ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ক্যাসিনো: ডালপালা ছেড়ে গোঁড়ায় হাত দিন

মোহসীন-উল হাকিম

প্রকাশিত : ১৮:০৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৮:৫৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সুন্দরবন উপকূলের যুবক হাসান। বয়স তখন ১৬ বা ১৭। ঈদের সময় গ্রামের বন্ধুদের সঙ্গে তাস খেলছিল টাকা দিয়ে। এমন সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় সে।

বিরাট অপরাধ! মামলা হল। শুরু হল জেল জীবন। তাৎক্ষণিক জামিন করানোর সক্ষমতা ছিল না। উকিলের টাকা পয়সা জোগাড় করতে সুদে ধার করতে করতে দুই মাস পেরিয়ে গেছে। আড়াই মাসের মাথায় জামিনে বের হল হাসান। এবার সুদে ধার নেওয়া টাকা ফেরত দিতে হবে, দু’মুঠো ভাতেরও ব্যবস্থা করতে হবে। তখন শীতকাল। দুবলার চরে একটা কাজ নিয়ে চলে যায় হাসান। সেখানেই কাটে পরের তিন মাস।

এদিকে আদালতের সমন আসে যায়। ওয়ারেন্ট জারি হয়। ১৭ বছরের তরুণ হাসান হয়ে যায় ফেরারি আসামী। দুবলার মৌসুম শেষে আর বাড়ি ফেরা হয়নি। চট্টগ্রামে পলাতক জীবন হয়ে উঠে দুর্বিষহ। তারপর, সমবয়সী প্রতিবেশী বনদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাসান চলে যায় সুন্দরবনে। অবৈধ অস্ত্র হাতে হয়ে উঠে ভয়ঙ্কর বনদস্যু।

গ্রামের অতি দরিদ্র এক তরুণের দস্যু হয়ে উঠার গল্প এমনই। জুয়া খেলার অপরাধে জীবনটাই ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল ছেলেটার।

এদিকে আমাদের মহানগর জীবনে কখন যে ক্যাসিনো ঢুকে পড়েছে, আমরা বলতেও পারি না। অপরাধী আর হঠাৎ গজিয়ে উঠা ধনী গোষ্ঠীর মনোরঞ্জন চলছে। এখানে লেনদেন হচ্ছে শত-হাজার কোটি টাকা। ক্রিকেট নিয়ে জুয়া, অনলাইনে জুয়া চলছে সব মহলে। গ্রামের পথে ঘাটে কত তরুণের পরিবার পথে বসেছে সেই জুয়ার কারণে, তার খবর কী আছে? শীর্ষ নেতৃত্ব চাপ না দিলে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। লুটপাট করে যারা টাকার পাহাড় বানিয়ে পাচার করছে, প্রধানমন্ত্রী কী তাদের নাম ধরে জনে জনে ব্যবস্থা নিতে বলবেন?

ঢাকায় ক্যাসিনোতে অভিযান নিয়ে আলোড়িত টাইম লাইন। ভাল মন্দ মিলিয়ে চলছে সাময়িক সব কথাবার্তা। সমাজের ঘৃণ্য সব চরিত্রগুলো বেশ হৃষ্টপুষ্ট, সুবিধাপ্রাপ্ত। তাদের থামানোর ক্ষমতা সংশ্লিষ্টদের আছে। কিন্তু অপরাধ আর অন্যায় থেমে গেলে তো লুটপাটের ভাগিদার হওয়া যাবে না! অথবা ভাগিদার হিসেবে লুটপাটের লাইসেন্স দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা!

গ্রামের হাসানরা দুইশ টাকা জুয়া খেলে ধরা পড়ে আড়াই মাস জেল খাটে, জামিন নিতে পারে না, ফেরারি হয়, জড়িয়ে পড়ে বড় অপরাধে। উন্নত জাতি গড়তে হলে সবাইকে সমান চোখে দেখতে হবে। বড় বড় অপরাধীদের ডালপালা ধরে টানাটানি না করে গোঁড়ায় হাত দিন, প্লিজ...।

লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন। 
(অনুচ্ছেদটি লেখকের ব্যক্তিগত ফেইসবুক থেকে নেওয়া)

এসি

 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি