিনের ফেয়ার মাল্টিপারপাস অফিসে সীতাকুণ্ড সমিতি গঠনের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। এ অফিসটিকে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে তারা এখানে দফায় দফায় বৈঠক করেন। এছাড়া সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এর অধিবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিক্ষানুরাগী আলহাজ মো. ইসমাইল হোসেনের চট্টগ্রামশহরের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অফিসেও সীতাকুণ্ড সমিতি গঠনকল্পে বিভিন্নসময়ে বৈঠক হয় এবং এ সংগঠন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন।
২০০৭ সালের মার্চের শেষাশেষি স্টেশন রোডের হোটেল মিসকা’তে তারা সবাই মিলিত হয়ে সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর প্রথম আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মাসুদ করিমকে আহ্বায়ক, কাজী নিজামুল বারী ও কাজী আলী আকবর জাসেদকে যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং জয়নাল আবেদিনকে সদস্য সচিব করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- মো. ইসমাইল হোসেন, মো, জসিম উদ্দিন, মো. দিদারুল আলম, আলী ইসলাম খাঁ, আসিফ উদ্দিন ভুঁইয়া, ওসমান গণি, আবু বকর, মোস্তফা কামাল ভুঁইয়া(জুয়েল), এস এম তোফায়েল উদ্দিন ও ইদ্রিছ মিঞা। এ কমিটির উদ্যোগে নগরির জামান হোটেলে ইফতারপার্টিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সীতাকুণ্ড সমিতির এ আহ্বায়ক কমিটি আত্মপ্রকাশের পর সীতাকুণ্ডের সচেতন মহলে মিশ্রপ্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে কমিটির আহ্বায়ক ও দুই যুগ্ম-আহ্বায়ক তিনজনই সৈয়দপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা হওয়ায়, কেউ কেউ এটিকে ‘সৈয়দপুর কমিটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সীতাকুণ্ডের যারা নেতৃস্থানীয় ও বয়োজ্যেষ্ঠ আছেন তারা বিষয়টি আমলে নেন। সমগ্র উপজেলার প্রতিনিধিত্ব করে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, এমন একটি সর্বজনীন কমিটি কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে তারা তৎপর হন। সাবেক এমপি আলহাজ এ বি এম আবুল কাসেম ও লায়ন মো.আসলাম চৌধুরী এফসিএ এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এরপর সীতাকুণ্ড সমিতি গঠন কল্পে ২০০৭ সালের ১২ নভেম্বর শহরের অতিথি কমিউনিটি সেন্টারে সীতাকুণ্ডের দল-মত-নির্বিশেষে সর্বস্তরের বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। আহ্বায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
উপর্যুক্ত সভায় মোহাম্মদ আজমকে আহ্বায়ক, দিদারুল ইসলাম মাহমুদ, মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, এম. ই. আজিজ চৌধুরী লিটন ও মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। সদস্যরা হলেন- মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, আলহাজ নুর উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর চৌধুরী, এস. এম. তৌহিদুল হক চৌধুরী, আলহাজ কামাল উদ্দিন, অধ্যাপক এ কে এম তফজল হক, মোহাম্মদ শাহ আজম, এ বি এম মনজুরুল আলম (মনজুর), এম এ হান্নান পলাশ, মোহাম্মদ সাইদুল আনাম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সরওয়ার আলম ভুঁইয়া, বাহার উদ্দিন চৌধুরী, এ কে এম আশরাফুল কামাল, অধ্যাপিকা দেলোয়ারা বেগম পারুল, অ্যাডভোকেট ভবতোষ নাথ, মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, এস এম ফোরকান আবু, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ করিম, কাজী নিজামুল বারী, আসিফ করিম সবুজ, মোহাম্মদ দিদারুল আলম, মীর ইমরুল হাসান চৌধুরী (রুবেল), মো. আবেদীন আল মামুন, হাজী মো. ইউছুফ শাহ ও মোহাম্মদ শোয়ায়েব। এ সময়ে সীতাকুণ্ড সমিতি গঠন নিয়ে কর্ণফুলী’র জল কম ঘোলা হয়নি। সমিতির নেতৃত্ব নিয়ে অতীতে বিভিন্ন সময়ে পারস্পরিক পছন্দ-অপছন্দ, ক্ষোভ, মান-অভিমান, প্রতিহিংসা ও পরশ্রীকাতরতার নাটকও কম মঞ্চস্থ হয়নি। তবে সীতাকুণ্ড সমিতির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক কমিটির উদ্যোগে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে দি কিং অব চিটাগাং ক্লাবে গুণিজন সংবর্ধনা, মিলনমেলা, মেজবান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অত্যন্ত জমজমাটভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এদিকে ২০০৮ সালে নির্বাচন পরিহার করার জন্যে সমাঝোতার ভিত্তিতে মেয়াদ ভাগাভাগি করে তিনজন সভাপতি ও দুইজন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করে সীতাকুণ্ড সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ (২০০৮-১০) গঠিত হয়। দুইবছরে তিনজন সভাপতি ও দুজন সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ক্রমে তাদের দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম আট মাসে সভাপতি রোটারিয়ান আনোয়ারুল হক চৌধুরৗ, দ্বিতীয় আট মাসে সভাপতি মোহাম্মদ আজম এবং তৃতীয় আট মাসে এনামুল আজিজ চৌধুরী লিটন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম বছর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন- এস এম তৌহিদুল হক চৌধুরী ও দ্বিতীয় বছর ছিলেন মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। প্রায় সব পদে একাধিক ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করেন।
