ওইদিন আমাদের গ্লানি হয়তো কিছুটা হলেও মুছবে...
প্রকাশিত : ২১:৩৯, ২৭ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ২৩:৫৯, ২৮ এপ্রিল ২০১৮
আগামী ৩ মে, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০১৮। ১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৩ মে’কে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ ঘোষণা করা হয়। এবারও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপন করা হবে।
ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’র এ বছরের থিম হচ্ছে- “কিপিং পাওয়ার ইন চেক্: মিডিয়া, জাস্টিস্ এন্ড দ্যা রোল অব ল”
সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার শপথ গ্রহণ এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষতিগ্রস্ত ও জীবন দানকারী সাংবাদিকদের স্মরণ ও তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক সংগঠনগুলো দিবসটি উদযাপন করে।
পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির দিক থেকে লিঙ্গ সমতা, যুব প্রবৃত্তি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায়, সাংবাদিকতার সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাপী বস্তুনিষ্ঠ আলোচনার ক্ষেত্র সৃষ্টি করে সাংবাদিকদের নীতি ও কর্ম নিরীক্ষণ, তদন্ত ও সমালোচনার স্বাধীনতা থাকলেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়।
চলতি বছর দিবসটি উদযাপনের আগেই জানা গেলো, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার বৈশ্বিক সূচক ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে এবারও বাংলাদেশ ১৪৬তম স্থানে অবস্থান করছে। ২০১৬ সালে ১৪৪তম স্থান থেকে দুই ধাপ অবনতি ঘটার পর একই অবস্থানে রয়েছে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমবিষয়ক আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম-২০১৮ সূচক প্রকাশ ও বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। ১৮০টি দেশের সাংবাদিকতা, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিচার-বিশ্লেষণ করে এই সূচক তৈরি করে আরএসএফ। এবার বাংলাদেশের বৈশ্বিক স্কোর হচ্ছে ৪৮ দশমিক ৬২, যা গতবারের চেয়ে দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আরএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ দেশে সংবিধান ও ইসলামের সমালোচনাকে বাজে বিষয় মনে করা হয়। অথচ বাংলাদেশ কাগজে-কলমে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এখানে সাংবাদিক ও ব্লগারদের ওই দুই বিষয়ে সেন্সরশিপ অথবা স্ব-আরোপিত সেন্সরশিপ মেনে চলতে হয়। কারণ তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ডের হুমকিতে থাকতে হয়।
বিগত বছরগুলোর মতো দেশের তরুণ ও যুব সাংবাদিকদের সংগঠন ইয়ুথ জার্নালিস্টস্ ফোরাম বাংলাদেশ (ওয়াইজেএফবি) আগামী ৩ মে, বৃহস্পতিবার ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে-২০১৮’ উদযাপন করবে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে সংগঠনটি রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল মিলনায়তনে সকাল ১০টায় এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে যাচ্ছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। ওয়াইজেএফবি’র সভাপতি তানভীর আলাদিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন কাদেরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখবেন দেশবরেণ্য গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বগণ।
ইয়ুথ জার্নালিস্টস্ ফোরাম বাংলাদেশ (ওয়াইজেএফবি) সারাদেশে তাদের শাখা কমিটি সমূহ প্রতিবছরের মতো দিবসটি উদযাপন করার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
এছাড়াও বিএফইউজে, ডিইউজে সহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও বেসরকারি সংস্থা দিবসটি উদযাপন করে থাকে।
দিবসটি উদযাপন করতে গিয়ে মাঝে-মাঝে মর্মাহত হয়ে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে নিজেকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে ইচ্ছে হয় এই জন্যে যে- ‘যদি সারাবিশ্বে সাংবাদিকরা নির্যাতিত, নিষ্পেশিতই হবে, খুনের পরেও তাদের বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদবে! তাহলে এই দিবস উদযাপনটা প্রহসনের শামীল নই কি?’
পরক্ষণে নিজেকেই প্রবোধ দেই এই ভেবে- হয়তো একদিন প্রভাত আসবেই, সেই আসার পথটা এবং আশার পথটা প্রসারিত রাখতেই অন্তত: বিশ্বে একটি মঞ্চ থাকুক, থাকুকনা একটি বিশেষ দিন... আমাদের সবার উদযাপনের ভেতর দিয়েই এই একটি দিনই সংক্রমিত হোক ৩৬৫টি দিনে...
সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার বৈশ্বিক সূচক ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে সেদিন ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হোক ১ নম্বর। সেদিন হয়তো আমরা অনেকেই থাকবোনা, তবে আমি নিশ্চিৎ ওইদিন স্বর্গোদ্যানে বসে সাগর-রুনিসহ অগণিত সংবাদকর্মীর আত্মা তৃপ্তির হাসি হাসবে।
একটি নান্দনিক সোনারবাংলায় থেকে সেই প্রজন্মের কোনো এক সাংবাদিক রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে তারাদের মিটিমিটি হাসি দেখবে... আর সেদিন আমাদের প্রজন্মের ব্যার্থতা আর গ্লানি হয়তো কিছুটা হলেও মুছে যাবে।
লেখক: প্রেসিডেন্ট, ইয়ুথ জার্নালিস্টস্ ফোরাম বাংলাদেশ (ওয়াইজেএফবি)।
এসি
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।