২১ আগস্ট মামলার রায়: একই যাত্রায় ভিন্ন ফল কেন?
প্রকাশিত : ২২:১৮, ১০ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১৭:৪৯, ১১ অক্টোবর ২০১৮
![](https://www.ekushey-tv.com/media/imgAll/2018July/turin20181010161832.jpg)
অবশেষে ১৪ বছর পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হলো! মামলার জীবিত ৪৯ আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, মাওলানা তাজউদ্দিন, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এছাড়াও মামলায় সরাসরি সংশ্লিষ্টতার দায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল-১-এ রায় ঘোষণার সময় ৩১ আসামি আদালতে হাজির ছিল। মামলার পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
মামলাতে মোট ১৪টি বিষয় আদালত বিবেচনায় নিয়েছে তার সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য। ৭ নম্বর বিবেচ্য বিষয় ছিল - “গুলশান থানার লালাসরাই মোজার রোড নং ১৩, ব্লক নং ডি, বাড়ি নম্বর ৫৩, বনানী মডেল টাউনের জনৈক আশেক আহমেদ, বাবা-আবদুল খালেক। তার বাসাটি ‘হাওয়া ভবন’ নামে পরিচিত। ওই ‘হাওয়া ভবন’ বিএনপি জামায়াত ঐক্য জোট সরকারের কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু ছিল কিনা? ওই ঘটনাস্থলে পলাতক আসামি তারেক রহমান অপরাধ সংঘটনের জন্য ষড়যন্ত্রমূলক সভা করে কিনা ও জঙ্গি নেতারা তারেক রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন সময় মিটিং করে কিনা?”
নিঃসন্দেহে আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে হাওয়া ভবনে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্র হয়েছিলো। আর সে কারণেই আসামি তারেক জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। যদি তা-ই হয়ে থাকে তাহলে অন্য ষড়যন্ত্রকারীদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হলেও আসামি তারেক জিয়াকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হোল না কেন?
আদালতের ১০ থেকে ১৩ নম্বর বিবেচ্য বিষয় ছিল –
“১০) অভিন্ন অভিপ্রায়ে ও পূর্ব পরিকল্পনার আলোকে পরস্পর যোগসাজশে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেনেড আক্রমণ চালানোর সুবিধার জন্য ও অপরাধীদের রক্ষার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা।
১১) অভিন্ন অভিপ্রায়ে ও পূর্ব পরিকল্পনার আলোকে প্রশাসনিক সহায়তা দিয়ে মামলার ঘটনায় ব্যবহৃত অবিস্ফোরিত সংরক্ষণযোগ্য তাজা গ্রেনেড আলামত হিসেবে জব্দ করার পরও তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করে এবং আদালতের অনুমতি না নিয়ে অপরাধীদের বাঁচানোর উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী কর্তৃক ধ্বংস করার ও আলামত নষ্ট করায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা।
১২) অভিন্ন অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত সভা ও পূর্ব পরিকল্পনার আলোকে পরস্পর যোগসাজশে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মূল আসামিদের সহায়তা করার লক্ষ্যে আসামিদের নির্ভিঘ্নে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে ও পরবর্তী সময়ে আসামিদের অপরাধের দায় থেকে বাঁচানোর সুযোগ করে দেওয়ার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা।
১৩) প্রকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং তাদের রক্ষা করার জন্য প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্য লোকের ওপর দায় বা দোষ চাপিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার লক্ষ্যে মিথ্যা ও বানোয়াট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা।”
ওপরের সব কয়টি বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সচেষ্ট ষড়যন্ত্রের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেই তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে আদালত মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করেছে। গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা এটাও জেনেছি যে তদন্তে ও আসামিদের জবানবন্দীতে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে শুধু তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর-ই হামলা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। একই সাথে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা সম্পর্কে জানতেন। তিনি নিজেও হামলার আলামত নষ্ট করার আদেশ দিয়েছিলেন এবং ডিজিএফআইকে এ হামলা সম্পর্কে তদন্ত করতে নিষেধ করেছিলেন। তাহলে, আমার প্রশ্ন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সচেষ্ট ষড়যন্ত্রের কারণে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র-প্রতিমন্ত্রীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলেও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেগম জিয়াকে ছাড় দেয়া হোল কেন?
আশা করছি পূর্নাঙ্গ রায়ে আমি উত্তর গুলো খুঁজে পাব।
এসি
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।