জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির উপরে আছে ঢাকা
প্রকাশিত : ১৬:৪৪, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৭:৩১, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮
ঢাকা শহরের মানুষ আগ্নেয়গিরির উপর বসবাস করছে। এতে ভয়ের কোন কারণ নেই। এটার সমাধানও রয়েছে। ঢাকা শহরে মাকড়সার জ্বালের মতো গ্যাসের লাইন রয়েছে। আমার জানামতে এই গ্যাসের লাইনের কোন নকশা নেই। আমি বহু চেষ্টা করেও পাইনি। তিতাসের কেউ বলতে পারবেন না কোনখানে গিয়ে কোনটা থামানোর জায়গা আছে কোথায় কী করার আছে। এগুলি নিয়ে নিয়ে আমরা একাধিকবার আলোচনা করেছি।
নেপালে ভূমিকম্পের সময় বৈদ্যুতিক তার ছিড়েছে। বৈদ্যুতিক শকে বহু লোক মারাও গেছে। আমরা তার চেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় আছি। নেপালের কাছাকাছি যদি একটা ভূমিকম্প হয় তাহলে ঢাকা শহরের গ্যাস লাইনগুলো বিস্ফোরণ হবে। তার মানে ঢাকার চারদিকে গ্যাস বের হবে।
ভবন চাপা পড়ার ২১ দিন বেঁচে থাকার ইতিহাস রয়েছে পৃথিবীতে। কিন্তু আগুন লাগলে তো এক থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি মানুষ বাঁচার তো কোনো সম্ভাবনা নেই।
জাপানের নতুন উন্নত শহর কোবেতে প্রায় সাতদিনের উপর আগুন জ্বলেছে কারণ ওখানে প্রচুর ফার্নেস ছিল। আমাদের ঢাকা শহরের আগুন ১০/১৫ দিনে কেউ থামাতে পারবে বলে আমার মনে হয়না।
এই দুর্ঘটনার পর আমরা হাসপাতালে যাব। কিন্তু ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় দুটি হাসপাতাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ। এই দুটো সবার আগে ভেঙ্গে পড়বে। অর্থাৎ আপনি আহতদেরকে সেখানে নিতে পারবেন না। ঢাকা শহর এবং বাংলাদেশকে যারা নিয়ন্ত্রণ করবেন সেই সচিবালয় ভবন ভেঙ্গে পড়বে। এগুলো সবই গবেষণায় পাওয়া গেছে। এরপর আসেন ফায়ার ব্রিগেড যারা আমাদেরকে উদ্ধার করবে তারা যেখানে থাকেন কিংবা গাড়িগুলো যেখানে রাখা হয় সেগুলো প্রায় সবগুলোই ভেঙ্গে পড়ার আশংকা আছে। আমরা বিভিন্নভাবে বারবার বলার পর এখন নতুন ভবনগুলো সঠিক পরিকল্পনা ও মজবুতভাবে তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষভাবে রক্ষা করার ব্যবস্থা হচ্ছে।
চার পাঁচ বছর আগে একাধিক সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বিশেষ বিশেষ ভবনগুলো জরুরিভিত্তিতে রেকটোফিটিং করা হোক। এটা অনেক ব্যয়বহুল। সেক্ষেত্রে ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ করা ভাল। কিন্তু যেসব ভবনগুলো ইতিহাস এতিহ্য হিসটোরিক্যাল ভ্যালু বহন করে সেগুলো না ভেঙ্গে রেকটোফিটিং করা যায়। এর জন্য আমরা আন্তর্জাতিকভাবেও তহবিল পেতে পারি। অথচ আমরা এই কাজ গত ছয় বছরেও করতে পারিনি।
বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা হলো প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমার চোখে না দেখা পর্যন্ত সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। ফলে আমরা সেই অবস্থায় রয়ে গেছি। ফায়ার ব্রিগেড হলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাগলের তিন নম্বর বাঁচ্চা। অর্থাৎ একেবারে অসহায়। সে শুধু লাফাই মায়ের দুধ কখনো খেতে পারে না। এই অবস্থা বদলাতে হবে। তাকে নিয়ে