ক্রিকেটে পাক-ভারত প্রেম ও জাতীয়তাবাদ
প্রকাশিত : ১৭:১৭, ১২ জুলাই ২০১৯
বাংলাদেশ আর ভারতের ক্রিকেট ম্যাচ মানেই বাড়তি উন্মাদনা। বিশেষ করে ২০১৫ সালের পর থেকেই ক্রিকেটে বাংলাদেশের উন্নতি অনেক বেশি।বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তিও এখন বাংলাদেশ। আর তাই বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ হলেই টান টান উত্তেজনা। ম্যাচ হয় প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ।তবে আমাদের দেশের কিছু মিডিয়া এখনও পাক-ভারত ম্যাচকেই বেশি প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ ম্যাচ বলে প্রচার করে।
২০০৫ সালের পর থেকে পাক-ভারত ম্যাচ আর প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ ম্যাচ হয় না, একপেশে ম্যাচ হয়। আমার লেখার মূল বিষয় এটি নয়।তবে দেখে খুবই অবাক হই, যখন আমার দেশের সঙ্গে ভারতের ম্যাচে ভারতকে সমর্থনের পাশাপাশি অনেকেই ভারতের জন্য মায়াকান্না করে।
আমার বিশ্ববিদ্যালয়, নিজ এলাকা এবং চাকুরিসূত্রে অনেককেই দেখেছি যারা ঘোর ভারতীয় সমর্থক। অনেক সময় খেলা বিষয়ক আলাপেও তাদের মুখে ভারত-প্রীতি। বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের খেলার সময়ও অনেকের মুখে শুনেছি, তিনি চান বাংলাদেশ জিতুক তবে পাকিস্তান জিতলে তাদের ভালো লাগে। তাদের প্রেম নিছক খেলা ভালো খেলে! সেজন্য! না সাম্প্রদায়িক রাজনীতি!
অনেকেই আমরা বলে থাকি, খেলার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক কী? আসলে ক্রিকেট এখন আর নিছক বিনোদন নয়। খেলা এখন উগ্রজাতীয়তাবাদ তৈরি করছে। অনেকেই ধর্মীয় ভিত্তিতে ভারতীয় সমর্থক, অনেকেই পাকিস্তানের সমর্থক। আমাদের জাতীয়তাবাদ কি তাহলে! এখনও আমরা ভারত-পাকিস্তান প্রেম নিয়ে পড়ে আছি। যখন বাংলাদেশ ভারত ম্যাচে, ভারতের সমর্থককে দেখি তখন অবাক হই না। তবে কষ্ট হয়। ঠিক তেমনি বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচে পাকিস্তান-প্রেমিদের দেখেও কষ্ট হয়।
তবে ২০১৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ক্রিকেট পরাশক্তি। ভারতীয়দের মোড়লীপনার কারণে এদেশে ভারত বিরোধীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ২০১৫ সালে আম্পায়ের ভারতের পক্ষ নেয়া, মুশফিকের আউটে কোহলির আচরণ, ধোনির আচরণ এসব কারণে এদেশে ভারতীয় ক্রিকেট দলের সমর্থন দিন দিন কমেছে।
অথচ এক সময় ভারতীয় জয়ে গ্রামে মিছিল হতো, রাতে খিচুরি রান্না করে খেয়ে তা উদযাপন হতো। এখন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড আর খেলোয়ারদের অ-খেলোয়ার সুলভ আচরণে এদেশের বিশাল জনগোষ্ঠী ভারতবিরোধী মনোভাব পোষণ করে। বিপিএলে ভারতীয় খেলোয়ারদের ছাড়পত্র না দেওয়াও ভারত দলের সমর্থন কমার অন্যতম কারণ। তাই সব মিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম সেমি-ফাইনালে প্রতিবেশি দেশ ভারতকে সমর্থন না করে নিউজিল্যান্ডকে সমর্থনের মাধ্যমেই, বাংলাদেশী ক্রিকেটভক্তদের ভারতবিদ্বেষী মনোভাব চূড়ান্তভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব।
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।