ইরানের হামলা সমঝোতার ভিত্তিতেই!
প্রকাশিত : ১৯:২৩, ৯ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৯:৪১, ৯ জানুয়ারি ২০২০
ইরাকে অবস্থিত দুটি মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ২২টি ব্যালেস্টিক মিসাইল হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর। পেন্টাগন জানিয়েছে, ইরবিল ও আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতে মিসাইল হামলা হয়েছে। ইরান থেকেই মিসাইলগুলো নিক্ষেপ করা হয়েছে। আর এ হামলা সমঝোতার ভিত্তিতেই হয়েছে বলা মনে করা হচ্ছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, দেশটির শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে ড্রোন হামলায় হত্যার জবাব হিসাবে এই হামলা করা হয়েছে। তারা এই অভিযানের নাম দিয়েছে 'অপারেশন শহীদ সোলেইমান'। ইরানের স্থানীয় সময় রাত দেড়টার দিকে (বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে চারটা) এই হামলা শুরু হয়।
এদিকে ইরাকের সেনাবাহিনী বলছে, ইরান থেকে ছোঁড়া ২২টি মিসাইলের মধ্যে আল আসাদ ঘাঁটিতে ১৭টি মিসাইল হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে দুটি মিসাইল বিস্ফোরিত হয়নি। তবে ইরবিলে যে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে তার সবগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।
জানা গেছে, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫ হাজার সৈন্য রয়েছে। মার্কিন হামলায় ইরানি জেনারেল সোলেইমানি নিহত হবার পর ইরাকের পার্লামেন্ট দেশটি থেকে মার্কিন সৈন্যদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। জবাবে আমেরিকা অবশ্য বলেছিল, ইরাক থেকে সরে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনাই তাদের নেই।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই সাথে এও বলেছিলেন যে, ইরাক থেকে যদি মার্কিন সৈন্যদের চলে যেতে হয় তাহলে দেশটির ওপর এমন অবরোধ আরোপ করা হবে, যা ইরাক 'আগে কখনও দেখেনি'।
এমনই ঘটনা প্রবাহের মধ্যেই ইরাকে মার্কিন সেনাদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালালো ইরান। যে হামলায় অন্তত ৮০ মার্কিন সেনা নিহত ও ২০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য টুইটারে লিখেছেন, 'সব ঠিক আছে'। তিনি সকাল হলে একটি বিবৃতি দেবেন বলেও তার ওই টুইটে উল্লেখ করেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, ওই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ও সহযোগীদের সকল কর্মীকে রক্ষায় দরকারি সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এই মিসাইল হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে কিনা, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র স্টেফানি গ্রিশাম বলেছেন, 'ইরাকের একটি মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার খবরের ব্যাপারে আমরা সচেতন রয়েছি। প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে অবহিত হয়েছেন এবং তিনি গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন ও জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে আলোচনা করছেন।'
এদিকে, ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ড জানিয়েছে, সোলেইমানির হত্যাকাণ্ডের বদলা হিসাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। দেশটির ইরনা নিউজ এজেন্সিতে দেয়া এক বিবৃতিতে বাহিনীটি বলেছে, 'আমেরিকার সব সহযোগীদের আমরা সতর্ক করে দিচ্ছি, যারা তাদের ঘাঁটিগুলোকে এই সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে দিয়েছে, যেখান থেকেই ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হবে, সেটাই লক্ষ্যবস্তু করা হবে।'
ওদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ টুইটারে লিখেছেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু নিজেদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করবো।
সুতরাং সমস্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, ইরান যে হামলা চালিয়েছে তা দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার ভিত্তিতেই হয়েছে। অর্থাৎ সোলাইমানিকে হত্যার পর ইরান সরকার ও দেশটির জনগণ যেভাবে ফুঁসে ওঠে সেটা ট্যাকেল দিতেই চাপে থাকা আমেরিকার সঙ্গে এই বোঝাপড়াটা করা হয়েছে।
বিষয়টির ব্যাখ্যা করলে দেখা যায়, কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করে বড় অপরাধ করে আমেরিকা। যার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে ইরানিরা। এরমাঝেই চলে নানা বাক্যযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক তৎপরতা। তবে যুক্তরাস্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা ব্যাকফুটেই ছিল ইরান। কেননা, সেক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈশ্বিক ঝামেলা বেধে যেতে পারত। আর তাতে বড় ক্ষতিটা হত ইরানেরই।
যেহেতু চরম আকারের কোনও প্রতিশোধ নেয়াটা সম্ভব নয়, আবার জনগণকে থামাতে হলে কিছু একটা করে দেখাতে হবে, তাই নিজের সীমার মধ্যে থেকেই এবং ট্রাম্পের সঙ্গে সমঝোতা করেই ওই হামলা চালায় ইরান।
ব্যাপারটা ঠিক এমন যে, সাপের ক্ষতি হলেও যেন না মরে এবং লাঠিও না ভাঙে। অর্থাৎ আমেরিকাকে জানিয়েই, তারা যেন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সামলে নিতে পারে, ওই হামলা চালায় ইরান। হামলার আগে বর্তমান ইরানপন্থী প্রতিবেশী ইরাক থেকেও তার আভাস দেয়া হয় ট্রাম্প প্রশাসনকে।
যাতে অল্প কিছু ক্ষতি হলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পায় মার্কিন সেনারা, আবার হামলা চালিয়ে ইরান তার জনগণ ও বিশ্বকে দেখিয়েও দিল যে, তারাও পারে। মূলত এসবই হলো বিশ্ব রাজনীতির খেল।
এনএস/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।