কোভিড-১৯ প্রসারের দরুন অর্থনীতি
প্রকাশিত : ২১:৪৯, ২০ মার্চ ২০২০
করোনাভাইরাস যা বর্তমানে কোভিড-১৯ নামে পরিচিত তার বহুল প্রসারের দরুন বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি এখন ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর ছায়া বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে শুরু করেছে। সরকার সচেতন হিসেবে যথেষ্ট মাত্রায় নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করলেও করোনার মহামারী যেহেতু প্রায় ১৮০ টি দেশকে এ মুহূর্তে আক্রমণ করেছে তার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনীতির মতো ক্ষতির কারণও এদেশে গত তিন মাস ধরে সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা যদি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করি তবে দেখব যে, সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে দেখা যায়, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক লেনদেন সবচেয়ে বেশি। চীনের সঙ্গে এদেশের ব্যবসায়িক-শিল্পপতি ও উদ্যোক্তাদের অতিমাত্রায় নির্ভরতা দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্টের একটি নিয়ম আছে ‘ডু নট পুট অল দ্য এগজ ইন দ্য সেইম বাস্কেট।’ আমাদের দেশে যারা আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করেন তাদের কাছে মূলত চীন অতি প্রিয় ব্যবসায়িক রাষ্ট্র। চীনের উহানে যখন করোনাভাইরাস আক্রমণ শুরু হলো তখন। অনেকে বিকল্প ব্যবসার কথা চিন্তা করেননি। করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৮০ দেশে ২,৪০,০০০ মতো রোগী আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় ১০,০০০ মানুষ মারা গেছে। এর মধ্যে প্রবাসে কিছু বাংলাদেশী মারা গেলেও দেশে মৃত্যু কম। কিন্তু অর্থনীতিতে যে ধরনের আক্রমণ শুরু হয়েছে তার জন্য সরকার প্রস্তুতি নিলেও কেউ কেউ এটিকে ঠিকমতো মূল্যায়ন করছে না। আমাদের দেশের অনেক শিল্প-কল-কারখানা প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করা হয়। এখন উহানে যদিও করোনার প্রভাব কেটে গেছে কিন্তু অনেক কল-কারখানায় পণ্য উৎপাদন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য বিশেষত অর্থনৈতিক খাতের জন্য একটি শক্তিশালী জাতীয় কমিটি অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, ব্যাংকার, শিল্পপতি, ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বে গঠন করে কিভাবে ঝুঁকি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হ্রাস করা যায় সেটি দেখা ও কর্মকৌশল বাস্তবায়ন করা দরকার। আমাদের পোশাক খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ এবং ফরোয়ার্ড লিঙ্কেজের ক্ষেত্রে চীন থেকে পণ্য আমদানি করা হতো। চীন থেকে বাংলাদেশে আমদানির পরিমাণ ডিসেম্বর ২০১৯ এ মার্কিন ডলার ১৯১০৫৭.২০। এমনকি চীন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্য যুদ্ধেও তেমন স্থায়ী লাভ অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এদিকে বিশ্বে এখন রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মধ্যে তেল নিয়ে যে যুদ্ধ চলছে, তেলের ব্যারেল প্রতি দাম কমলেও তেল কিনে মজুদ করার মতো বাড়তি অর্থ নেই। ফলে খুব বেশি প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। বাংলাদেশে অনেক বিদেশী কোম্পানি হয়ত ব্যবসা করতে আসত। কিন্তু করোনাভাইরাস এমন একটি পরিবেশের সৃষ্টি করেছে যার দরুন সমগ্র বিশ্বেই আন্তর্জাতিক পরিম-লে সরবরাহজনিত যোগাযোগ পদ্ধতিতে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে।
পার্শ¦বর্তী ভারতের সঙ্গেও আমাদের দেশের যোগাযোগ অন্য দেশের মতো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আমাদের দেশে সাধারণ রোগী যারা দেশে ভাল চিকিৎসা না পেয়ে ভারতে উন্নততর চিকিৎসার জন্য যেত, তারা এখন যেতে পারছে না। আমাদের মধ্যে একশ্রেণীর মুনাফাখোর-কালোবাজারী রয়েছে। যে মাত্র ভারত তাদের দেশে যাওয়ার জন্য ভিসা বাতিল করল কয়েক ঘণ্টা ব্যবধানে ৩৫ টাকা দামের প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বেড়ে হয়ে গেল ৭০ টাকা প্রতি কেজি। এ মুনাফাখোরদের একটি বড় অংশ সুচতুরভাবে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার থেকে ইতোপূর্বে মাস্ক সরিয়ে ফেলেছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়। বারংবার সতর্কতার নির্দেশ সরকারপ্রধান দিচ্ছেন। অনেকে নিজেরা মাল মজুদ করছেÑ অন্যদের মাল মজুদ করার জন্য নাকি ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যাতে অনেক বেশি মজুদ না করতে পারে সে জন্য সতর্ক থাকা দরকার। সরকার গত এগারো বছরে গ্রামীণ অবকাঠামোকে বিশেষত অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে শক্তিশালী করতে চেয়েছে। এর সুফল দেশী অর্থনীতিতেও বহুলাংশে প্রতিভাত হয়েছে। সমস্যা হলোÑ কোভিড ১৯ শুরুর পর কাঁকড়া, কুচিয়াসহ হিমায়িত মৎস্য বিদেশে রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অনেক স্থানে শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাচ্ছে এবং যারা গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রান্তিক পর্যায় থেকে মধ্যবিত্ত পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল তারা আবার পূর্ববৎ অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প বিদেশে রফতানির ক্ষেত্রেও সমস্যার উদ্রেক করছে। অন্যদিকে পোশাক শিল্প খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করায় বাধ্য হয়ে শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয়েছে। অন্যদিকে আমদানি শুল্ক থেকে আয় কমে যাবে। ফলে জাতীয় রাজস্ব আহরণে ঘাটতি দেখা দেবে। এদিকে বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাজারে ধস নামছে। আমাদের দেশের অর্থনীতি যদিও মুক্তবাজার অর্থনীতি তথাপি পুরোপুরি ফ্রি ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট বহাল আছে বলা যাবে না। তার পরও ব্যাংকগুলো থেকে যে সমস্ত ঋণগ্রহীতা ঋণ নিয়েছেন তারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ যথাসময়ে নাও করতে পারেন। কেননা উৎপাদিত পণ্য যদি স্বদেশে বিক্রি হয় তবে এক অবস্থা, আর দেশের বাইরে রফতানি করলে আরেক অবস্থা। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। রফতানিলব্ধ আয় রফতানিকারকদের ক্ষেত্রে কমে গেলে তা দেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যাংকগুলোকে যারা রফতানিকারক তারা যদি কোন কারণে শিপমেন্ট ডিলে হলে সমস্যায় পড়লে সাবসিডি দেয়ার ব্যবস্থা রাখা দরকার। অন্যদিকে যারা বহিঃস্থ জগতের কারণে দেশে বেকার হয়ে যাবে তাদের ক্ষেত্রে কিছু আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনাভাইরাসের মহামারী নিয়ন্ত্রণে সরকার চেষ্টা করছেÑ কিন্তু এটি নির্ভর করে বৈশ্বিক অবস্থা, দেশে ভাইরাসটি ছড়ায় কিনা, মানুষ স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক যে সমস্ত ঘোষণা দেয়া হচ্ছে সেটি প্রতিপালন করে কিনা তার ওপর। এদিকে দেশের বিমান সংস্থাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেননা করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ বিমানে যাতায়াতে ভয় পাচ্ছে। ফলে যারা বেসামরিক বিমান সংস্থায় বিভিন্ন পদে কাজ করছিলেন তাদের অনেকেই সাময়িকভাবে চাকরি হারাচ্ছেন। ফলে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এদিকে একটি বেসরকারী সংস্থার হিসাব মতে প্রায় তিন লাখ লোক ইতালিতে চাকরি করত। যেহেতু এখন ইতালির অবস্থা খারাপ সেহেতু তাদের আর্থিক অসচ্ছলতা দেখা দিতে পারে এবং দেশে অর্থ প্রেরণ কমে যাবে। সৌদি আরবেও করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। সে দেশে কর্মরতদের পক্ষে দেশে অর্থ প্রেরণ কমে যাবে। আমার এক সাবেক সহকর্মী ব্রিটিনে আছেন। তিনি জানালেন যে, সেখানে শিশু খাদ্য পেতে সামান্য সমস্যা হচ্ছে। তবে এটি কাটিয়ে উঠবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