আসতে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে। কারণ দুর্যোগের সময় দুর্যোগ মন্ত্রণালয় তাদেরকে ব্যবহার করবে অথচ তারা ওই মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেই। এটা একটা অদ্ভুত ব্যপার। এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হলে ফায়ার ব্রিগেডকে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে এসে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলে তাদেরকে পরিচিত করাতে হবে। তাদেরকে তৈরি করতে হবে। আরেকটি বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো- দুর্যোগকালীন সময়ে বড় হলো কমান্ড কাউন্সিল। আপনি কমান্ড কিভাবে করবেন? ধরেন যিনি মূল দায়িত্বে রয়েছেন তিনি মারা গেলেন এরপর কে দায়িত্ব পালন করবেন? এমন কয়েকটি ধাপে এটা তৈরি করতে হবে। জনবসতির ভিত্তিতে জোনিং করতে হবে। দুর্যোগের সময় মানুষ কোন জায়গায় যাবেন? কিভাবে সাহায্য পাবেন? সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মানুষকে জানতে হবে ভবন ভেঙ্গে পড়লে আমি কোন জায়গায় যাব। কার সঙ্গে যোগাযোগ করব? আমি ওই জায়গায় গেলে পানি পাব, খাবার পাব, আশ্রয় পাব। ঢাকা শহরের উন্মুক্ত স্থানগুলোকে এভাবে তৈরি করতে হবে যাতে দুর্যোগ আক্রান্ত মানুষেরা এসব সুবিধা সেখানে পান। সেখানে স্থায়ী ব্যবস্থা থাকতে হবে। এই জিনিসগুলো পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায় রয়েছে। সুইজারল্যান্ডে মাটির নিচে এমন ব্যবস্থা রয়েছে।
আমাদের দুর্যোগ মোকাবিলার অসংখ্য গৌরবজ্জল ইতিহাস রয়েছে। নেপালের সাম্প্রতিক ভূমিকম্প আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। সুতরাং এখন থেকেই আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। দুর্যোগ যেকোন সময় যেকোন দেশেই হতে পারে। কিন্তু আমাদের সেটাকে মোকাবিলা করার সামর্থ্য অর্জন করতে হবে। একটা ভবন তৈরির পর সেটা সঠিক নিয়ম মেনে করা হয়েছে কী না তার জন্য একটা সনদ দিতে হবে। সেই সনদ দিয়ে ওই ভবনে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এই জায়গাতে আমাদেরকে কঠোর থেকে কঠোরতম হতে হবে। কিন্তু আমরা পারছি না কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তির কারণে। এই ক্ষমতাধর ব্যক্তিগুলোই আমাদের মৃত্যুর কারণ হবে। ৫৬ টা বাপ নিয়ে একটা সন্তান বেঁচে থাকতে পারে না। যারজন্য আমার তটস্থ অবস্থায় থাকি। এই ৫৬ টা বাপ প্রত্যেকেই আইনের দিক থেকে শক্তিশালী। সিটি মেয়র কিংবা সরকার কাউকে এটার জন্য প্রধান দায়িত্ব দিতে পারে। যদি একটা কমিটি রয়েছে যেখানে মেয়র সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু তা অতোটা শক্তিশালী নয়। আইনের শাসন যদি প্রতিষ্ঠা না করা যায় তাহলে কোন পরিকল্পনাই কাজে আসবে না। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহরে এখন বেশ কিছু বড় ভবন তৈরি হচ্ছে। সেখানে ভূমিকম্প হলে ঢাকার চেয়েও বেশি ঝুঁকি। কিন্তু ওখানে প্রাণহানি তুলনামূলক কম হবে। কারণ সেখানে উন্মুক্ত স্থান রয়েছে অনেক। আমাদের ২০ শতাংশ মানুষ মারা যাবে ভবনের ভেতর চাপা পড়ে। আর ৮০ শতাংশ মানুষ মারা যাবে রাস্তায় ভবন চাপা পড়ে। আমি শক্তিশালী ভবন তৈরি করলাম কিন্তু আশপাশের ভবনগুলো নড়বড়ে তাহলে অবস্থা কী হবে? আরও ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো ঢাকা শহরের অধিকাংশ ভবনগুলোতে সাধারন কাঁচ ব্যবহার করা হয় যেগুলো একটা ঢিল ছুঁড়লেই ভেঙ্গে যায়। ভূমিকম্পের সময় এই কাঁচগুলো আগে ভেঙ্গে পড়বে। এগুলো শক্তিশালী বুলেট হয়ে মানুষের গায়ে আঘাত করবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর নজীর রয়েছে। এ ভবনগুলোতে সবসময় টেম্পারড গ্লাস ব্যবহার করতে হবে। কারণ এটি ভাঙলে গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়। মানুষের তেমন ক্ষতি হবে না। এগুলো ব্যবহারে বাধ্যতামূলক করা দরকার। যাতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। শুধু দুর্যোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব।
নেপালে যে মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে তা যদি ঢাকার ২শ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসত কিংবা নেপালের চেয়ে কিছুটা কম মাত্রার ভূমিকম্প ঢাকায় হতো তাহলে আমাদের অবস্থা যে কী হতো তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। শুধু ঢাকা শহরেই ৭০ থেকে ৮০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। যেগুলো আইডেন্টিফাইড। এমন আনআইডেন্টিফাইড অজস্র ভবন রয়েছে যেগুলো বাইরে থেকে খুব সন্দর ও আধুনিক মর্ডানের মনে হবে কিন্তু নির্মাণ কাজের গুনগত মান ঠিক নেই। প্রশ্ন উঠতে পারে এগুলো তাহলে দাঁড়িয়ে আছে কীভাবে? যখন আমরা একটা ভবনের নকশা তৈরি করি তখন সম্ভাব্য ভূমিকম্পের বিষয়টি মাথায় রেখেই করা হয়। সেই কাজটি করতে খরচ কিছুটা বেশি হয়। এবং আপনি যদি ঝুঁকি নেন এই ভূমিকম্প কবে হবে না হবে তার ঠিক নেই। তার চেয়ে আমি এখান থেকে কিছু টাকা সাশ্রয় করি। তাহলে ভবনটি থেকে যাবে যতদিন তা বড় মাত্রার ভূমিকম্প না হয়। ভুমিকম্পের পর নেপালে যে ঘটনা ঘটেছে ঢাকায় হবে অন্যটা। ঢাকার মানুষজন আগ্নেয়গিরি উপর বসবাস করছে। মাকড়সার জ্বালের মতো বৈদ্যুতিক লাইন, তিতাসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাইপ ছড়িয়ে আছে। তার বড় প্রমাণ হলো কিছুদিন আগে বৈশাখি টেলিভিশন এলাকায় একটা আগুন লেগেছিল তিতাস গ্যাসের লাইনে। ওই আগুন দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে নেভানো যায়নি। পরবর্তীতে আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি ওই গ্যাসের লাইন যে ঠিকাদার করেছিলেন তাকে ডেকে এনে নাকি আগুন নেভাতে হয়েছে। ঢাকা শহরে যেসব গ্যাসের লাইনগুলো রয়েছে তার সেফটি ভালব নেই। অর্থাৎ ভূমিকম্পে যে লাইনগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, যেমন বৈদ্যুতিক লাইনে কোন সমস্যা হলো ব্রেকার অটোমেটিকালি সাটডাউন হয়ে আগুন লাগা বা অন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে গ্যাস লাইনের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা নেই। সে কারণেই এগুলো বিপদজনক। ভূমিকম্পে এগুলো বিস্ফোরণ হবে। নেপালে দেখেছি ভূমিকম্পে প্রচুর বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে গেছে। স্পার্ক তৈরি হয়েছে। তার মানে নিচে গ্যাস উপরে ইলেকট্রিক স্পার্ক। সুতরাং ঢাকা শহর একটা অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হবে। ঢাকা মেডিকেল ও অন্যান্য ভবন সবার আগে ভেঙ্গে পড়বে। ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীদের যে পরিবার রয়েছে তাদেরকে যদি নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা হয় এবং তাদের পরিবার যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তারা কীভাবে উদ্ধারকাজ চালাবে? এই যে ৭০ হাজার ভবন যদি ভেঙে পড়ে তাহলে উদ্ধার কাজ কীভাবে হবে? ৭০ হাজারের যায়গায় যদি ৭০ টা ভবনও ভেঙ্গে পড়ে তাহলে আমাদের অবস্থা কী হবে? এটার জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বেশ আগে। কিন্তু এর একটারও বাস্তবায়ন হয়নি। এগুলো শুধু আলোচনায় চলছে। জামিলুর রেজা কে নিয়ে সাবেক মন্ত্রী রাজ্জাক সাহেব একটা কমিটি করলেন। সেখানে সব সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো। কী কী যন্ত্রপাতি কিনতে হবে, গ্যাস লাইনগুলোতে অটো সেন্সর বসানো হবে (অর্থ্যাৎ একটা নির্দিষ্ট মাত্রার উপর যদি কম্পন হয় তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন এলাকার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে যাবে। লসেঞ্জে বিভিন্ন জায়গায় এ ব্যবস্থাগুলো করা আছে। এগুলো খুব সহজেই বাংলাদেশে করা যায়। এগুলো খুব ব্যয়বহুলও নয়। আরেকটি জিনিস আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তা হলো দেশের অধিকাংশ মানুষ গ্যাসের সুবিধা পায় না। মুস্টিমেয় কিছু মানুষ এ সুবিধা ভোগ করেন। তাই লাইনের মাধ্যমে শুধু শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ ছাড়া বাসা-বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ আস্তে আস্তে বন্ধ করে দিতে হবে। প্রয়োজনে তারা সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করবেন। এই জিনিষগুলো না করতে পারি তাহলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। এখন আমরা কী করতে পারি? গ্যাস লাইনগুলোতে সেন্সর লাগানো, একটি বাড়িতে একাধিক লাইন না দিয়ে একটিমাত্র মেইন লাইন দিতে হবে যাতে ওই লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেই পুরো বাড়ির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কারণ একটা ফ্লাটে যদি ২০ টা পরিবারের জন্য ২০ টা আলাদা লাইন থাকে তাহলে কোন একটা বাসায় আগুন লাগলে অন্যরাও ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এক্ষেত্রে গ্যাসের সুইচ দৃশ্যমান রাখতে হবে। যাতে খুব সহজেই তা বন্ধ করা যায়। এই জিনিসগুলো আমরা কিছুতেই তিতাসকে দিয়ে করাতে পারিনি। কারণ এখানে লেনদেনের বিষয় রয়েছে। একটি ভবনে যদি আলাদা আলাদা সংযোগ দেওয়া যায় তাহলে সেখানে ঘুষের পরিমানও বেশি হবে। যেমন বসুন্ধরা সিটিতে কিন্তু টেম্পারড গ্লাস লাগানো হয়েছিল। যেকারণে বসুন্ধরাতে যখন আগুন লেগেছিল তখন কাঁচ গুড়ো গুড়ো হয়ে ভেঙ্গে পড়েছিল। একটা গাড়িতে যে কাঁচ লাগানো হয় সে কাঁচগুলো লাগানোর কথা বহুতল ভবনে। গ্লাসগুলো বদলাতে হবে। এই মুহূর্তে এই গ্লাসগুলোর গায়ে স্ট্রিকার লাগানো যাতে সহজে এটি ভেঙ্গে না পড়ে।
