ক্রোয়েশিয়ান প্রেসিডেন্ট ও আমাদের সৌন্দর্য নিয়ে মাতামাতি
প্রকাশিত : ২২:১৬, ১৫ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ২২:০৮, ১৬ জুলাই ২০১৮

ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কলিন্ডা গ্রাবার
এই সমাজের প্রচলিত সংজ্ঞায় নারী-পুরুষের শারিরীক সৌন্দর্য বলতে যা বুঝায় সেই বৈশিষ্ট্য ধারণকারী সুন্দর-সুন্দরীকে নিয়ে আপনারা নরমাল সেন্সে যে মাতামাতিটা করেন একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখবেন ব্যাপারটা কতটা ভয়াবহ ! এর মাধ্যমে আপনি এই সুন্দর/সুন্দরীর বিপরীত দিকের মানুষগুলোকে অর্থাৎ যারা এই প্রচলিত সৌন্দর্যের ধাঁচে পড়ে না তাদেরকে হীনম্যতায় ভোগান, অগ্রহণযোগ্য করে তোলেন এবং সুন্দর-অসুন্দরের বৈশিষ্ট্যকে সমাজে জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠা করেন।
এর ফলে আপনি নিজেও নিজেকে অসুন্দরের তালিকাভূক্ত করছেন। আর যখন কেউ আপনাকে দৈহিক অসৌন্দর্যের কারণে অবজ্ঞা করছে, খারিজ করে দিচ্ছে তখন ঠিকই কষ্ট পাচ্ছেন। যে অবজ্ঞা করছে দোষ তারও না। কারণ তার মাথায় সুন্দরের সংজ্ঞা আপনারাই পাকাপোক্তভাবে সেটিং করে দিচ্ছেন।
এই কাজটা আপনি অবচেতনভাবেই করছেন।
ক্রোয়েশিয়ান প্রেসিডেন্ট কলিন্ডা গ্রাবার কিতারোভিচের প্রতি আপনি মুগ্ধ হতে পারেন তার যোগ্যতা, গুণ, চাঞ্চল্য, সাবলীলতা ও ব্যক্তিত্বের কারণে। কেবলমাত্র তার শারিরীক অবয়ব আর ব্রা-প্যান্টি পরা শরীর দেখেই মাতামাতি করতে পারেন না। শুধু ক্রোয়েশিয়ান প্রেসিডেন্টকে নিয়েই নয় নায়ক-নায়িকা বা অন্যান্য ব্যক্তিদের শারিরীক সৌন্দর্য, মুখশ্রী নিয়েও এই কাজটা আমরা প্রতিনিয়তই করছি।
বিষয় হচ্ছে আপনিও এটা করছেন কারণ আপনার মগজেও সৌন্দর্যের চক্ষুগ্রাহ্য ধারণা সেটিং করে দিয়ে গেছে আপনার পূর্ববর্তীরা এবং সিনেমা, সাহিত্য, মিডিয়া এখনও দিচ্ছে এই প্রচলিত সংজ্ঞায় নায়ক-নায়িকার উপস্থাপন ও বর্ণনার মাধ্যমে।
অাফরিন শরীফ বীথি
অথচ সৌন্দর্য আপেক্ষিক ব্যাপার। সৌন্দর্যের মাপকাঠি নির্ধারণ করে প্রত্যেকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। সৌন্দর্যের ব্যাপারটা শুধুই শারিরীক গঠন ও রং এর উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হতে পারে না। একজন মানুষ যে ব্যক্তিত্ব, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মেধা ধারণ করে এর সব কিছুর সংমিশ্রণে তার সৌন্দর্য নির্ধারিত হওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। আমি বিশ্বাস করি মানুষ যে ব্যক্তিত্ব ধারণ করে চোখে-মুখে, শরীরে-বচনে তার স্পষ্ট ছাপ পড়ে এবং ওই ছাপটাই তার সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্যই আমাকে মুগ্ধ করে, প্রেমে পড়ায়।
মানুষ কি শারিরীক গঠন, রং, বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মাবে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তার নাই। অথচ যে বিষয়টাতে নিজের কোন হাতই নাই সেই বিষয়টা নিয়েই পৃথিবীতে এসে কাউকে ভুগতে হয় আর কেউ কেউ অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা পায়। এই ধ্যান-ধারণা কোনভাবেই একটা মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। সুতরাং মানবিকতাপূর্ণ একটা সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে মানুষের শারিরীক সৌন্দর্যের এই প্রচলিত ধারণাকে উপেক্ষা করতে হবে। খুব সচেতনভাবেই এটা করতে হবে।
যেহেতু আমি এই সমাজেই বেড়ে উঠেছি সুতরাং আমি নিজেও এই সমাজের প্রচলিত প্রভাবের দ্বারা প্রভাবিত। তাই এই প্রভাবটাকে কাটিয়ে উঠতে হলে আমাকে খুব সচেতনভাবে সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এমন কোন মতামত, মানসিকতা পাবলিকলি প্রকাশ করার আগে গভীরভাবে ভাবতে হবে। জানিনা কতটুকু পারি, তবে আমি এটা করার চেষ্টা করি। পরিবর্তন চাইলে, মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আপনাকেও এটা করতে হবে। কারণ আপনার এই কর্মকাণ্ডের প্রভাব ভোগ করবে আপনার ভবিষ্যৎ সন্তান যাকে আপনি নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসবেন। তাই কোনো বিষয়ে মন্তব্য করার আগে একবার ভাবা দরকার বলেই মনে হয় অনেকের কাছেই। সবাইকে এমন বিষয় নিয়ে আরেকবার ভাবা দরকার, এতে কোনো সন্দেহ না থাকারই কথা নিশ্চই।
লেখক: সমাজ উন্নয়নকর্মী।
অা অা/এসএইচ/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।