২০১০ সালের ১৬ অক্টোবর সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও সব সদস্য পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় চট্টগ্রাম শহরের বাওয়া স্কুলে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি ও সহ-সভাপতিসহ বাকি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় তারা বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আলহাজ মোহাম্মদ আজমকে সভাপতি ও মো. আবুল মনছুর ভূঁঞাকে সাধারণ সম্পাদক করে সীতাকুণ্ড সমিতি-চট্টগ্রাম এর কার্যনির্বাহী পরিষদ (২০১০-১২) গঠিত হয়। সিনিয়র সহ-সভাপতি- ইনামুল আজিজ চৌধুরী লিটন, সহ-সভাপতি- মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন মানিক, সহ-সভাপতি- বাহার উদ্দিন চৌধুরী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক- জালাল আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক- এম এ হান্নান পলাশ, সাংগঠনিক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সম্পাদক- মো. সামসুদ্দিন ভুঁইয়া তুতুল, অর্থ-সম্পাদক- এস এম তোফায়েল উদ্দিন, আইন, শিক্ষা, মানবসম্পদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষযক সম্পাদক- অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, ত্রাণ- দুর্যোগ- ব্যবস্থাপনা ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক- মো. আবেদীন আল মামুন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক- কাজী আলী আকবর জাসেদ, দপ্তর ও মিলনায়তন সম্পাদক- মোহাম্মদ শোয়ায়েব, যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক- আকলিমা আক্তার, স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা, শিশু ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদক- অধ্যাপিকা দেলোয়ারা বেগম পারুল, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক- মো. নুরুল ইসলাম (শাহাব উদ্দিন)। কার্যনির্বাহী সদস্যবৃন্দ- মোহাম্মদ আলীম উল্লাহ মুরাদ, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, মোহাম্মদ এস এম ইকবাল চৌধুরী ও মাজহারুল হক চৌধুরী মীরু।
তবে নানা কারণে সমিতির কর্মকাণ্ডে আশানুরূপ গতি আসেনি। অনেকটা ঢিমেতালে চলেছে সমিতির সাংগঠনিক কার্যক্রম। অবশেষে ২০১৪ সালের ১০ জুলাই এ কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে এম. ই আজিজ চৌধুরী লিটনকে আহ্বায়ক ও মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যবৃন্দ- আলহাজ মোহাম্মদ আজম, অধ্যাপক আবুল মনছুর ভূঁঞা, মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন মানিক, অধ্যাপক মাহবুব হাসান (মামুন), মশিউর রহমান খান, বাহার উদ্দিন চৌধুরী, আলহাজ মো. মহিউদ্দিন, আলী আকবর জাসেদ ও এস এম তোফায়েল উদ্দিন। তিন মাসের মধ্যে এ কমিটি নির্বাচনের আয়োজন করে।
২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর কার্যনির্বাহী পরিষদের ( ২০১৪-১৬) সাধারণ সম্পাদক ছাড়া বাকি পদে সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় নির্বাচন অনিবার্য হয়ে পড়ে। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও এস এম তৌহিদুল হক চৌধুরী। নগরির দামপাড়াস্থ বাংলাদেশ মহিলা সমিতি (বাওয়া) কিন্ডারগার্টেন স্কুলে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যেও নির্বাচনে ৮৮০ জন ভোটারের মধ্যে ৫৮৬ জন তাদের প্রার্থীর অনুকূলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ নির্বাচনে মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ৩২৮ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এস এম তৌহিদুল হক চৌধুরী পান ২৪২ ভোট। বাতিল হয় ১৬ ভোট। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এনামুল হক, নির্বাচন কমিশনার ছিলেন মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক মাস্টার আবুল কাশেম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহযোগী অধ্যাপক ও সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ. কে. এম. তফজল হক।