দেশের উৎপাদন ব্যবস্থাও ব্যাহত হচ্ছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ যেমন হ্রাস পাবে, তেমনি যে কয়টি মেগা প্রকল্প সরকার গ্রহণ করেছিল উন্নত যোগাযোগ ও অবকাঠামোর জন্য সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। তবে এক ধরনের কনসালটেন্ট ও অর্থনীতিবিদ করোনাভাইরাস নিয়ে তাদের সুবিধামতো মনগড়া বক্তব্য রেখে চলেছেন। এটি বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী থেকে তাদের অর্থ আদায়ের কোন উপায় কি না সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। সুযোগ সন্ধানী একটি কায়েমী গোষ্ঠী কালে কালে সুযোগ আদায়ে তৎপর থাকে। করোনাভাইরাসের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং আইসিডিবিআরকে সরকার যথাযথ কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো আমরা একটি জনবহুল দেশ। এক ঢাকা নগরীতেই প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৮ হাজার লোক বসবাস করে। কৃষি খাতেও যাতে ফসল উৎপাদন হয় এবং সুচারুরূপে বন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের প্রত্যেক প্রান্তে ডিস্ট্রিবিউশন করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দেশে স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্য থেকে তরুণ-তরুণীদের এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে করোনাভাইরাস কেবল জাতীয় সমস্যা নয়Ñ এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। এ সমস্যায় দেশের বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে সঠিকভাবে পরিচর্যার জন্য কাজে লাগাতে হবে। প্রত্যেক সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স-ওয়ার্ড বয়দের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যারা এখনও করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক হচ্ছেন না, তাদের উচিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা মেনে চলা। অহেতুক মাস্কের ভীতি কিভাবে কাটানো যায় সে ব্যাপারে সরকারের সম্প্রচারিত তথ্য ও নির্দেশনা যথাযথ লেগেছে। যেহেতু দেশটি জনবহুল, কিছু কিছু স্কুলকেও আইসোলেশন সেটার হিসেবে তৈরি করা দরকার। আর্থিক সমস্যার পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত সমস্যা সমাধান করা দরকার। যদিও সরকার ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্যগত সমস্যা সমাধানের উপায় গ্রহণ করেছেন। তবে আমাদের দেশে একটি গবেষণায় দেখেছি পঞ্চাশোর্ধ চিকিৎসকদের ব্যবহার রোগীর প্রতি যতটা সহনীয় ত্রিশের নিচে চিকিৎসকদের ব্যবহার অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীর প্রতি অত্যন্ত কর্কশ। যদিও নিয়মের ব্যতিক্রম আছে। তবে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় দেশে কেমন করে রোগীর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে সেটি সেখানো দরকার। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও বেশি মাত্রায় সহায়তা কেমন করে দেয়া যায় তা সরকার তার কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে ঘোষণা এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। কোন বিশেষ চেম্বার যেন এককভাব সরকারের দেয়া সুবিধা ভোগ না করে সর্বজনীন পদ্ধতিতে গ্রহণ করে সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।
আমাদের দেশের প্রয়োজনের নিরিখে রমজান পর্যন্ত স্বল্পকালীন মেয়াদ পর্যন্ত কিভাবে আর্থিক সমস্যা সমাধান করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী বিশেষত বিশ্বব্যাংক ও আইএসএফ থেকে ঋণ বা অনুদান গ্রহণ করে দেশের সাধারণ জনমানুষের নাগরিক নিরাপত্তা, খাদ্য ব্যবস্থা ও কর্মপ্রত্যাশীদের মানুষের উপকারে লাগানোর মতো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। যারা মুনাফাখোর ও ফটকারকারী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে অর্থ আত্মসাত করতে না পারেন সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। এদেশে অবশ্য আমরা সবসময়ে ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্টে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকি। অহেতুক ভয়-ভীতি কিংবা গুজব রটিয়ে যারা আনন্দ পায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। দেশের প্রত্যেককেই আইন মেনে চলা দরকার। কেননা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী করোনাভাইরাসে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য সংক্ষিপ্ত পরিসরে পালন করেছেন- এটি আমাদের কাছে জনদুর্ভোগ এড়ানোর দৃষ্টান্ত হওয়া উচিত। প্রস্তাবিত কমিটি যাতে আমদানি বিকল্পায়ন শিল্প এবং কৃষিনির্ভর পণ্য উৎপাদন