এই যে ৭৮ হাজার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ তার সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে রাজউক জড়িত। রাজউক হলো বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ভূমিদস্যু। তারা ভূমি ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। যখনই এই ভবনের কথা বলবেন তখনই রাজউকের চেয়ারম্যান বা শীর্ষস্থানীয়রা প্রথমেই বলবেন আমাদের লোকবল নেই। প্রশ্ন হলো জমির ব্যবসা যখন করেন তখন কী সরকারকে বলেছেন আমাদের লোকবল নেই, জমির ব্যবসা করতে পারব না। সরকারের আরেকটি প্রতিষ্ঠান হাউজিং সেটেলমেন্ট আছে জমির ব্যবসা করার জন্য। রাজউক কী করছেন ফ্লাইওভার বানাচ্ছেন যেজন্য রোডস অন হাইওয়ে আছে, সিটি কর্পোরেশন আছে। লোকবলই যদি না থাকে তাহলে এত বড় বড় ফ্লাইওভার বানানোর দায়িত্ব আপনাকে কে নিতে বলেছে। এসব করার জন্য তো সরকারের আলাদা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওনারা এখানে কোন উত্তর দেবেন না। শুধু ব্যবস্থাপনা কিংবা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করার কথা বলা হবে তখনই ওনারা নানা অজুহাত দেখান। এখানে তো কোন পয়সা নেই। উনারা জমির ব্যবসা করে প্রচুর চাঁদা পান। এই কাজের সঙ্গে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা এই কাজের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশে যতরকম লোকের নামের প্লট বরাদ্ধ দেওয়া হয় তারমধ্যে একটা লোকও দেখাতে পারবেন না যিনি ব্লাক মার্কেটে এই কাগজটি বিক্রি করেন নাই। যারাই ডেভেলপারকে দিয়েছেন তারাই ব্লাকের দামে দিয়েছেন। আর এই মানুষগুলোই আমরা বলে থাকি ১শ টাকার ট্রেনের টিকেট দেড়শো টাকায় বিক্রি হয় যেদেশে সেদেশে বাস করব কীভাবে? বাংলাদেশে বসবাস করা যাবে না কালোবাজারীদের অত্যাচারে। এরাই সবচেয়ে বড় কালোবাজারী। আমরা যারা প্লট নিয়ে দুটি ইন্সটলমেন্ট দিয়ে ডেভলপারের কাছে বিক্রি করি। তারাই বড় কালোবাজারী। এমন কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই, এমন কোন জ্ঞানী-গুণী শিক্ষিত ব্যক্তি নেই যারা অনেক নীতি কথা বলেন কিন্তু এই প্লট বিক্রির কালোবাজারীর সঙ্গে অতোপ্রতভাবে জড়িত নয়। এই মানুষগুলো এই লোকগুলিই রাজউককে ধ্বংস করেছে। আপনি যখন এক্সপার্টদের দিয়ে খোঁজ নেবেন তখন দেখা যাবে হয়তো এই ৭৮ হাজারের যায়গায় ৭৮ লাখ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বের হবে।
করনীয়: সরকারকে এখনই চিন্তা করতে হবে যেগুলো আমরা এর আগে করতে বলেছি যেমন হাসপাতালগুলোকে, ফায়ার ব্রিগেড, প্রশাসনিক সহ গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো আগে রেক্টোফিটিং করে দ্রুত এগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। বাংলাদেশে সেই প্রযুক্তি আছে এগুলো করারও অভিজ্ঞ লোক রয়েছে। সরকারকে অনুরোধ করব ফ্লাইওভার আপাতত না করলেও চলবে। এগুলো বন্ধ করে হলেও জরুরী এই কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করবে। না হলে ঢাকার শহরকে বাঁচানো যাবে না। যখন দুর্ঘটনা ঘটবে তখন কিন্তু এই ফ্লাইওভার আপনাকে উদ্ধার করবে না। ফ্লাইওভার আগে বানানোর কথাও বলা হয়নি। রাস্তা বানাও, ফুটপাত বানাও, ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক করো এবং সবার পরে ফ্লাইওভার। কিন্তু সরকার কী করলো-জামা পরালো, টাই পরালো প্যান্ট তোমাকে পরে দেব এই অবস্থার মধ্যে আমরা আছি। এখান থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।