সীতাকুণ্ড সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ (২০১৪-১৬)- এ যারা ছিলেন- সভাপতি- রোটারিয়ান এম.ই. আজিজ চৌধুরী লিটন, সাধারণ সম্পাদক- মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি- মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন মানিক, সহ-সভাপতি- বাহার উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি- হাজী মোহাম্মদ ইউছুফ শাহ, সহ-সভাপতি- মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, সহ-সভাপতি- মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সহ-সভাপতি- এম. এ. হান্নান পলাশ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক- লায়ন কাজী আলী আকবর জাসেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক- মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক- এস. এম. তোফায়েল উদ্দিন, অর্থ-সম্পাদক- সৌমেন দত্ত, দপ্তর ও মিলনায়তন সম্পাদক- এস. এম. তবরেজ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক- লায়ন মো. মোস্তফা কামাল ভুঁইয়া জুয়েল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক- সংগীতশিল্পী আকলিমা আক্তার, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সম্পাদক- মো. ইকবাল করিম তুষান, আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক- মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক- মোহাম্মদ শোয়ায়েব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক- জিয়াউল ইসলাম শিবলু, সমাজকল্যাণ ও ধর্মীয় সম্পাদক- আলহাজ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক সম্পাদক-মো. নুরুল আজম, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক- মো. আবদুর রউফ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক- মো. খোরশেদ আলম, শিশু ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদক- অধ্যাপিকা দেলোয়ারা বেগম পারুল, সহ-শিশু ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদক- কাজী মাসুদা খানম,কৃষি, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক- মো. নুরুল ইসলাম (শাহাব উদ্দিন), শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক- লায়ন মীর্জা মো. আকবর আলী চৌধুরী, সদস্যবৃন্দ- আলহাজ মোহাম্মদ আজম, অধ্যাপক মো. আবুল মনছুর ভুঁঞা, মহীউদ্দীন আহমেদ মঞ্জু ও আলহাজ আলাউদ্দিন সাবেরী।
সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর সর্বশেষ কার্যনির্বাহী পরিষদ (২০১৬-১৮) নির্বাচনের জন্যে মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিক্ষানুরাগী মাস্টার আবুল কাশেমকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অ্যাডভোকেট মো.আবুল হাসান (শাহাবুদ্দিন) ও সাংবাদিক হাসান ফেরদৌসকে নির্বাচন কমিশনার করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। যথারীতি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কিংবা প্যানেল না থাকায় নির্বাচন কমিশন গিয়াস-তফজল পরিষদকে বিজয়ী ঘোষণা করে। সীতাকু- সমিতি- চট্টগ্রাম এর নবনির্বাচিত বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদ (২০১৬- ১৮) যাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে তারা হলেন, সভাপতি- মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, সিনিয়র সহ- সভাপতি- মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন মানিক, সহ-সভাপতি- বাহার উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি- হাজী মোহাম্মদ ইউছুফ শাহ, সহ-সভাপতি- মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সহ-সভাপতি- এম এ হান্নান পলাশ, সহ-সভাপতি- আলহাজ্ব মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক- লায়ন কাজী আলী আকবর জাসেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক- এস এম তোফায়েল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক- মো. আবেদীন আল মামুন, অর্থ-সম্পাদক- সৌমেন দত্ত, দপ্তর ও মিলনায়তন সম্পাদক- লায়ন মো. মোস্তফা কামাল ভুঁইয়া জুয়েল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক- সাংবাদিক আবুল হাসনাত, সাংস্কৃতিক সম্পাদক- সংগীতশিল্পী আকলিমা আক্তার, পরিকল্পনা ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক- ড. মো. শাহীদুল আলম মিন্টু, আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক- অ্যাডভোকেট সরোয়ার হোসেন লাভলু, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক- মো. মনোয়ারুল হক এফসিএমএ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক- জিয়াউল ইসলাম শিবলু, সমাজকল্যাণ ও ধর্মীয় সম্পাদক- আলহাজ মো. বেলাল