বাজারজাতকরণ ও বিজ্ঞাপনে এগিয়ে আসে তার জন্য সঠিক পন্থা নির্ধারণ করতে হবে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, তারা যেন ঠিকমতো কর দেয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। করোনাভাইরাসের মতো মহামারীর ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াতীদের যে ধরনের অপপ্রচার জনগণ দেখছে তা থেকে আমাদের সাধারণ জনমানুষকে মুক্ত থাকতে হবে। প্রবাসীরা যখন দেশে এসেছেন, তখন যাতে তারা এ রোগের বাহক হিসেবে অন্যদের মধ্যে না ছড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দেশের সামগ্রিক চিকিৎসা খাত বিশেষত বেসরকারী খাতে চিকিৎসক অপ্রতুলতা ও চিকিৎসকের অনুপযুক্ততা রয়েছে। কিন্তু এক্ষণে সবাইকে সরকারের নির্দেশিত পথ ধরে এগিয়ে আসতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে যারা সেবা প্রদান করবেন তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং রোগীর প্রতি ব্যবহারও আন্তরিক হতে হবে। করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা থাকতে হবে। পাশাপাশি আর্থিক খাতে ব্যাংক-বীমা, পুঁজি বাজারকেও শক্তভাবে হাল ধরতে হবে। এ জন্য চাই সরকারের বিশেষ নির্দেশনা। আমদানি-রফতানি উভয় খাতে যেহেতু সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সেহেতু আমাদের দেশের মানুষের কাছে অন্তত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে সে জন্য ডমেস্টিক সাপ্লাই চেন ম্যানেজমেন্ট সঠিকভাবে করতে হবে- যাতে করে ইনবাউন্ড লজিস্টিক এবং আউটবাউন্ড লজিস্টিকের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। যেহেতু রাজস্ব কম আদায় হবে, সেহেতু মুদ্রানীতিকে বাস্তবের উপযোগী করতে হবে। পাশাপাশি সুষম বন্টন ব্যবস্থা ও সামাজিক উন্নয়ন করা- কৌশলগুলোকে অধিকতর কার্যকর করতে হবে। মুনাফাখোর ও কালোবাজারীরা যাতে করে অধিক মুনাফা অর্জন করতে না পারেন সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে। বহিঃস্থ কারণে দেশের অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা লঙ্ঘিত হচ্ছে তাতে করে সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে মোট চাহিদা ও মোট সরবরাহ উভয়েই হ্রাস পাবে এবং ব্যাস্টিক অর্থনীতিতে ঝামেলার সঞ্চার হচ্ছে। এদিকে দেশে স্থানীয় এবং বিদেশী পর্যটক কমে যাওয়ায় পর্যটন খাতে আয় কমে যাচ্ছে। আবার গণপরিবহন ব্যবহার করতে অনেকে ভয় পাওয়ায় যাতায়াতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ক্রীড়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যারা নির্মল আনন্দ পেত এবং এ সংক্রান্ত আয়-রোজগার করত তাও হ্রাস পেয়েছে। কোভিড ১৯ নিয়ে সার্ক অঞ্চলের মধ্যে আলাপ-আলোচনার পাশাপাশি বিমসটেক এলাকায় আলাপ-আলোচনা হওয়া বাঞ্ছনীয়, যাতে করে আঞ্চলিক সাহায্য-সহযোগিতা বাড়ানো যায়। এদিকে যারা হঠাৎ বেকার হয়ে যাবে তাদের জন্য সাময়িক ভাতা চালু করা দরকার। আবার যে সমস্ত আমদানিকারক ও রফতানিকারক ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের জন্য বৈধ নিয়মনীতির আওতায় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাজস্ব সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য মুদ্রানীতির যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। আজ দেশের অর্থনীতিতে সামগ্রিকভাবে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে- তা বৈশ্বিক কারণে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়া, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া ও বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা ঠেকাতে বর্তমান সরকার সজাগ রয়েছেন বলে প্রতীয়মান হয়। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের আরো মানবিক হতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে বেসরকারী খাতে পেটোয়া বাহিনী, আগে থেকেই রাখা হয়েছে- এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতর কখনও ব্যবস্থা নেয়নি। তবে আইইইডিসিআর (EEDCR)-এর ভূমিকা প্রশংসনীয়।
লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট ও প্রফেসর
Pipulbd@gmail.com
আরকে//
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।