হোসেন, ত্রাণ, দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক সম্পাদক- মো. নুরুল আজম, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক- এস. এম. তবরেজ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক- মো. নুরুল ইসলাম (শাহাব উদ্দিন), শিশু ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদক- অধ্যাপিকা দেলোয়ারা বেগম পারুল, সহ-শিশু ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদক- কাজী মাসুদা খানম, কৃষি, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক- মাজহারুল হক চৌধুরী মীরু ও শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক- মো. আলীম উল্লাহ মুরাদ। সদস্যবৃন্দ- রোটারিয়ান এম. ই. আজিজ চৌধুরী লিটন, আলহাজ শফ্কত্ পাশা চৌধুরী, সাংবাদিক হাসান আকবর, মফিজুর রহমান সাজ্জাদ, লায়ন মীর্জা মো. আকবর আলী চৌধুরী , অধ্যাপক মো. নুরুল গণি চৌধুরী, ডা. আবুল কালাম আজাদ, ডা. এস. এম.নুরুল করিম রাসেদ ও মো. খোরশেদ আলম।
এছাড়া সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যারা বিভিন্ন সময়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তারা হলেন- ২০০৮ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, প্রাবন্ধিক ও কলামলেখক ডা. মো. রেজাউল করিম, নির্বাচন কমিশনার ছিলেন রাফি আহমেদ ও মানিক দেবনাথ। ২০১০সালে নির্বাচন পরিচালনার জন্যে যে কমিশন গঠিত হয়, তাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন রসায়নবিদ মো. দেলোয়ারুল ইসলাম। নির্বাচন কমিশনার ছিলেন নুর উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট ভবতোষ নাথ।
এদিকে, ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর কার্যনির্বাহী পরিষদ দায়িত্বভার গ্রহণের পর দুবছরে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা সমিতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন- তা তারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করেছেন। দুবছর মেয়াদে সীতাকুণ্ডের সমাজ উন্নয়নে সমাজসেবী এ সংগঠন কর্ম-পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রায় সব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। সীতাকুণ্ড পৌরসভা সদরে কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাসামগ্রী, গরীবদের মধ্যে গরুর বাছুর ও সেলাইমেশিন বিতরণ, শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র প্রদান, অগ্রিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য দান, যাকাত তহবিল গঠন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুস্থ ও কন্যাদায়গ্রস্থ মানুষের সহায়তাকল্পে বিশেষ তহবিল গঠন, বেকারত্ব দূরীকরণ, বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদ্যাপন, নতুনবছরের ক্যালেন্ডার প্রকাশন, সমিতির নামে ওয়েবসাইট, ফেসবুক ও টুইটার চালুকরণসহ নানাবিধ জনহিতকর কার্যক্রমের মাধ্যমে সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের সব সীতাকুণ্ডবাসীর প্রাণপ্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। একটি অরাজনৈতিক ও সমাজসেবামূলক সংগঠন হিসেবে সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম দল-মত-নির্বিশেষে সীতাকুণ্ডের সর্বস্তরের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের জন্যে দল নিরেপক্ষভাবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই সীতাকুণ্ড সমিতি শিক্ষাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। শিক্ষাক্ষেত্রে সীতাকুণ্ড সমিতি ঈর্ষণীয় অবদান রেখে আসছে। এ সমিতির উদ্যোগে ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর এইচএসসি, এসএসসি, জেএসসি, দাখিল ও পিইসিতে জিপিএ- ৫ প্রাপ্ত সাত শতাধিক কৃতী-শিক্ষার্থীকে নগরীর হালিশহর গানার্স অফিসার্স ক্লাব ময়দানে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে- যা সীতাকুণ্ডের ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক মহলে দারুণভাবে সাড়া জাগায়। সম্মাননা স্মারক, প্রাইজবন্ড, সনদ ও নতুন বছরের ক্যালেন্ডার দিয়ে মেধাবী এসব তরুণপ্রজন্মকে উৎসাহিত করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালানো হয়। তার সঙ্গে ছিল বর্ণিল স্মরণিকা “ আলোকিত সীতাকুণ্ড”, মেজবান, র্যাফেল ড্র ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সম্প্রতি সীতাকুণ্ডের ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেধাবী ও গরীব শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে এ ধরনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে আসছে।
সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর বিগত কার্যনির্বাহী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও নবগঠিত কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের একক প্রচেষ্টায় বিগত দুবছরে ব্যাপক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। এ সময়ে সমিতির জন্যে যারা বিভিন্ন সময়ে অবদান রেখেছেন তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা প্রদান ছিল একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ১৮ জুন ২০১৬ সীতাকুণ্ড সমিতির ইতিহাসে প্রথম সাধারণ সভা চট্টগ্রাম শহরের স্মরণিকা কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে সীতাকুণ্ড সমিতি প্রতিষ্ঠায় যারা অবদান রেখেছেন, যারা সমিতির বিভিন্ন কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ অনুদান দিয়েছেন, অতীতে সমিতির নির্বাচনে যারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, সমিতির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক, যুগ্ম-আহ্বায়ক, সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ, কার্যনির্বাহী পরিষদসহ (২০১৪-১৬) সর্বমোট ৩৬ জনকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আলোকিত সীতাকুণ্ডকে বলেন, “দায়িত্বগ্রহণের পর আমরা বিগত দু’বছরে (২০১৪-১৬) সমিতির সদস্যদের পাশাপাশি সীতাকুণ্ডের আমজনতার সুখে-দুঃখে পাশে থাকার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। বিয়ে-শাদি, মেজবান, জানাজা নামাজসহ সব ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সমিতির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করে আসছি। সমিতির সদস্যদের মৃত্যুতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিবৃতি প্রদান, ডিজিটাল ব্যানার প্রদর্শন, কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ ইত্যাদি কর্মসূচি যথা নিয়মে আমরা সম্পন্ন করেছি। বাংলা ও ইংরেজি নতুন বছরে সমিতির পক্ষ থেকে কার্ড দিয়ে সব সদস্য ও শুভার্থীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়েছে। ব্যক্তিগত কাজের ফাঁকে যে সময় পেয়েছি তার সবটুকুই আমরা সমিতির কাজে লাগানোর প্রয়াস চালিয়েছি।”
আরেক প্রশ্নের উত্তরে গিয়াস উদ্দিন বলেন, “ভোগ নয়, ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে আমরা দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে আমরা চুলপরিমাণ বিচ্যূত হয়নি। আমরা চেষ্টা করেছি সমিতির সব কর্মকাণ্ডকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনার। রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব জেলা শহরে সীতাকুণ্ড সমিতির মতো উপজেলাভিত্তিক সমিতি রয়েছে। কিন্তু সীতাকুণ্ড সমিতি যেভাবে আয়-ব্যয়ের হিসাব সমিতির অডিট কমিটি ও অডিট ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষা করে, সেভাবে দেশের অন্য কোনো সমিতিতে করা হয় কি-না, তা আমাদের জানা নেই। সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। বিশেষ করে ব্যক্তিগতভাবে আমি সমিতিকে কিছু দিতে এসেছি, নিতে নয়। তারপরও ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে আমরা কেউ নই। অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটির জন্যে সবার ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিই কাম্য।”
কথা প্রসঙ্গে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠনের পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগঠক গিয়াস উদ্দিন বলেন,“মেয়াদের বাইরে আমরা একমুহূর্তের জন্যেও সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর পদ-পদবী ধরে রাখতে চাইনি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে যথা সময়ে নির্বাচনের আয়োজন করেছি। কোনো পদে বিকল্প প্রার্থী না থাকায় বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদের সবাই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন।
উল্লেখ্য, সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর বিপরীতে ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শহরে ‘সীতাকুণ্ড অ্যাসোসিয়েশন-চট্টগ্রাম মহানগর’ নামে আরেকটি সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এ অ্যাসোসিয়েশন সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশনও নিয়েছিল। সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন ইউনিয়নে শীতবস্ত্র বিতরণ, ওয়েবসাইট চালুকরণ, প্রথম বর্ষপূর্তিতে ‘আমার সীতাকুণ্ড নামে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে সীতাকুণ্ড অ্যাসোসিয়েশনের কিছুদিন বেশ তৎপরতা পরিলক্ষিত হলেও আবার দ্রুত এর ছন্দপতন ঘটে যায়। বর্তমানে এ সংগঠনের কোনো তৎপরতা নেই, অফিসও গুটিয়ে ফেলা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড অ্যাসোসিয়েশনের অনেকেই আবার সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর সদস্য। সীতাকুণ্ড অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী কমিটির সভাপতি এ এস টি মাহবুব, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খালেদ শাহনেওয়াজ, কার্যকরী সভাপতি সোহরাব হোসেন, সহ-সভাপতি সাইফুল হুদা জাহাঙ্গীর, সহ-সভাপতি মো. দিদারুল আলম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আশেক এলাহী, আবু আহমেদ মাসুদ, আতাহার সিদ্দিক খসরু,আবুল হাসনাত, আহমেদ শাহীন আল রাজি, শ. ই. ম. নাসিম, জুলহাস উদ্দিন লিটন, অ্যাডভোকেট নাসিমা আক্তার চৌধুরী,বরুণ, কাজী সাব্বির আহমেদ, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট সরওয়ার আলম ভুঁইয়া, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ করিম, কাজী নিজামুল বারী, শফ্কত্ পাশা চৌধুরী, আনোয়ারুল হক চৌধুরী, এস এম তৌহিদুল হক চৌধুরী, আবুল হাসান সাহাবুদ্দিন, ইকবাল হোসেন, সাইফুল আক্তার, গিয়াস উদ্দিন হামিদ, জয়নাল আবেদিনসহ অনেকেই সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর সদস্য। নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হওয়ায় সীতাকুণ্ড অ্যাসোসিয়েশন নামে আলাদা সংস্থা সৃষ্টি করা হয়েছিল। সীতাকুণ্ড অ্যাসোসিয়েশনের কেউ কেউ ইতোমধ্যে সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম-এ ফিরে এসেছেন। সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর সভাপতি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন সীতাকুণ্ড অ্যাসোসিয়েশনের যারা বাইরে আছেন তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে গিয়াস উদ্দিন বলেন, “সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আমাদের আসল পরিচয় হলো, আমরা সবাই সীতাকুণ্ডবাসী। সীতাকুণ্ডের কল্যাণে আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করতে চাই। তাই সব ভেদাভেদ ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে সীতাকুণ্ড সমিতির পতাকাতলে সমবেত হয়ে সবাইকে একযোগে সীতাকুণ্ডের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
সীতাকুণ্ড সমিতিকে বর্তমান সভাপতি গিয়াস উদ্দিন সমাজ উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক অনন্যমাত্রায় নিয়ে এসেছে। প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে এ সামাজিক সংগঠনটিকে। সমিতির এ অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হলে কার্যনির্বাহী পরিষদের সবাইকে কমবেশি সমিতির কার্যক্রমে সক্রিয় হতে হবে। তবে যে-কোনো সমিতি কিংবা সংগঠনের কাজ দলগতভাবেই করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার মানসিকতাসম্পন্ন সমাজকর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। সীতাকুণ্ডের সার্বিক উন্নয়নে সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম এর নেতৃবৃন্দের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। তবে ইতোমধ্যে এ সমিতি সীতাকুণ্ডের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন-এ পরিণত হয়েছে। তারা সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রামকে একটি শিক্ষাবান্ধব সংগঠন হিসেবে পছন্দ করেন। কেননা, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান, শিক্ষা উপকরণ বিতরণসহ বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সীতাকুণ্ড সমিতি সলিমপুর থেকে সৈয়দপুর ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এবং সীতাকুণ্ডের সর্বস্তরের মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। নতুনপ্রজন্মের প্রত্যাশা বেড়েছে এ সমিতিকে ঘিরে। চাকরি-বাকরিসহ নানা অভাব-অভিযোগ নিয়ে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন স্তরের মানুষ সীতাকুণ্ড সমিতির নেতৃবৃন্দের কাছে সর্বদা দেনদরবার করছে। তারা তাদের সুখ-দুঃখের কথা প্রতিনিয়ত সীতাকুণ্ড সমিতিকে জানাচ্ছে। সমিতি নেতৃবৃন্দও তাদের পাশে দাঁড়ানোর সাধ্যমতো চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
বেকারত্বসহ নানামুখি সমস্যায় জর্জরিত শিল্পাঞ্চল সীতাকুণ্ডের মানুষ। সীতাকুণ্ড সমিতির নেতৃবৃন্দ সীতাকুণ্ডবাসীর সমস্যা সমাধানে জনপ্রতিনিধি, শিল্প-কলকারখানার মালিক ও প্রশাসনের সঙ্গে মিডিয়া হয়ে পরিপুরক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হল, এলাকার উন্নয়ন ও জনকল্যাণে কাজ করা। উদ্দেশ্য যদি সবার মহৎ ও জনহিতকর হয়, তাহলে পারস্পরিক মতদ্বৈততা ও বিরোধের কোনো অবকাশ নেই।
লেখক- প্রধান-সম্পাদক, চাটগাঁর বাণী ও উপদেষ্টা, সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রাম।
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।